জয়তু বেলা

সত্যব্রত বড়ুয়া | শুক্রবার , ৮ জানুয়ারি, ২০২১ at ৬:৩২ পূর্বাহ্ণ

ছন্দের জাদুকর সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত বলেছেন, “জোটে যদি একটি পয়সা খাদ্য কিনিয়ো ক্ষুধার লাগি, দুটি যদি জোটে তবে অর্ধেকে ফুল কিনে নিয়ো হে অনুরাগী”। আমি বলি, বেলা কিনে নিয়ো হে অনুরাগী। এ বেলা ‘বেলা বয়ে যায়’ বেলা নয়। এটা হলো বেলা বিস্কুট। আমি বেলা অন্তপ্রাণ। আসলে আমির জায়গায় আমরা বলা উচিত। এর মানে আমরা চাঁটগাইয়ারা বেলা অন্তপ্রাণ। চায়ের কাপে বেলা বিস্কুট ভিজিয়ে আমরা আয়েশ করে চা খাই। সত্যিকার অর্থে এই খাওয়াটাকে আমরা উপভোগ করি। প্রাণবন্ত হই। আমার এক বৌদি ছিলেন। তাঁর নাম ছিলো বেলা।
আমি ওনার বাসায় বেড়াতে গিয়ে বলতাম, বেলা বৌদি চায়ের সাথে বেলা চাই কিন্তু। তাঁর বাড়ি ছিলো রাজশাহী। স্বামীর বাড়ি চাঁটগায়। বৌদি বলতেন, চাঁটগায় এসে আমি বেলা বিস্কুট খেতে শিখেছি। চাকরি জীবনে এক সময় আমি রাজশাহীতে কিছুকাল কাটিয়েছি। আমি দেখেছি এখানকার বেকারিগুলোর বেশির ভাগই চালায় চাঁটগার মানুষ। একটি ছিলো বেকারি কাম চায়ের দোকান। এখানে আমি মাঝে মাঝে চা খেতে আসতাম। আমি জানতাম এই দোকানটিতে আসলে দেশি মানুষের দেখা পাওয়া যাবে। এখানকার তৈরি বেলা বিস্কুটের সুনাম ছিলো। আমরা চাঁটগাইয়ারা সবাই চায়ের সাথে বেলা বিস্কুট ভিজিয়ে পরমানন্দে খেতাম। আমাদের ‘বেলা আড্ডা’ জমে উঠতো । বেলা নিয়ে আমি অনেক ‘এঙপেরিমেন্ট’ করেছি। বেলাতে ডিম মিশিয়ে তৈরী করেছি ‘বেলা টোস্ট’। এভাবে তৈরী হয়েছে ‘বেলা সিঙ্গারা’, ‘বেলা চপ’। কোনো কোনো সময় আমি ছোটো সাইজের বেলা পুরোটাই চায়ের কাপে ভিজিয়ে দিতাম। চা শুষে নিয়ে বেলাটা ফুলে ডোল হতো। ডোল হয়ে থাকা বেলাতে চিনি মিশিয়ে খেতাম। ভালোই লাগতো। আমি অনেক অস্ট্রেলিয়া এবং লন্ডনে বসবাসকারি চাঁটগাইয়া দেখেছি যারা দেশে আসলে চলে যাওয়ার সময় বড় প্যাকেট করে বেলা বিস্কুট নিয়ে যায়। আমরা ইচ্ছে করলে ‘বেলা মেলা’, ‘বেলা উৎসব’ করতে পারি। আমাদের সেমিনারে, বই প্রকাশনা উৎসবে ধূমায়িত চায়ের সাথে বেলা বিস্কুট পরিবেশন করা যায়। এতে আমাদের ‘বেলা সংস্কৃতি’ বিকশিত হবে। শেফালি ঘোষের মহেশখালির পান নিয়ে গাওয়া গানটি শুনে এক সময় আমরা মাতোয়ারা হয়েছিলাম। এখন হতে পারে বেলা বিস্কুটকে নিয়ে আঞ্চলিক গান। এ গান শুনেও আমরা মাতোয়ারা হবো। কবি নজরুল ইসলাম বেশ কয়েকবার চট্টগ্রাম এসেছিলেন।
এ সময় তিনি লিখেছেন, ‘বাতায়ন পাশে গুবাক তরুর সারি’ কবিতাটি। আমার মনে হয় সে সময় তাঁকে কখনো চায়ের সাথে বেলা বিস্কুট খাওয়ানো হয়নি।
হলে বেলাকে নিয়েও কবিতা লিখতেন। স্বাদের বেলাকে নিয়ে আমার অনেক সাধ রয়েছে। আসুন বেলা চর্চা শুরু করি। জীবন হবে আনন্দময়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশিক্ষাক্ষেত্রে ঝরে পড়া রোধে সমন্বিত প্রয়াস জরুরি
পরবর্তী নিবন্ধনতুন বিকেল