জ্বালানির দাম পুনর্বিবেচনা : সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন জনগণ

| মঙ্গলবার , ২৩ নভেম্বর, ২০২১ at ৬:১১ পূর্বাহ্ণ

আমাদের বাংলাদেশের একটা নিয়ম দাঁড়িয়েছে যে, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি মানেই জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়া। সারা বিশ্ব এখন চিন্তিত এ নিয়ে। বিশেষ করে অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের সময়ে তেলের দাম বাড়ানোর সমর্থন নেই কারোরই। কিন্তু অনেকের অভিযোগ, বাংলাদেশ সরকার সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা না করে ভেবেছে কেবল বিপিসির কথা, পরিবহন খাতের প্রভাবশালী মালিকদের কথা।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে সরকার চিন্তিত হয় মূলত অক্টোবর থেকেই। এর আগের সাত বছর তেলের দাম ছিল অনেক কম। তখন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) কম দামে তেল কিনে দেশের ভোক্তাদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করেছে ৪৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। এই সাত বছরে সরকার মাত্র একবার দাম কমায়, তা-ও অতি সামান্য, মাত্র ৩ টাকা প্রতি লিটারে। কিন্তু দাম বাড়তে শুরু করার এক মাসের মধ্যেই বিপিসির দেওয়া প্রস্তাব মেনে ডিজেল ও কেরোসিন তেলের দাম বাড়িয়ে দেয় লিটারে ১৫ টাকা। অর্থাৎ এক লাফে বাড়ে ২৩ শতাংশ। এর প্রতিক্রিয়ায় পরিবহন খাতের ভাড়া সরকার বাড়িয়ে দিয়েছে ২৭ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, পরিবহনের মোট ভাড়ার এক-চতুর্থাংশের বা তার চেয়ে কম দায় পড়ে ডিজেলের খরচের ভাগে, বাকি তিন-চতুর্থাংশ মালিকের জমা (মুনাফা), পরিবহনের অবচয়ন বা ডিপ্রেসিয়েশন, ড্রাইভার-কন্ডাক্টর-সহকারীর বেতন, কর-চাঁদা তোলা ও যানবাহনের মেরামতি খরচের ভাগে পড়ে থাকে। এই মোটা দাগের হিসাবটা যদি মেনে নেওয়া হয়, তাহলে ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারণে ভাড়া যৌক্তিকভাবে বাড়ার কথা সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ। কিন্তু সরকারি দলের পৃষ্ঠপোষকতা-ধন্য মালিক সমিতিগুলোর ‘গোপন সমঝোতা’র ধর্মঘটকে পুঁজি করে সরকারের সঙ্গে সমঝোতার বৈঠকে পরিবহন ভাড়া একলাফে বাড়িয়ে দেওয়া হলো ২৭ শতাংশ। অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশের বাজারে এ রকম ভালো অজুহাত পেলে অহরহ দাম বাড়ানোটাই ‘সংস্কৃতিতে’ পরিণত হয়েছে। পালা-পার্বণ, ঈদ, পূজা, রমজান, বন্যা-সাইক্লোন, হরতাল-ধর্মঘট, আমদানি বিপর্যয়-যেকোনো একটি অজুহাত পেলেই বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা মুনাফাবাজির মওকা ছাড়তে রাজি নন। এ জন্যই বাংলাদেশকে বলা হয় ‘ট্রেডার্স প্যারাডাইস’ বা বণিকদের স্বর্গ। এবার যখন সরকারই ডিজেলের এহেন দামে উল্লম্ফন সৃষ্টির মাধ্যমে মওকা দিয়ে দিল, সেই মহাসুযোগ ব্যবসায়ীরা ছাড়বেন কেন?
এতো দুশ্চিন্তার মধ্যেও আশার কথা হলো, আন্তর্জাতিক বাজারে যে জ্বালানির দাম বাড়ছিল, সেটি আবার কমতে শুরু করেছে। বলা যায়, এখন আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দামে বড় পতন ঘটেছে। সেখানে দেশের বাজারে তেলের দাম কমবে কবে সে নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন উঠেছে। এক দিনের ব্যবধানে অপরিশোধিত তেলের দর ব্যারেল প্রতি ৭৬.১০ ডলারে নেমে এসেছে। জানা যায়, আন্তর্জাতিক বাজারে সপ্তাহ ব্যবধানে অপরিশোধিত তেলের দাম প্রায় ৬ শতাংশ কমেছে। আর ব্রেন্ট ক্রুড অয়েল ও হান্টিং অয়েলের দাম সাড়ে ৪ শতাংশ কমেছে। এর মাধ্যম দিয়ে টানা দু’সপ্তাহ আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমলো। এক মাসে তেলের দাম প্রায় ৯ শতাংশ কমেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে এখন জ্বালানি তেলের দাম সাত সপ্তাহের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমেছে। বিশেষজ্ঞরাও মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে জ্বালানির দাম বাড়ার কারণ নেই। সে ক্ষেত্রে সরকার জ্বালানির দাম কমিয়ে আগের অবস্থায় নিয়ে আসতে পারে। তাতে অন্তত পণ্যের পরিবহন ব্যয় ও যাত্রী ভাড়া কমানো সম্ভব হবে। তাছাড়া, জ্বালানি বিভাগের প্রতিশ্রুতি ছিলো যে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে দেশেও কমবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদের বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে পত্রিকান্তরে। তিনি বলেছেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমছে। সেটি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। তবে যে পরিমাণে দাম কমছে, তা শতাংশের হিসেবে খুব বেশি নয়। মাসব্যাপী এ ধারা অব্যাহত থাকলে একটা সিদ্ধান্তে আসা যাবে হয়তো। আমরা জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক ওঠানামা সম্পর্কে জ্বালানি বিভাগকে নিয়মিতভাবে জানাচ্ছি। সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে, সে অনুযায়ী আমরা বাস্তবায়ন করবো।
আমরাও সরকারের দিকে তাকিয়ে আছি, কখন জ্বালানির দাম পুনর্বিবেচনা করবেন!

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে