জাল টাকা ছড়াচ্ছে উপজেলায়ও

ঈদকে ঘিরে সক্রিয় অসাধু চক্র

ঋত্বিক নয়ন | শুক্রবার , ২৯ মার্চ, ২০২৪ at ৫:৩৩ পূর্বাহ্ণ

ঈদকে ঘিরে চট্টগ্রামে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে জাল টাকার নোট তৈরির অসাধু চক্র। এই চক্র আগে কেবল নগরীতে সক্রিয় থাকলেও এখন ছড়িয়ে পড়েছে উপজেলা পর্যায়েও। বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হয়ে জাল নোটের কারবার করছে বেশ কিছু চক্র।

প্রশাসনের তথ্য মতে, এ কারবারে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হলেও ৮০ শতাংশই জামিনে মুক্তি পেয়ে পরবর্তী সময়ে আবারো নিয়োজিত হচ্ছে জাল নোটের ব্যবসায়। ঈদ এলেই তাদের সিন্ডিকেট সারা দেশে সক্রিয় হয়ে ওঠে।

সর্বশেষ গত ২৩ মার্চ জাল নোটসহ চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তাররা হলো, মো. মনিরুল আলম (৪৭), মো. হারুনুর রশিদ (৩৪) ও মো. মাসুদ আলম প্রকাশ চৌধুরী (৩৫)। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতোয়ালী থানার এসআই মিজানুর রহমান চৌধুরী আজাদীকে বলেন, গত ২৩ মার্চ গোপন খবরের ভিত্তিতে নগরীর স্টেশন রোড এলাকা থেকে মনিরুল আলম ও হারুনুর রশিদকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের হেফাজত থেকে ১ লাখ টাকার জালনোট ও জালনোট কেনাবেচার কাজে ব্যবহৃত ৪টি মোবাইল উদ্ধার করা হয়। পরে তাদের তথ্যমতে মো. মাসুদ আলম চৌধুরী নামে আরও এক আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার তিনজন একই চক্রের সদস্য। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত তাদের ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তিনি আরও বলেন, জাল নোটগুলোগুলো ঢাকা থেকে সংগ্রহ করে চট্টগ্রামে সরবরাহ করেন তারা।

সিএমপির দক্ষিণ জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার নোবেল চাকমা বলেন, চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত ধরা পড়া জাল টাকা চক্রের বেশির ভাগই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসে এখানে এসব টাকা ছড়িয়ে আবার সটকে পড়ছে বলে তথ্য মিলেছে। তবে কিছু কিছু চক্র আছে যারা জাল টাকা তৈরির সরঞ্জাম নিয়ে ভ্রাম্যমাণ অবস্থায় থাকে। হোটেলে অবস্থান করে। এ সিন্ডিকেটে নারী সদস্যও রয়েছে। প্রতিটি স্তরেই ওই সিন্ডিকেটের নারী সদস্য সক্রিয় রয়েছে। কখনো গৃহিণী, কখনো কলেজছাত্রী সেজে জাল টাকা বহন করে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে দিচ্ছে তারা। আবার তাদের মাধ্যমেই পণ্য কেনাকাটা করে মার্কেটে জাল টাকার বিস্তার ঘটানো হয়। সেজন্য তাদের দেয়া হয় বিপুল অঙ্কের কমিশন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, জাল টাকা লেনদেনে আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন নগরীর সাধারণ ক্রেতাবিক্রেতা ও জনসাধারণ। অভিযোগ মিলছে নগরীর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেই বেশি। ভ্রাম্যমাণ হকার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের হাতে দুষ্টুচক্র আলো আঁধারিতে এ ধরনের টাকা ধরিয়ে দিচ্ছে। নগরীর ব্যাংকসমূহ এবং বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে জাল টাকা দ্রুত শনাক্তের মেশিন রয়েছে। কিন্তু ক্ষুদ্র ও ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরা নগরীর নানা প্রান্তে পণ্য বেচাকেনার সময় দ্রুত লেনদেনে জাল টাকা গ্রহণ করে প্রতারিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এই ধরনের পরিস্থিতিতে পুলিশের কাছে বিষয়টি অবগত করতে গেলে নানা জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হয় বলে প্রতারিত ব্যক্তি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা তাদের এই বিড়ম্বনার কথা প্রায়শই চেপে যাচ্ছেন।

এদিকে জাল নোটের এই অবৈধ কারবারিদের হাত থেকে ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষকে রক্ষা করতে প্রতিবারের মতো এবারো উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাদের সচেতনতার অংশ হিসেবে দেশের ৫৬টি বাণিজ্যিক ব্যাংককে আসল নোটের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যসংবলিত ভিডিওচিত্র প্রদর্শনের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। জাল টাকা তৈরিকারী চক্রের এক সদস্য জানিয়েছেন, অধিক লাভের আশায় তারা সাধারণত ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বেশি জাল করে থাকে।

জানা গেছে, উৎপাদকের এক লাখ টাকা তৈরি করতে খরচ হয় সাত থেকে ১০ হাজার টাকা। তারা পাইকারি বিক্রেতার কাছে এক লাখ টাকা ১৪১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে। পাইকারি বিক্রেতা প্রথম খুচরা বিক্রেতার কাছে বিক্রি করে ২০২৫ হাজার টাকা, প্রথম খুচরা বিক্রেতা দ্বিতীয় খুচরা বিক্রেতার কাছে বিক্রয় করে ৪০৫০ হাজার টাকায় এবং দ্বিতীয় খুচরা বিক্রেতা মাঠপর্যায়ে সেই টাকা আসল এক লাখ টাকায় বিক্রি করে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাঙ্গুনিয়ায় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে গোয়ালঘর থেকে পাঁচটি গরু লুট
পরবর্তী নিবন্ধএলডিসি থেকে উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন : প্রধানমন্ত্রী