জ্বলছে না রান্নার চুলা বন্ধ সিএনজি স্টেশন

দুর্যোগ না কাটা পর্যন্ত জ্বালানি খাতের সংকট যাবে না এলএনজি খালাস বন্ধের প্রভাব

হাসান আকবর | রবিবার , ১৪ মে, ২০২৩ at ৬:০৯ পূর্বাহ্ণ

মোখার আঘাত হানার আগেই দেশের জ্বালানি সেক্টরে ভয়াবহ সংকট তৈরি হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব থেকে রক্ষার জন্য এলএনজি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ায় দেশের বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি খাতে হাহাকার শুরু হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল থেকে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে গ্যাস সরবরাহ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হওয়ায় রান্নাঘরের চুলা থেকে সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশন এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে গ্যাসের অভাব প্রকট হয়ে উঠে। এতে করে রান্নাবান্না নিয়ে ঘরে ঘরে তৈরি হয়েছে কষ্ট, সিএনজি স্টেশনে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ায় যানবাহনের দীর্ঘ লাইন এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে উৎপাদন কমে যাওয়ায় শহর বন্দর এবং গ্রামজুড়ে ভয়াবহ লোডশেডিং শুরু হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, দেশে ব্যবহৃত গ্যাসের প্রায় ৩০ শতাংশ আমদানিকৃত এলএনজির উপর নির্ভরশীল। গ্যাসের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজার থেকে এলএনজি কিনে সরকার দেশের গ্যাস খাতের ঘাটতি মোকাবেলা করছে। আমদানিকৃত এলএনজিবাহী জাহাজ বঙ্গোপসাগরের মহেশখালীর অদূরে দুটি ভাসমান টার্মিনালে খালাস করা হয়। ওখান থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে এলএনজি চট্টগ্রামের আনোয়ারা পর্যন্ত এনে জাতীয় গ্রিডের মূল সরবরাহ লাইনে প্রদান করা হয়।

সুপার সাইক্লোন হয়ে উঠার শংকা দেখা দেয়ায় ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে এলএনজি খালাসের ভাসমান টার্মিনাল দুটিকে শুক্রবার রাত ১১টা নাগাদ নির্ধারিত স্থান থেকে সরিয়ে গভীর সমুদ্রে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে আমদানিকৃত এলএনজি খালাস পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। দেশে গত কিছুদিন ধরে প্রতিদিন গড়ে ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ দেয়া হচ্ছিল। মোখার কারণে এই ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ কমে গেছে। ফলে সারাদেশে গ্যাস সরবরাহে ভয়াবহ রকমের ধস নামে।

চট্টগ্রামসহ সারাদেশে গ্যাস সরবরাহ কমে যায়। এতে রান্নাবান্নার চুলা জ্বলা বন্ধ হয়ে যায় নগরীর বিভিন্ন এলাকায়। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশনগুলোতে। এমনিতে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকলেও গতকাল সকাল থেকে সিএনজি স্টেশনগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত পুরোপুরি বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। পেট্রোবাংলার এই নির্দেশ অমান্য করে বিভিন্ন স্থানে বেশ কিছু সিএনজি স্টেশন গ্যাস বিক্রি করলেও অধিকাংশ স্টেশনই গ্যাস বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে সিএনজি নির্ভর যানবাহনগুলোকে ভয়াবহ রকমের সংকটে পড়তে হয়েছে। বিভিন্ন স্টেশনের সামনে অসংখ্য গাড়ি লাইন ধরে গ্যাসের অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।

ভয়াবহ অবস্থা দেখা দিয়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদনেও। এলএনজি সরবরাহ কমে যাওয়ায় দেশব্যাপী পিডিবির বরাদ্দ কমানো হয়েছে। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমেছে। ফলে চট্টগ্রামসহ পুরোদেশেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং করে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

আমদানিকৃত এলএনজি খালাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশের জ্বালানি খাতে দেখা দেয়া সংকট দ্রুত সুরাহা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। পেট্রোবাংলার দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, ঝড়ের পরিস্থিতি বিবেচনা করে গভীর সমুদ্রে সরিয়ে নেওয়া টার্মিনাল দুটি দ্রুত যথাস্থানে পুনঃস্থাপন করা হবে। ঝড় চলে গেলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হবে। এলএনজি সরবরাহ শুরু না করা পর্যন্ত জ্বালানি খাতের সংকট যাবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঘূর্ণিঝড়ে বঙ্গবন্ধু টানেলের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে ৮ ব্যবস্থা
পরবর্তী নিবন্ধএসএসসির সোমবারের পরীক্ষাও স্থগিত