টেকনিক্যাল ফিশ ড্রায়ারে বিষমুক্ত শুঁটকি

আনোয়ারা প্রতিনিধি | বুধবার , ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ at ৭:২২ পূর্বাহ্ণ

মাছে-ভাতে বাঙালি। এই প্রবাদের সাথে শুঁটকিরও যোগ আছে। বিশেষত বৃহত্তর চট্টগ্রামে কেউ বেড়াতে এলে শুঁটকি না খেয়ে যাবেন, তা কিন্তু হয় না। আর এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী বেশি মুনাফা লাভের আশায় বিষাক্ত কীটনাশক (ডিডিটি) ও অতিরিক্ত লবণ মেশান শুঁটকিতে। ফলে সুস্বাদু এই খাবার আইটেম হয়ে উঠছে ক্যান্সারের অন্যতম কারণ। এমন পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় জাপানি প্রযুক্তি-নির্ভর টেকনিক্যাল ফিশ ড্রায়ার প্রকল্পের মাধ্যমে বিষমুক্ত শুঁটকি প্রস্তুত করা হচ্ছে। নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত শুঁটকি বাঙালির পাতে তুলে দিতে তিন তরুণের নেয়া উদ্যোগ সাড়া জাগিয়েছে।
মো. তানভীর, জয়নাল ও আমজাদ নামে ৩ তরুণ পারকী সমুদ্র সৈকতের কাছে বারশত কালিবাড়ি এলাকায় এই প্রকল্প স্থাপন করেন। জাপানি প্রযুক্তিতে শুঁটকি শুকানোর এই ধারণা দেশে নতুন বলে দাবি তাদের। তারা জানান, কোনো রকম কৃত্রিমতা ছাড়াই সম্পূর্ণ সূর্যের আলোতে গ্রিনহাউজের মাধ্যমে টেকনিক্যাল ফিশ ড্রায়ারে শুঁটকি প্রস্তুত করা হচ্ছে। এখানে কোনো লবণ, কীটনাশক (ডিডিটি) ও ধুলোবালি এমনকি মশা-মাছিও ঢোকার সুযোগ নেই। স্বাস্থ্যসম্মত হওয়ায় ইতোমধ্যে এই শুঁটকি স্থানীয়দের মাঝে বেশ সাড়া জাগিয়েছে। এখানে লবণ, কীটনাশক ও ধুলোবালি না থাকায় ওজনেও খুব হালাকা হয়। স্থানীয় বাজারে যেসব শুঁটকি আছে এগুলো তার থেকে পরিমাণে প্রায় দ্বিগুণ হয়।
উদ্যোক্তারা জানান, পড়ালেখার পাশাপাশি ব্যতিক্রমী কিছু করার চিন্তা ছিল তাদের মাথায়। উপকূলীয় এলাকায় জন্ম, বেড়ে উঠার সুবাদে শুঁটকির বিষয়টি মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে তাদের। টেকনিক্যাল ফিশ ড্রায়ার প্রকল্পের উদ্যোক্তা তিনজনের বাড়িই আনোয়ারার পশ্চিম রায়পুর গ্রামে। পড়ালেখা ও পারিবারিক সুবাদে থাকেন নগরীতে। তিনজনই বিভিন্ন বিষয়ে অনার্স পড়ছেন। ক্ষতিকর ডিডিটি ব্যবহার এড়িয়ে কিভাবে স্বাস্থ্যসম্মত শুঁটকি তৈরি করা যায় তা নিয়ে চিন্তা শুরু করেন। করোনার শুরুর দিকে ইউটিউব ও বিভিন্ন জার্নাল ঘেঁটে তারা টেকনিক্যাল ফিশ ড্রায়ার প্রযুক্তিতে অর্গানিক শুটকির ধারণা নেন। পরে বিষয়টি নিয়ে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা রশিদুল হকের সাথে আলোচনা করেন। এসময় তিনি তাদেরকে উৎসাহিত করেন এবং সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এরপর তারা নেমে পড়েন অর্গানিক শুঁটকি প্রস্তুত কার্যক্রমে। বারশত কালিবাড়ি এলাকায় স্থাপন করেন ‘টেকনিক্যাল ফিস ড্রায়ার’। গত ৩ ফেব্রুয়ারি উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. রশিদুল হক এটি উদ্বোধন করেন।
উদ্যোক্তা তানভীর আহমেদ জানান, একটি টেকনিক্যাল ফিস ড্রায়ারে একসাথে প্রায় ৮ শত কেজি শুঁটকির ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। শুঁটকি একবার ঢুকালে ১০ দিন পর্যন্ত লাগে। এই শুঁটকি স্বাস্থ্যসম্মত হওয়ায় বাজারদরও একটু বেশি। ইতোমধ্যে স্থানীয়দের মাঝে আমাদের উৎপাদিত শুঁটকি বেশ চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। এখন সারা দেশের বিষমুক্ত শুঁটকি অনলাইন শপিংয়ের মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
উপজেলা মৎস্য বিভাগ সূত্র জানায়, বঙ্গোপসাগর থেকে বছরে প্রায় ৬ লক্ষ মেট্রিক টন বিভিন্ন প্রজাতির মাছ আহরণ করা হয়। এর মধ্যে ২০-২২% মাছ উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় শুঁটকি হিসেবে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। ১৫ থেকে ২০ প্রজাতির মাছের শুঁটকি তৈরি করা হয়।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. রাশিদুল হক জানান, তিন বন্ধুর মতো স্থানীয় শিক্ষিত যুবকরাও প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে এ ধরনের প্রকল্পে এগিয়ে আসবেন বলে আশা করছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএশিয়াটিকের চেয়ারম্যান হলেন নূর, কো-চেয়ারম্যান সারা
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬