টুটুদের শহীদ মিনার

সালাম সৌরভ | বুধবার , ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৮:২৪ পূর্বাহ্ণ

২০২১ সনের ফেব্রুয়ারি মাস এসে গেল টুটু গভীর চিন্তায় মগ্ন। কিভাবে এবারের একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস ভাষা দিবস উদযাপন করা যায়। ২০২০ সাল থেকে করুণা মহামারীর জন্য স্কুল বন্ধ হয়ে গেল, এখনও পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ। প্রতিবছর স্কুলে জাতীয় দিবসগুলো জাঁকজমকভাবে উদযাপিত হয়। ছোট একটা অফিসার্স কলোনী টুটুদের বাসা। সহপাঠী বলতে ওরা মাত্র চারজন তার মধ্যে দুজন মেয়ে। মুমু আর তূর্ণা। কলোনিতে টুটুর বন্ধু বলতে একজন ই দ্বীপ। তাছাড়া কলোনিতে জুনিয়র কয়েকজন আছে, যাদের নিয়ে টুটু ক্রিকেট খেলে।
গভীর রাত, পড়ার টেবিলের টুটু বইয়ের পাতা উল্টাতে উল্টাতে ভাবছে। মা এসে বলল : কিরে টুটু ঘুমোতে যাচ্ছিস না?
: মা একটু পড়াটা শেষ করে ঘুমুচ্ছি।
টুটু মনে মনে বলছে, পড়া না ছাই। ভাবছি যদি বাবার মোবাইলটা ম্যানেজ করা যেত, দীপকে একটা ফোন করতাম। ফোন করে ওর আইডিয়াটা নেওয়া যেত। একুশে ফেব্রুয়ারি কীভাবে উদযাপন করা যায়? হেবলাটা এতক্ষণে বোধহয় নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। কাল সকালে ওর সাথে এ বিষয়ে আলাপ করব । সকাল হতেই টুটু দ্বীপকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে এলো।
: কিরে টুটু এই সাতসকালে ডাকাডাকি করছিস কেন ?
:আরে ব্যাটা মাথায় একটা পোকা ঢুকেছে :কিসের পোকা ?
:একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবসের । আচ্ছা আমরা কি এই ছোটখাটো কলোনিতে একুশে ভাষা দিবস উদযাপন করতে পারি না।
: কি করবি ভাবছিস ?
: যেমন ধর শহীদ মিনারে ছড়া কবিতা পাঠের আসর, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ইত্যাদি ইত্যাদি।
: কিন্তু টুটু পুষ্প অর্পণ এর জন্য শহীদ মিনার পাবি কোথায়?
: এইসব দেখে ভাবছি এই ব্যাপারে মুমু ও তূর্ণার সাথে কথা বলতে হবে।
১৯ ফেব্রুয়ারি টুটু সবাইকে সিঁড়ি ঘরের নিচে দেখে একটা আলোচনা সভায় বসল হাতে মাত্র আরেকটা দিন, কেমন করে কি হবে তোরা কেউ বুদ্ধিশুদ্ধি দে। জুনিয়রদের মধ্যে মুমুর ছোটো ভাই কুমু, সাফওয়ান, সায়ন, সিমরান, সাহেরিন ও সিইবীন।
: মুমু বলল : দেখ টুটু সবাই যাই করো না কেন, এখানে টাকার প্রয়োজন আছে। দ্বীপ: টাকা যোগাড় হয়ে যাবে।
তূর্ণা বলল: কিভাবে ?
দ্বীপ বলল: একটা লিস্ট করতে হবে, আমাদের কলোনিতে আমরা মোট কতজন বাচ্চা আছি।
সবাই চিত্রাঙ্কন ও ছড়া পাঠে অংশগ্রহণ করবে। যারা অংশগ্রহণ করবে, তাদের সবাইকে আজকের মধ্যে ২০ টাকা করে রেজিস্ট্রেশন ফি জমা দিতে হবে।
টুটু বলল: একটা কাজ করলে কেমন হয়, টাকা যা হয়, তা দিয়ে, চিত্রাঙ্কনে অংশগ্রহণকারী প্রথম দ্বিতীয় তৃতীয় স্থান দের জন্য পুরস্কার এবং দেওয়ালে লেখার রং কিনতে হবে।
দ্বীপ: রং দিয়ে কী হবে?
টুটু: যেহেতু শহীদ মিনার তৈরি করার কোন জায়গা এবং সময় দুটোই আমাদের হাতে নেই। তাই রং দিয়ে কলোনির বিল্ডিংয়ের দেওয়ালে আমরা বড় করে একটা শহীদ মিনার আঁকবো। একুশে সকালে সেই শহীদ মিনারে আমরা পুষ্প অর্পণ করব। তারপর সকালে আমাদের কর্মসূচি থাকবে : চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, বিকেলে ছড়া কবিতা পাঠের আসর, এবং পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান। সব তো হলো, এখন পুরস্কার বিতরণের জন্য বড় কাউকে দাওয়াত করে আনতে হবে।
তূর্ণা বলল: আচ্ছা বড় ভাইয়াদের দাওয়াত করলে কেমন হয়?
টুটু বলল : ঠিক বলেছিস, আমরা দুজন বড় ভাইয়াকে দাওয়াত করব, এরা হলো সাহিত্য সংস্কৃতির সাথে সম্পৃক্ত একজন
কাব্য মাহমুদ, অন্যজন সৌরভ হাসান। তাহলে এই কথাই থাকলো। একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস, ভাষা দিবস আমরা আমাদের কলোনিতে উদযাপন করছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঘুম ভাঙেনি ঘুম ভেঙেছে
পরবর্তী নিবন্ধতাহাদের কথা