জোয়ারে তলিয়ে গেছে স্লুইস গেট

আনোয়ারার কান্দরিয়া খাল হুমকিতে ৫০০ একর জমির চাষাবাদ

আনোয়ারা প্রতিনিধি | রবিবার , ১৪ আগস্ট, ২০২২ at ৫:৫৯ পূর্বাহ্ণ

আনোয়ারা উপজেলার চাতরী ইউনিয়নের বাঘখাইন কান্দরিয়া খাল। এ খালের স্লুইস গেট জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায়। ফলে গত এক বছর ধরে উপজেলার বাঘখাইন, কেঁয়াগড়, সিংহরা, চাতরী গ্রামের ৫০০ একরের অধিক জমিতে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে। এতে করে এসব জমিতে চাষাবাদ হুমকির মুখে পড়েছে। এছাড়া শিকলবাহা খালের ভাঙ্গনের শিকার হয়ে বাঘখাইন মোল্লাপাড়া গ্রামটির সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে দিন দিন বেড়েই চলছে স্থানীয়দের দুর্ভোগ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, স্লুইস গেট নির্মাণ ত্রুটি ও প্রভাবশালীদের মৎস্য ফাঁড় ব্যবসার কারণে বেড়িবাঁধ তলিয়ে গিয়ে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ রয়েছে।

জানা যায়, আনোয়ারা উপজেলার চাতরী ইউনিয়নের বাঘখাইন, সিংহরা, চাতরী, কেঁয়াগড় গ্রামের উপর দিয়ে বয়ে গেছে কান্দরিয়া খাল। শিকলবাহা খালের প্রভাবে প্রতিবছর নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়ে এই অঞ্চলের মানুষের বসতঘর ও চাষাবাদ ব্যাপকভাবে ক্ষতি হয়। ফলে এলাকায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও কান্দরিয়া খালের ভাঙ্গন ঠেকাতে স্থানীয়রা দীর্ঘদিন ধরে স্লুইস গেট নির্মাণের দাবি করে আসছে। তারই ধারাবহিকতায় স্থানীয় সংসদ সদস্য ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের ডিও লেটারে ২০১৮ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড ৪ কোটি টাকায় স্লুইস গেট নির্মাণ করে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স রহমান ইঞ্জিনিয়ারিং এই কাজ সম্পন্ন করেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বহীনতা, স্লুইস গেট নির্মাণে ত্রুটি ও অনিয়মের কারণে তিন বছরের মাথায় স্লুইস গেটটি বেড়িবাঁধ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তলিয়ে যায়। যার কারণে গত এক বছর ধরে এলাকার ৫০০ একরের অধিক জমিতে চাষাবাদ হুমকিতে পড়েছে। এলাকাবাসী অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে স্লুইস গেট ও বেড়িবাঁধ পুনরায় নির্মাণ করার দাবি জানিয়েছে।

স্থানীয় মোল্লাপাড়ার বাসিন্দা জলধীর মল্লিক (৭০) অভিযোগ করে বলেন, গত এক বছর ধরে স্লুইস গেটটি তলিয়ে গিয়ে বাঘখাইন মোল্লাপাড়া গ্রামটি আলাদা হয়ে যায়। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে ডিঙ্গি দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। যার কারণে অসুস্থ রোগী, বয়স্ক মানুষের কষ্ট ও ছেলেমেয়েদের পড়ালেখাও ঠিকমত হচ্ছে না।

স্থানীয় সিংহরা গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী রেজাউল করিম বলেন, খালের ভাঙ্গন, বেড়িবাঁধ ও স্লুইস গেটের কারণে গত ২০ বছরেরও অধিক সময় ধরে চাষাবাদে হাজার হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভাঙ্গনে ফসলি জমি খালে পরিণত হয়েছে। গত এক বছরে স্লুইস গেট ভেঙ্গে যাওয়ায় জোয়ারের পানি উঠানামা করছে। আমাদের কষ্টের কোনো শেষ নেই। তাই দ্রুত জনস্বার্থে স্লুইস গেট ও বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।

চাতরী ইউপি চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন চৌধুরী সোহেল বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডকে এলাকার ফসলি জমি ও স্থানীয়দের বসতবাড়ি রক্ষায় দ্রুত বেড়িবাঁধ ও স্লু্‌ইস গেট নির্মাণের দাবি জানানো হয়েছে। বর্তমানে জোয়ারের পানিতে পুরো এলাকার চাষাবাদে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী অনুপম দাশ সাংবাদিকদের জানায়, চাতরী ইউনিয়নের কান্দরিয়া খালে স্লুইস গেটটি আগের চেয়ে বড় পরিসরে নির্মিত হবে। টেকসই স্লুইস গেট নির্মাণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীরা নতুন ডিজাইনের (নকশা) কাজ করছে। ডিজাইনের কাজ শেষ হলে আমরা প্রকল্পের বরাদ্ধের জন্য আবেদন করব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম কিডনি ফাউন্ডেশনে কোটি টাকা অনুদান
পরবর্তী নিবন্ধবিশ্বকাপ পর্যন্ত টি-টোয়েন্টির নেতৃত্বে সাকিব