ডাল কাটতে গিয়ে সবুজ উজাড়

কাপ্তাই রাস্তার মাথা-মদুনাঘাট

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৬:৩৯ পূর্বাহ্ণ

কিছুদিন আগেও বিশাল রাস্তার দুইপাশের গাছগুলো পুরো এলাকাকে পরম মমতায় ঢেকে রেখেছিল সবুজের ছাদরে। শোভা বর্ধনের পাশাপাশি রিকশা চালক, ভাসমান হকার কিংবা পথচারীদের দিত ছায়া। কিন্তু সপ্তাহে-দেড়েকের ব্যবধানে কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে মদুনাঘাট পর্যন্ত দীর্ঘ সাড়ে ৫ কিলোমিটার সড়কের দুইপাশের শতশত গাছের ডালপালা কেটে উজাড় করে ফেলা হয়েছে। শুধু গাছের ডালপালা কাটলে হয়তো এমনটা হত না। ডালপালা কাটতে গিয়ে কেটে ফেলা হয়েছে গাছের প্রায় অর্ধেকটাই। যার কারণে এখন এই বিশাল এলাকা বিরান ভূমিতে পরিণত হয়েছে। এক সপ্তাহ আগেও এই সড়কের দুইপাশ যেখানে সবুজে ঢাকা ছিল- এখন সেখানে বিরাজ করছে ধূধূ মরুভূমির পরিবেশ। চিরচেনা জায়গাটি অনেকটা অচেনা হয়ে উঠেছে স্থানীয়দের কাছে।
পিডিবি জানায়, রাস্তার দুইপাশের শত শত গাছের ডালপালা ১১ হাজার ভোল্টের তারের সঙ্গে লেগে বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটনার আশংকায় এসব কাটার জন্য টেন্ডার দেয়া হয়েছিল। স্থানীয়দের অভিযোগ গাছের ডালপালা কেটে নেয়ার জন্য পিডিবি যাদেরকে টেন্ডার দিয়েছে তারা শুধু ডালপালা নয় গাছের প্রায় অর্ধেকটাই কেটে ফেলেছে অনেক জায়গায়।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড মোহরা সাব স্টেশনের সহকারী প্রকৌশলী হোসাইন ফেরদৌস আজাদীকে জানান, আমাদের প্রধান প্রকৌশলীর কাছে থেকে অনুমোদন নিয়েই গাছের ডালপালাগুলো কাটা হয়েছে। ৩৩ হাজার ভোল্টের তারের ৩ মিটার দূরে যেসব গাছের ডালপালা পড়েছে সেগুলো টেন্ডার দিয়ে কাটা হয়েছে। যাদের টেন্ডার দেয়া হয়েছে তারা তাদের লেবার দিয়ে কেটে নিয়ে গেছে। ঝড়-বৃষ্টি ঘূর্ণিঝড়ে ৩৩ হাজার কেভি তারের সঙ্গে গাছের ডালপালাগুলো লেগে দুর্ঘটনা ঘটে। অনেক সময় তার জ্বলে যায়। তিনি বলেন, ৪/৫ দিন বিদ্যুতের লাইন বন্ধ রেখে এসব ডালপালা কাটা হয়েছে। এক নাগাড়ে বিদ্যুৎ বন্ধ ছিল না। আমরা কিছু এলাকায় শাট-ডাউন করে কেটেছি। মেইন রোডেরগুলো কাটা হয়ে গেছে। এখন রাহমানিয়া সেতু এবং ব্রাহ্মণ হাটসহ আশপাশের এলাকার ভেতরের রাস্তাগুলোর ডালপালা কাটা হচ্ছে।
কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে মদুনাঘাট পর্যন্ত দীর্ঘ এই সড়ক জুড়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের একটি ওয়ার্ড, হাটহাজারীর ১৪ নম্বর শিকারপুর ইউনিয়ন এবং ১৫ নম্বর বুড়িশ্চর ইউনিয়নের বড় অংশ পড়েছে। গাছ কাটার ব্যাপারে জানতে চাইলে বুড়িশ্চর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহেদ হোসাইন ক্ষোভ প্রকাশ করে আজাদীকে জানান, পিডিবি যেটা করেছে সেটা খুবই অন্যায় হয়েছে। তারা মদুনাঘাট থেকে কাপ্তাই রাস্তার মাথা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার সড়কের দুইপাশের শত শত গাছ এমনভাবে কেটেছে পুরো এলাকা বিরান ভূমিতে পরিণত করেছে। এখানে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটার মত অবস্থা। গাছগুলোকে এমনভাবে কেটেছে একেবারে মুণ্ড করে ফেলা হয়েছে। এভাবে গাছ কাটতে পারে না। এখানে প্রায় এলাকা আমার ইউনিয়নে পড়েছে। যখন আমার এলাকায় গাছ কাটতে আসে আমি অনেক জায়গায় বাধা দিয়েছি। তখন পিডিবির এক প্রকৌশলী আমাকে বলেছেন- এগুলো কাটার সরকারি অনুমতি আছে। ঝড়-তুফানে গাছের ডালপালাগুলো বিদ্যুতের তারে লেগে বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটবে।
১৪ নম্বর শিকারপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল খালেক আজাদীকে জানান, এই গাছ স্থানীয় লোকজন কাটতে পারবে না। এইগুলো পিডিবিই কেটেছে। গাছের ডালপালা কাটার জন্য এই এলাকায় ২/৩ দিন পিডিবি বিদ্যুৎ বন্ধ রেখেছিল। এগুলোর জন্য টেন্ডার হয়। টেন্ডার দিয়ে কাটা হয়। কিন্তু ডালপালা কাটতে গিয়ে গাছগুলোর এভাবে সর্বনাশ করা ঠিক হয়নি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএলপিজির দাম বাড়ল কেজিতে ৫ টাকা
পরবর্তী নিবন্ধএইচএসসি পরীক্ষার ফল ১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে