টাকা দিলে ফিট না দিলে আনফিট

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২৫ মার্চ, ২০২১ at ৬:২৭ পূর্বাহ্ণ

গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল (জিসিসি) ভুক্ত তথা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যেতে প্রবাসী শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার নামে নানা ধরনের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। টাকা না দিলে আনফিট করে দেয়া হচ্ছে। পুলিশ রিপোর্টের জন্যও গুণতে হচ্ছে টাকা। মধ্যপ্রাচ্যের কড়া রোদসহ বিরূপ আবহাওয়ায় মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কাজ করা প্রবাসী শ্রমিকদের ভোগান্তির প্রতিকার চেয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে পত্র দেয়া হয়েছে। শুধু মেডিকেল রিপোর্টই নয়, পুলিশ রিপোর্টের জন্যও প্রবাসীদের হাজার হাজার টাকা যোগান দিতে হচ্ছে।
সূত্র জানায়, জিসিসিভুক্ত দেশগুলোতে কাজ করতে যাওয়ার সময় কিংবা দেশ থেকে ঘুরে যাওয়ার সময় জিসিসি অনুমোদিত মেডিকেল সেন্টারস্‌ এসোসিয়েশনের (জিএএমসিএ বা গামকা) মনোনীত মেডিকেল সেন্টার থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাধ্যতামূলক। ঢাকা চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ত্রিশটিরও বেশি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রবাসীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়। স্বাস্থ্য পরীক্ষার অংশ হিসেবে সাধারণ শারীরিক পরীক্ষা, মলমূত্র পরীক্ষা, এঙ-রে, রক্ত পরীক্ষা (এইচএসবিএসজি, হেপাটাইটিস – এ ও বি), ভিডিআরএল (যৌনরোগ/ সংক্রমণ পরীক্ষা), এইচআইভি (এইডস পরীক্ষা), টিউবারকিউলোসিস (যক্ষা পরীক্ষা), ম্যালেরিয়া, লেপ্রোসি, মহিলাদের ক্ষেত্রে গর্ভবতী কি-না ইত্যাদি বিষয়ে পরীক্ষা করা হয়। গামকা অফিস থেকে স্লিপ নিয়ে অনুমোদিত ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যেতে হয়। শুধুমাত্র স্লিপ নেয়ার জন্য প্রতিজন থেকে আদায় করা হয় তিনশ’ টাকা। পরীক্ষার ক্ষেত্রেও বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তুলনায় বাড়তি টাকা নেয়া হয়। গামকা অফিসে ফিটনেস স্লিপ নেয়া, ছবি তোলা, সার্ভারে তথ্য এন্ট্রি করার পর বিদেশ যাওয়ার জন্য অনুমোদন পান প্রবাসীরা।
গামকা অনুমোদিত ডায়গনস্টিক সেন্টারগুলোর রিপোর্ট নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। টাকা দিয়ে ফিটনেস পাওয়ার মতো অভিযোগ রয়েছে। টাকা না দিলে আনফিট করে দেয়ার অভিযোগও বিস্তর। নানা অভিযোগে অনেকগুলো ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে বাদ দেয়া হয়। নতুন করে নিয়োগ দেয়া হয় ডায়াগনস্টিক সেন্টার। কিছুদিন ভালোভাবে কাজ করার পর তারাও নতুন নতুন অনিয়মের জন্ম দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগে মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম নিজের ভোগান্তির কথা জানিয়ে বলেন, মাত্র আট হাজার টাকা বাড়তি দাবি করেছিল একটি ডায়গনস্টিক সেন্টার। তিনি দেননি। পরবর্তীতে ছয় মাসের জন্য তাঁকে আনফিট করে দেয়া হয়। তিন লাখ টাকা খরচ করে ভিসা যোগাড় করেও তিনি বিদেশ যেতে পারেননি গামকা অনুমোদিত ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লোভের কারণে।
নগরীর আগ্রাবাদের ফারুক চেম্বারের একেএস খান ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, তার শরীরে কোন সমস্যা নেই। তিনি পরবর্তীতে অনেকগুলো ডাক্তার দেখিয়েছেন। টেস্ট করিয়েছেন। কিন্তু কোথাও কিছু পাওয়া যায়নি। অথচ একেএস খান ডায়াগনস্টিক সেন্টার আমার শরীরে হেপাটাইটিস ভাইরাস সংক্রমণের কথা উল্লেখ করে অনলাইনে রিপোর্ট করে দিয়েছে। এতে আমার বিদেশ যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে।
একই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চন্দনাইশ পৌরসভার আবদুল মোনাফের পুত্র আমিনুল ইসলাম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে উল্লেখ করেন, উক্ত ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষার জন্য গেলে তাকে আনফিট করে দেয়া হয়। বাড়তি টাকা না দেয়ায় তাকে আনফিট করা হয়। পরবর্তীতে তিনি এপিক হেলথ কেয়ার ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিভিন্ন পরীক্ষা করেও শরীরে কোন রোগের উপস্থিতি পাননি। যেই রোগের কথা উল্লেখ করে তাকে আনফিট করা হয় সেগুলো পরীক্ষা করে তিনি নেগেটিভ পেয়েছেন। কিন্তু তিনি আগামী ছয় মাস বিদেশ যেতে পারবেন না একেএস খান ডায়াগনস্টিক সেন্টারের রিপোর্টের কারণে।
এ ধরনের অসংখ্য অভিযোগ গামকা অনুমোদিত একাধিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে গতকাল গামকার স্থানীয় একজন কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, বিভিন্ন অভিযোগ আমরা পাই। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। কিন্তু কারো না কারো কাছ থেকে রিপোর্ট তো নিতে হবে। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়া বিদেশ যাওয়ার কোন সুযোগ নেই।
একেএস খান ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তারা এ ধরনের অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেন। সংশ্লিষ্ট মেডিকেল অফিসার বলেন, মেডিকেল রিপোর্ট একটি টেকনিক্যাল বিষয়। পরীক্ষা করে যা পাওয়া যায় সেই রিপোর্টই আমরা দিই। অন্যজন কি রিপোর্ট দিয়েছেন সেটা আমাদের বিবেচ্য নয় বলে তিনি ফোন রেখে দেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধছিনতাই হওয়া স্বর্ণ হাজারী গলি থেকে উদ্ধার
পরবর্তী নিবন্ধঅটোপাশে চট্টগ্রামে পরীক্ষার্থী বেড়ে দ্বিগুণ