জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারী প্রার্থীর অংশগ্রহণ : পরিস্থিতি ও প্রত্যাশা

উম্মে সালমা | শনিবার , ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ at ৯:০১ পূর্বাহ্ণ

দ্রুত এগিয়ে আসছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন। রাজনৈতিক দলগুলোতে এ নিয়ে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। চলছে শেষ মুহূর্তের হিসাবনিকাশ, সংসদের তিনশ’টি আসনের জন্য প্রার্থীতা বাছাইয়ের তোড়জোড়। এর মধ্যে নারী প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ কতটা প্রাধান্য পাচ্ছে? আলোচনার স্বার্থেই একটা পরিসংখ্যান উপস্থাপন করছি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট এক হাজার আটশত আটচল্লিশ জন প্রার্থীর মধ্যে স্বতন্ত্রসহ মোট ঊনসত্তর জন নারী প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেন। যা মোট প্রার্থীর প্রায় চার শতাংশ মাত্র! তার মানে বাকি ছিয়ানব্বই শতাংশ প্রার্থীই পুরুষ। একাদশ সংসদে তিনশ আসনের বিপরীতে ওই ঊনসত্তর জন নারী প্রতিনিধির মধ্যে সরাসরি নির্বাচিত হন মাত্র বাইশ জন নারী সাংসদ (সংরক্ষিত পঞ্চাশটি আসন বাদে) যা মোট আসনের মাত্র সাত সতাংশ! আবার আমাদের মন্ত্রী সভায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সহ সাকূল্যে চার জন নারী মন্ত্রী।

রাজনীতিতে বা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ নিয়ে তাহলে কী ভাবছেন নারীরা? সমাজের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার নারীদের কাছে মতামত জানতে চাইলে তারা জানান

এটার প্রধান কারণ হচ্ছে আমাদের সমাজ। কারণ সমাজে মনে করা হয় নারীরা সংসদের মতো জায়গায় গিয়ে নেতৃত্ব দিতে পারবে না।’

আমাদের সমাজটা পুরুষশাসিত সমাজ। তারা অবশ্যই চায় না নারীরা তাদের উপর রাজনীতি করুক।’

এখানে ক্ষমতার একটা ব্যাপার আছে। আমরা সবসময় ভাবি যে শুধু ছেলেদের মধ্যেই ক্ষমতা আছে মেয়েদের মধ্যে নেই।’

সামনাসামনি যাই বলুক না কেন আমাদেরকে তারা (পুরুষরা) কোন না কোনভাবে বুঝিয়ে দেয় যে রাজনীতি আসলে আমাদের (নারীদের) জন্য না।’

রাজনীতিতে আসার জন্য যে অনুপ্রেরণাটা আমাদের (নারীদের) পাওয়া দরকার, সেটা হোক ঘর থেকে বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে, সেটা আমরা পাই না।’

ফলে রাজনীতিতে, নির্বাচনে, মিছিলেমিটিংয়েনারীদের উপস্থিতি কম। প্রশ্ন হলো নারীর ক্ষমতায়নের এই সুবর্ণ সময়ে এসেও বিষয়টি এমন কেন? তারা উত্তর দেন

আমরা ছোটবেলা থেকেই বেড়ে উঠি ভয় নিয়ে, নানা কিছুতে ভয়। তাই আমাদের কাছে রাজনীতি মানেও ভয়!’

নারীদের মধ্যে এখনো সেই আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়নি যে তারা নিজেরা নিজেদের নিরাপদ রাখতে পারবে, তাই তারা রাজনীতির পথে পা বাড়ায় না।’

আমাদের দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ এখনো ওইরকম নারীবান্ধব হয়ে উঠে নাই বলে আমি মনে করি।’

রাজনীতি করলে মাঠেময়দানে আসতে হয়, মিটিংমিছিল করতে হয়। সেক্ষেত্রে দেখা যায় পরিবার থেকে অনেক সমস্যা করে।’

যেখানে ছেলেরাই রাজনীতিতে নানান ধরনের হুমকির সম্মুখীন হয় সেখানে মেয়েরা তো আরো বেশি ভালনারেবল!’

তাহলে নির্বাচনে নারী প্রার্থীর অংশগ্রহণ বাড়লে, সংসদে নারী সাংসদের সংখ্যা বাড়লে, মন্ত্রীসভায় নারী মন্ত্রীর সংখ্যা বাড়লে কি হবে? এ প্রসঙ্গেও তারা মতামত জানিয়েছেন

নারীদের মধ্যে অনেস্টি বা সততার পরিমাপটা একটু বেশি থাকে। ফলে তারা অধিক আসনে নির্বাচিত হতে পারলে এই সততার চর্চাটা বাড়বে, বেশি জায়গায় প্রভাব ফেলবে।’

একজন নারী যখন রাজনীতির পথে বের হবে তখন সে সবকিছু নিয়েই ভাববে। কারণ নারীরা যেমন বিচক্ষণ তেমনি সংবেদনশীল।’

সবকিছুতে এই যে ভয়ের একটা ব্যাপার সেটা নিশ্চয় কমে আসতো। তখন আমরা আরো সাহসের সাথে চলাফেরা করতে পারতাম।’

সংসদের মতো নীতিনির্ধারণের জায়গায় আমাদের হয়ে আমাদের মতো চিন্তা করার মানুষের সংখা কম। যদি নারী প্রার্থী আরো বাড়ত, আরো অধিক আসনে জয় লাভ করত তখন আমাদের জন্য ভাবার মানুষ বাড়ত, আমাদের সুযোগ সুবিধাগুলো আরো বাড়ত।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাতকানিয়ায় তাঁতী লীগ নেতা গুলিবিদ্ধের ঘটনায় মামলা
পরবর্তী নিবন্ধ১৯ বছর পালিয়ে থাকার পর যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার