জীবনযাপন

বিপুল বড়ুয়া | শুক্রবার , ২৫ জুন, ২০২১ at ৮:০৭ পূর্বাহ্ণ

কেমন যেনো বিষণ্নতায় ডুবে আছে চারপাশ। ভারি হালকা পাতলা লোকজন। এক অদ্ভুত নীরবতায় যেনো সব কিছু গ্রাস করে দিয়েছে। শুধু পাতা ঝরছে রেইন্ট্রির।
চেনা জানা কাউকে চোখে পড়ছে না তন্ময় ও বর্ষার। অথচ অন্য সময় ভিড় বাট্টায় থৈ থৈ করত এখানে। এদিকে নাটকের রিহার্সেল-ওদিকে সঙ্গীত-নৃত্যের ক্লাস-আবার মুক্তমঞ্চে আলোচনা-সমাবেশ-মিলনায়তনে নাটক-কী হৈ চৈ অবস্থা। সবসময় গমাগম অবস্থা।
অথচ তার কোনো কিছুই অবশিষ্ট নেই এই অতিমারি কালে সব কিছু যেনো ঝিমিয়ে পড়েছে। সবাই চুপসে গেছে। কারো মন ভালো নেই। বিষাদ।
তন্ময় ও বর্ষা-দোতলার করিডোরে দাঁড়ায়। বিকেলের রোদ মিইয়ে এসেছে। দুজনের চোখে মুখে চাপা অস্পষ্টতা। কি হচ্ছে? কি হবে? ভেবে কূল পায় না।
‘আর কতোদিন ভুগবো আমরা করোনার এই দাপট-তন্ময়। কখোন এ সবের পাঠ চুকবে তন্ময়।’
হ্যাঁ-তাইতো-ভার্সিটি ক্যাম্পাস আমাদের থেকে দূরে সরে গেছে বর্ষা। এই এখানে কতো অনুষ্ঠান কতো জনের সঙ্গে দেখাশোনা হতো। তা সব যেনো কেমন ঝরাপাতার মতো অতীত হয়ে গেছে। ম্লান হয়ে গেছে।
‘এক অন্য ধরনের জট আমাদের-অনেকের জীবনকে স্থবির করে দিয়েছে। আমরা কী করার কিছুই বুঝছি না।’ অনুযোগ বর্ষার কথায়। ভারি শঙ্কিত বর্ষা।
তন্ময় বর্ষার দিকে চেয়ে থাকে। ভাবে-কি একটা বিশ্রি ব্যাপার ঘটে গেল। সবাই যে যেদিকে পারে সরে দাঁড়ান-ছিঁটকে পড়লো জীবন চলমানতা থেকে।
ভার্সিটি ক্লাস কবে বন্ধ হয়ে গেছে। টিউশনিগুলির অবস্থাও তেমনি। লাইব্রেরির পাঠও নেওয়া হচ্ছে না-অনার্স শেষ করে ফাইনাল ইয়ারে এই ঘাপলা লেগে গেল-এখন কি করবে তন্ময়। দারুণ অস্বস্তিতে পড়ে।
বর্ষাকে নিয়ে একটা ছোট্ট সাজানো গোছানো স্বপ্ন হঠাৎ যেনো আটকে গেছে অতিমারির আক্রোশে। দুয়েক জায়গায় চাকরির চেষ্টায় ছিল-সেখানেও সংকট তৈরি হয়েছে। নতুন রিক্রুট নেই। সবাই পরিস্থিতির শিকার।
বর্ষা তন্ময়ের ঘোর ভাঙে। কি চুপ মেরে আছে যে। তোমার কি মনে হয় বল। তন্ময়ের চোখে চোখ বর্ষার।
তন্ময় কিছুই বলে না। বর্ষার কথা শোনে। শোনে-কোন দূর পথ থেকে কে একজন তাকে ডেকে যায় সে ধূসর পথ প্রান্তরের মানবীর মুখের আদল অবিকল যেনো বর্ষার মতো। হাত বাড়িয়ে দেয় তার দিকে। কিন্তু আশ্চর্য-সে হাত ছোঁয়া হয় না কেন জানি তন্ময়ের আঁকড়ে ধরা হয় না সে মানবীকে। কী বিভ্রমে পড়ে তন্ময়।
তন্ময়ের চারদিকে যেনো গহিন ভাঙনের শব্দ। সব কিছু যেনো ভেঙেচুরে গুঁড়িয়ে যাচ্ছে। বৈশ্বিক এই মহামারি তাদের দুজনের এতটুকু ছোটখাটো স্বপ্নকে কোন টর্নেডোর মতো লণ্ডভণ্ড করে দিচ্ছে-হারিয়ে দিচ্ছে দু’জনকেই।
তন্ময় এক সময় সেই বিশাল ভাঙচুরের মুখোমুখি দাঁড়ায়। ভেঙে পড়ে না। গভীর মমতায় বর্ষার দু’হাত হাতে নেয়। বর্ষা আমরা অতিমারির কাছে হারব না। জীবন তো আমাদের। দেখো আমরা বৈপরীত্যকে জয় করবে।
বর্ষা তন্ময়ের বুকে গভীর নিশ্চিন্তে মুখ লুকোয়। সন্ধ্যা নেমে আসছে। তন্ময়-বর্ষা এক অপার বোধ বিশ্বাস নিয়ে পথে নামে। যেনো এক দিকচিহ্নহীন প্রশ্নের মুখোমুখি তারা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআশির দশকের চট্টগ্রাম কলেজে রাজনীতি ও সাহিত্য-সংস্কৃতি
পরবর্তী নিবন্ধআমিন জুট মিল শ্রমিকদের অবস্থান কর্মসূচি