ট্রাক-লরির অপরিকল্পিত টার্মিনাল

নির্বিঘ্ন চলাচল নিয়ে শঙ্কা

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ১৪ জানুয়ারি, ২০২১ at ৬:৩৫ পূর্বাহ্ণ

নগরীর বিমানবন্দর সড়কের যানজট এড়াতে অনানুষ্ঠানিকভাবে চালু করে দেয়া হয়েছে পতেঙ্গা-ফৌজদারহাট আউটার রিং রোড। চালুর পর থেকে প্রতিদিনই হাজার হাজার গাড়ি চলাচল করছে এই সড়কে। জিইসি মোড় থেকে মাত্র ৪০ মিনিটে বিমানবন্দরসহ পতেঙ্গা এলাকায় পৌঁছানো যাচ্ছে অনায়াসে। তবে যান চলাচল বাড়ার সাথে সাথে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও ট্যাংক লরির অপরিকল্পিত টার্মিনাল রাস্তাটিকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। ফলে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটিতে নির্বিঘ্নে চলাচল নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের যান চলাচলে বড় ধরনের বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে ২ হাজার ৪২৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে আউটার রিং রোড নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। পতেঙ্গা থেকে সাগরিকা বিভাগীয় স্টেডিয়াম পর্যন্ত ১৫.২ কিলোমিটারের চার লেন সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে রাস্তাটির ৯২ শতাংশেরও বেশি কাজ শেষ হয়েছে। পতেঙ্গা থেকে ১৫.২ কিলোমিটার আসার পর আউটার রিং রোডকে বন্দর টোল রোডেরর সাথে আপাতত যুক্ত করে দেয়া হয়েছে। এখান থেকে পাঁচ কিলোমিটার টোল রোড ব্যবহার করে যে কোনো গাড়ি ফৌজদারহাটে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে পৌঁছে যাচ্ছে। সেখান থেকে বায়েজিদ লিংক রোড ও ফ্লাইওভার ব্যবহার করে ৪০ মিনিটে পৌঁছানো যাচ্ছে জিইসি মোড় বা লালখান বাজারে। একইভাবে শত শত গাড়ি শহর থেকে বন্দরকেন্দ্রিক যানজট এড়িয়ে পতেঙ্গাসহ আশেপাশের এলাকায় যাতায়াত করছে। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত অব্দি চলছে যানবাহনের এই যাতায়াত। শুধু বিমানবন্দর নয়; পতেঙ্গা সী বিচ, চিটাগাং ড্রাইডক, পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনাল ও কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পসহ হালিশহর এলাকার বহু মানুষও রাস্তাটি ব্যবহার করছেন।
কিন্তু রাস্তাটির বিভিন্ন পয়েন্টে অসংখ্য ট্রাক কাভার্ড ভ্যান ট্যাংক লরির টার্মিনাল গড়ে তোলার ফলে এটি দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। কোনো ধরনের পরিকল্পনা ছাড়াই সড়ক ঘেঁষে অবৈধভাবে রাস্তা নামিয়ে তৈরি করা হয়েছে এসব টার্মিনাল, যেগুলোতে প্রতিদিনই শত শত গাড়ি উঠা-নামা করছে। অপরিকল্পিত টার্মিনালগুলোর গেটে পাস নেয়ারও ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফলে এসব পাস সংগ্রহ করে গাড়িগুলো উঠা-নামা করার সময় আউটার রিং রোডে বড় ধরনের যানজট তৈরি করছে। এছাড়া বড় বড় ট্যাংক লরিগুলো নিচ থেকে উঠার সময় রাস্তার উপর প্রচণ্ড গতিতে উঠতে হয়। এতে রাস্তায় যান চলাচলে মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি হচ্ছে।
গতকাল সরজমিনে দেখা গেছে, পতেঙ্গা বিচের সন্নিকটে একাধিক টার্মিনাল গড়ে উঠেছে। এরমধ্যে বিভিন্ন আইসিডির গাড়ি রাখার পাশাপাশি অন্যান্য গাড়িও রাখা হচ্ছে। একজন চালক বলেন, আমরা রাস্তার উপর গাড়ি রেখে দিই। তবে আইসিডিগুলোর গাড়ি এসব টার্মিনালে রাখার ব্যাপারে বাধ্য করা হয়। রাস্তার একপাশ জুড়ে গাড়ি রাখার অবস্থাও তৈরি হয় বিভিন্ন সময়। তবে গতকাল সরজমিনে পরিদর্শনকালে রাস্তার উপর অবৈধভাবে দাঁড়িয়ে থাকা খুব বেশি গাড়ি দেখা যায়নি। তবে প্রতিটি টার্মিনালই গাড়িতে ভর্তি ছিল। যেগুলোর উঠা নামা সরাসরি ব্যাহত করছিল মূল সড়কের যান চলাচল।
ফৌজদারহাট থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত অগুনিত অবৈধ ও অপরিকল্পিত টার্মিনাল রয়েছে। যেগুলোতে ঘণ্টা হিসেবে গাড়ি রাখা হয়। একেকটি গাড়ি একদিন রাখতে সর্বোচ্চ দুইশ’ টাকা পর্যন্ত ভাড়া গুণতে হয় বলে গতকাল একাধিক চালক আজাদীকে জানিয়েছেন।
বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট টার্মিনাল পরিচালনাকারী কর্মকর্তাদের সাথে কথা বললে তারা জানান, টার্মিনালে গাড়ি রাখা এবং বের হতে দেয়া ছাড়া আমাদের আর কোনো কাজ নেই। আমরা নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি আদায় করে এসব গাড়ি টার্মিনালে রাখি। স্থানীয় দুটি আইসিডির গাড়িতে বিশাল টার্মিনালটি ভরে যায়। তাই বাইরের কোনো গাড়ি তারা রাখতে পারেন না বলে জানান। অবশ্য পুরো রাস্তা জুড়ে অসংখ্য টার্মিনাল দেখা গেছে, যেগুলোতে সাধারণ গাড়িও রাখা হয়।
চট্টগ্রাম আউটার রিং রোড প্রকল্পের পরিচালক এবং সিডিএর চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী হাসান বিন শামস গতকাল দৈনিক আজাদীকে বলেন, রাস্তাটি পুরোদমে চালু হলে এটির যান চলাচল আরো বাড়বে। সেক্ষেত্রে এই ধরনের অপরিকল্পিত ট্রাক টার্মিনাল বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করবে। এতে রাস্তাটি নির্মাণের উদ্দেশ্য ভেস্তে যাবে। তিনি আরো বলেন, আমরা চার লেনের রাস্তাটিতে সর্বোচ্চ গতির বিষয়টি নিশ্চিত করতে কাজ করছি। এই রাস্তা শুধু আউটার রিং রোডই নয়; এটি কক্সবাজারসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের হাজার হাজার গাড়ি চলাচলের প্রধান সড়ক হয়ে উঠবে। বিশেষ করে টানেল চালু হলে এই রাস্তার ব্যস্ততা কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা কল্পনারও বাইরে। এই ধরনের ব্যস্ত একটি মহাসড়কের পাশে এভাবে অপরিকল্পিত টার্মিনাল গড়ে তোলা ঠিক হচ্ছে না বলেও তিনি নিশ্চিত করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে ২ জনের মৃত্যু, শনাক্ত আরো ১২৭
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম বন্দরের নতুন চেয়ারম্যান শাহজাহান