টাকা যেখানেই পাচার হোক, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ফিরিয়ে আনা হবে

চট্টগ্রামে বিক্ষোভ সমাবেশে শামসুজ্জামান দুদু

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১৫ মে, ২০২২ at ৫:০৮ পূর্বাহ্ণ

আওয়ামী লীগ টাকা ছাড়া কিছু বুঝে না বলে দাবি করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। এসময় তিনি বলেন, টাকা যেখানেই পাচার হোক বিএনপি ক্ষমতায় আসলে তা দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। দেশের টাকা আকাশে যাক বা সাগরে ভাসুক তা দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। দেশের সম্পদ দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। এসময় ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদকের উদ্দেশ্যে বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেবকে আমি ধন্যবাদ জানাই। তিনি একটা সত্য বলেছেন। তিনি বলেছেন, যারাই আওয়ামী লীগ করেছে তারাই বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার করেছে। ওবায়দুল কাদের সাহেব আপনি পদত্যাগ করেন। আপনার দলের সব তো চোর। এটা তো আপনি স্বীকার করছেন।
গতকাল শনিবার বিকেলে নগরীর নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয়ের মাঠে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। ‘দেশব্যাপী বিএনপিসহ বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলা’ হচ্ছে দাবি করে এর প্রতিবাদে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির উদ্যোগে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানের সভাপতিত্বে প্রধান বক্তা ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির মৎস্যজীবী বিষয়ক সম্পাদক লুৎফুর রহমান কাজল। বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন। বক্তব্য রাখেন সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী ও নগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর।
ক্ষমতাসীন সরকারকে ইঙ্গিত করে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, এরা ভাবতেই পারে নাই একসময় ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হবে। তারা মনে করে ক্ষমতা সারা জীবনের এবং সেটা তাদের জন্মগত অধিকার। তারা সব ছাড়তে রাজি কিন্তু ক্ষমতা না। কিন্তু ক্ষমতা তো ছাড়তে হবে। এ সময় তিনি বলেন, শ্রীলংকায় কি ঘটেছে আপনারা দেখেছেন। সরকারি দলের যা অবস্থা করল দেখে খারাপ লেগেছে। পাকিস্তানে দেখেন, কথা নাই বার্তা নাই ইমরান খানকে বিদায় নিতে হল। এখন যদি বলি, আপা আপনি বাসায় যান। অনেক কিছু করেছেন। তিনি বলেন, চ্যালেঞ্জ করে বলছি বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তাকে ছাড়েন। তারেক জিয়াকে দেশে আসার সুযোগ দেন। আপনি (প্রধানমন্ত্রী) তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। তখন কত ধানে কত চাল বুঝতে পারবেন।
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ১৩ বছর ধরে বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর এমন কোনো নির্যাতন নাই যা করা হয়নি। ৩২ লক্ষ মামলা হয়েছে। এরপরও আমরা কিছু করব না। বিএনপি প্রতিহিংসার রাজনীতি করে না। আমারা ভোট দেওয়ার অধিকার চাই। পুলিশ বাহিনীর প্রশংসা করে তিনি বলেন, পুলিশের অনেকে মুক্তিযুদ্ধ করেছে। দেশের জন্য রক্ত দিয়েছে। সেই পুলিশকে আওয়ামী সরকার ডাকাতের দলে পরিণত করেছে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীকে মারার জন্য পুলিশকে লেলিয়ে দিয়েছে। পুলিশে আমাদের ভাই, সন্তানরা আছে। তারা কী অন্যায় করেছে। ৫০ বছরে পুলিশের বিরুদ্ধে কোনো দেশের নিষেধাজ্ঞা আসেনি। কিন্তু এখন পুলিশ আমেরিকা, কানাডা যেতে পারে না। দুবাইও যেতে পারে না, ইন্ডিয়াও মনে হয় যেতে দেবে না। বিএনপি ক্ষমতায় আসলে পুলিশের আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা হবে। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের এখন কমিশন দিতে হয়। বেগম জিয়ার সময় সয়াবিনের লিটার ছিল ৪৫ টাকা। এখন হয়েছে ২০০ টাকা। বেগম জিয়ার আমলে চাল ছিল ১৬ টাকা। আওয়ামী লীগ ১০ টাকায় দিবে বলেছে। আর এখন ৫০ থেকে ৬০ টাকা হয়েছে ১৬ টাকার চাল। তাদের এ মিথ্যা কথার দিন শেষ হচ্ছে।
জাফরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, জনগণের মনে যে ক্ষোভ সেটারই প্রতিফলন ঘটেছে শ্রীলংকায়। রাজাপাকসের পরিবারের দমন পীড়ন ও লুটের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে সেখানকার মানুষ। তেমনই হবে বাংলাদেশের অবস্থা।
কঙবাজারের সাবেক এমপি লুৎফুর রহমান কাজল বলেন, শুধু তেলের দাম বাড়ছে তা নয়, নিত্য প্রয়োজনীয় সকল পণ্যের দাম বেড়েছে। সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার আগে দেশের মানুষকে রূপকথার গল্প শুনিয়েছিল, ১০ টাকায় চাল খাওয়াবে, ঘরে ঘরে চাকরি দেবে, গ্রামকে শহরে রূপান্তর করবে। কিন্তু তারা ১০ টাকায় চালের বদলে ঘরে ঘরে হাহাকার ছাড়া কিছু দেয়নি। চাকরির বদলে ঘরে ঘরে দলীয় ক্যাডার বাহিনি দিয়ে সন্ত্রাস সৃষ্টি করছে।
এ এম নাজিম উদ্দীন বলেন, আওয়ামী লীগের অধীন কোনো নির্বাচন এদেশে হবে না। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আসন ভাগাভাগির পরিকল্পনা করছে সরকার। কিন্তু আসন ভাগাভাগির নির্বাচন হতে দেওয়া যাবে না। আসন ভাগের নির্বাচনে যারা যাবে, তাদেরও প্রতিহত করবে বিএনপি।
আবুল হাশেম বক্কর বলেন, বর্তমান সরকার তাদের বক্তৃতা ও বিবৃতিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সকল দলের অংশগ্রহণের কথা বলছে। অথচ সরকারদলীয় সন্ত্রাসীদের দিয়ে বিরোধী দলের সভা সমাবেশ ও নেতৃবৃন্দের ওপর হামলা করছে। এতে সরকারের স্ববিরোধীতাই ফুটে ওঠে।
আবু সুফিয়ান বলেন, নিজেদের অস্তিত্বের প্রশ্নে সরকার আরও লাগামহীন ও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলা পূর্ব পরিকল্পিত।
নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম সাইফুল আলম ও ইয়াছিন চৌধুরী লিটনের যৌথ সঞ্চালনয় বক্তব্য রাখেন নগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আলহাজ্ব এম এ আজিজ, নগর যুবদলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন দীপ্তি, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এইচ এম রাশেদ খান, মহিলা দলের ফাতেমা বাদশা, মনোয়ারা বেগম মনি, জেলী চৌধুরী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরামু বিকেএসপিতে খাবার খেয়ে ১৩ শিক্ষার্থী অসুস্থ
পরবর্তী নিবন্ধসাংবাদিকদের সাথে হুইপ স্বপনের রূঢ় আচরণ