জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযান চালু রাখতে হবে

| বৃহস্পতিবার , ৩০ মার্চ, ২০২৩ at ৬:০১ পূর্বাহ্ণ

ব্রয়লার মুরগির বাজার আজ অনেকদিন ধরে অস্থির। দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, গত শুক্রবার প্রথম রমজানের দিন নগরীর বিভিন্ন এলাকায় মুরগি বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ২৬০ থেকে ২৭০ টাকায়। তবে দুই দিনের ব্যবধানে সেই চিত্র পাল্টেছে। গত দুই দিনের ব্যবধানে মুরগির দাম কেজিতে কমেছে সর্বোচ্চ ৮৫ টাকা পর্যন্ত। এতে ভোক্তাদের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে।

আসলে ভোক্তাদের মধ্যে স্বস্তি এখনো এসেছে বলে মনে হয় না। আমিষের সস্তা উৎস হিসেবে পরিচিত ব্রয়লার মুরগির মূল্যবৃদ্ধিকে অস্বাভাবিক মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। কেননা, এ বছরের জানুয়ারিতেও যে ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল কেজিপ্রতি ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, মার্চ নাগাদ তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৫০ থেকে ২৭০ টাকা। এভাবে মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে কেজিতে ১০০ টাকারও বেশি দাম বাড়ার কারণে বিপাকে পড়ে যান নিম্ন আয়ের মানুষ। বাজার বিশ্লেষকরা বলেন, ‘ব্রয়লার মুরগির এ অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির পেছনে ব্যবসায়ীরা মুরগির বাচ্চা, খাদ্য এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিকে দায়ী করলেও শুধু এসব উপাদানের মাধ্যমে দুই মাসে এই রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধির সন্তোষজনক ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। সরকারি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের দেওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী, মুরগির খাবারসহ অন্যান্য সব ব্যয় বাড়ার পরও এক কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদনব্যয় করপোরেট প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা। অন্যদিকে প্রান্তিক খামারি পর্যায়ে খরচ ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা।’

বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাজারে মুরগি ও ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ার পেছনে রয়েছে মধ্যস্বত্বভোগীদের কারসাজি। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর পরই বাজারে অল্প সময়ের জন্য সরবরাহ ঘাটতি তৈরি হয়। এরপর ঘটে এটির চেইন রিঅ্যাকশন।

সারা দেশে ডিম ও মুরগির দাম চড়ে যাওয়ার নেপথ্যে পরিবহন সংকটকে চিহ্নিত করা হয়। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সরকারি ঘোষণার পর ভাড়া বাড়ানোর পাঁয়তারা যুক্ত হয়। এতে গোটা দেশে খবর ছড়িয়ে পড়ে সরবরাহ সংকট। এ সুযোগ কাজে লাগায় মধ্যস্বত্বভোগী আড়তদার, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা ও অনৈতিক বাড়তি মুনাফার চেষ্টায় প্রথম দফায় এই মধ্যস্বত্বভোগীরা যার যার আগের মজুত থেকেই দাম বাড়ানোর চেষ্টা করেন। অন্যদিকে খামারিরা পরিবহন সংকটে সরবরাহ দিতে না পেরে প্রথম দিকে কিছুটা ক্ষতির মুখে পড়লেও বাজারে দাম বাড়ার ফায়দা পরে তারাও নিতে শুরু করেন।

বর্তমানে যে কিছুটা কমেছে এবং ভোক্তাদের মনে কিছুটা স্বস্তি এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তার কারণ হলো জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের তৎপরতা। সম্প্রতি রাজধানীর কারওয়ান বাজারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কনফারেন্স হলে ব্রয়লার মুরগির দাম নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে তিনি জানান, কাজী ফার্ম, সিপি, প্যারাগন ও আফতাব ফার্মের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। কোম্পানিগুলো ২৩ মার্চ পর্যন্ত প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২৩০ টাকা করে মিলগেটে বিক্রি করেছে। তারা বৈঠকে আমাদের জানিয়েছেন, ২৪ মার্চ থেকে ১৯০১৯৫ টাকায় বিক্রি করবে। আশা করছি ভোক্তা পর্যায়ে এখন দাম ৩০৪০ টাকা কমবে। মজার ব্যাপার, খুচরায় এখন মুরগি বিক্রি হচ্ছে আরো কম দামে, অর্থাৎ ১৭০ টাকায়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, আরো কম দামে তারা বিক্রি করলেও লোকসান হবে না। জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযানের কথা শুনে দাম কমাতে বাধ্য হয় তারা।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পরিবেশ ও উন্নয়ন অর্থনীতিবিষয়ক লেখক কল্লোল মোস্তফা তাঁর এক লেখায় লিখেছেন, আসলে মুরগির বাজারের এ অরাজকতার সমস্যা কাঠামোগত। এ জন্য প্রান্তিক খামারি ও ভোক্তাদের স্বার্থের কথা মাথায় রেখে সুনির্দিষ্ট আইন ও নীতিমালার মাধ্যমে পোলট্রি শিল্পে প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে, যেন মুরগির খাদ্য, বাচ্চা, ডিম, মাংস উৎপাদনের নিয়ন্ত্রণ গুটিকয়েক কোম্পানির হাতে যেতে না পারে। সেই সঙ্গে পোলট্রিসহ পশুখাদ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামাল, যেমন ভুট্টা, সয়াবিন মিল ইত্যাদিতে আমদানিনির্ভরতা কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে, যেন আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে দেশীয় বাজারে অস্থিরতা তৈরি করা না যায়।

মোট কথা, ব্রয়লার মুরগির বাজার স্থিতিশীল রাখতে জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। কোনো অবস্থাতেই বাজারের রশি ঢিল দেওয়া যাবে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে