খাগড়াছড়িতে কৃষি জমির টপসয়েল কেটে সাবাড় করছে এক শ্রেণীর দালাল। এতে কমছে আবাদি জমির পরিমাণ। খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে টপসয়েল কাটা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন কৃষিবিদেরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, ভূ–প্রাকৃতিক গঠনের কারণে পার্বত্য এলাকায় কৃষি জমির পরিমান কম। কৃষি জমির টপসয়েল (উর্বর মাটি) কাটায় কমছে আবাদি জমির পরিমাণ। টপসয়েল কর্তনের মূল ইন্ধনদাতা হল ইটভাটা মালিকেরা। কৃষকদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে কৃষি জমির উপরিভাগ কাটছে ভাটা মালিকরা। কৃষি জমি সুরক্ষা ও ভূমি জোনিং আইন–২০১৩ অনুযায়ী ‘কৃষি জমি কৃষি কাজ ছাড়া অন্য কোন কাজে ব্যবহার করা যাবে না। খাগড়াছড়ির সদর উপজেলার কমলছড়ি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় কৃষি জমির টপসয়েল কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। প্রকাশ্যে আইন না মেনে টপসয়েল গাড়িতে করে পরিবহন করলেও প্রশাসন নিশ্চুপ। মাটি পরিবহনের দায়িত্বে থাকা গাড়ির চালক মো. আক্তার হোসেন, জসীম উদ্দিন জানান, সারাদিনে ৮ ঘণ্টা মাটি পরিবহন করি। দৈনিক চুক্তির ভিত্তিতে মাটি পরিবহন করা হয়।
খাগড়াছড়ির পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আলতাফ হোসেন জানান, মাটি থেকে ১৫ ইঞ্চি পর্যন্ত টপসয়েল। প্রাকৃতিকভাবে টপসয়েল তৈরিতে অনেক বছর লাগে। মাটির উপর থেকে টপসয়েল কেটে ফেললে মাটির উর্বরতা নষ্ট হয়। এতে কৃষি জমির ফলন কমবে। এটা আমাদের কৃষির জন্য অশনি সংকেত।
খাগড়াছড়ির দীঘিনালা, গুইমারা, সদর উপজেলা, মাটিরাঙাসহ জেলার বেশির ভাগ এলাকায় একই চিত্র। জমির মালিকেরা জানান, সাধারণত ইটভাটার মালিকেরা বা মাটির কেনার দালালরা চুক্তি ভিত্তিতে জমির মাটি কিনে নেয়। আবার কেউ কেউ জমি খনন করে মাটি বিক্রি করে পুকুর বানাচ্ছে। খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ–পরিচালক কিশোর কুমার মজুমদার বলেন, টপসয়েল কৃষি জমির চাষাবাদের জন্য অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ। এমনিতেই পার্বত্য এলাকায় টপসয়েল এর পরিমান কম। প্রাকৃতিকভাবে কৃষি জমিতে প্রতি ইঞ্চি টপসয়েল তৈরি হতে সময় লাগে শত শত বছর। ইটভাটাসহ বিভিন্ন কাজে কৃষি জমির টপসয়েল ব্যবহার করার কারণে কৃষিতে অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে।
এদিকে জেলার মাটিরাঙা ও রামগড়ে টপসয়েল কাটার দায়ে একাধিক ভাটা মালিককে জরিমানা করেছে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। অবৈধ ইটভাটায় কৃষি জমির মাটি ব্যবহার বন্ধে অভিযান জোরদার করা হবে জানিয়েছে জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান। তিনি বলেন, টপসয়েল কাটা বন্ধে ইতোমধ্যে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। অভিযোগ পাওয়া গেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।