জলোচ্ছ্বাস থেকে বাঁচতে আরও আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করতে হবে

| শনিবার , ২৯ এপ্রিল, ২০২৩ at ৫:৫০ পূর্বাহ্ণ

আজ ভয়াল ২৯ এপ্রিল। ১৯৯১ সালের এইদিনে বৃহত্তর চট্টগ্রামের উপকূল দিয়ে বয়ে গিয়েছিল ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস। সেদিন মধ্যরাতে আঘাতহানা এ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে গিয়েছিল চট্টগ্রামের আনোয়ারা, বাঁশখালী, সীতাকুণ্ড, মীরসরাই, সন্দ্বীপ এবং কক্সবাজারের মহেশখালী, কুতুবদিয়া, কক্সবাজার সদর, চকরিয়া ও পেকুয়াসহ উপকূলের ১৩টি উপজেলা। এতে প্রায় এক লাখ ৩৮ হাজার মানুষ নিহত এবং এক কোটি মানুষ তাদের সর্বস্ব হারিয়েছে।

লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছিল দেশের দক্ষিণপূর্বাঞ্চলীয় পুরো উপকূল। লাশের পরে লাশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল চারদিকে। বিস্তীর্ণ অঞ্চল পরিণত হয়েছিল ধ্বংস্তূপে। দেশের মানুষ সেদিন প্রকৃতির করুণ এ আঘাত প্রত্যক্ষ করে বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। সেদিন উপকূলে আঘাত হানা ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড়টির বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় প্রায় ২৫০ কিমি (১৫৫ মাইল/ঘণ্টা)। এর প্রভাবে সৃষ্ট ২০/৩০ ফুট) উঁচু জলোচ্ছ্বাসে সেদিন সরকারি হিসাবে আনুমানিক ১ লাখ ৩৮ হাজার ২৪২ জন মানুষ নিহত এবং প্রায় এক কোটি মানুষ আশ্রহীন হয়েছিলেন। মারা গিয়েছিল ২০ লাখ গবাদিপশু। ক্ষতি হয়েছিল ৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি সম্পদ।

শুধু দেশের দক্ষিণপূর্বাঞ্চলীয় পুরো উপকূল নয়, চট্টগ্রাম মহানগরীর সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চল পতেঙ্গা, হালিশহর, বন্দর, ইপিজেড, ডবলমুরিং ও কোতোয়ালীসহ বিস্তীর্ণ জনপদও লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়ে। সেই কালরাত্রির ধ্বংসযজ্ঞের বিভীষিকাময় এত বেশি ক্ষয়ক্ষতি এবং এত লাশের মিছিল চট্টগ্রামে আর কেউ কখনও দেখেছেন কিনা জানা যায় না। ২৯শে এপ্রিলের ভয়াল প্রাকৃতিক দুর্বিপাকে বিদ্যুৎবিহীন, পানিবিহীন, যোগাযোগবিহীন, ডায়রিয়া, কলেরা, আমাশয়, হাড়ভাঙা আক্রান্ত মানুষের করুণ আর্তনাদ ও বেঁচে থাকার আকুতিতে আকাশবাতাস ভারী হয়ে উঠেছিল।

উপকূলবাসী আজও ভুলতে পারেনি সেই রাতের দুঃসহ স্মৃতি। সেদিনের ভয়াল এই ঘটনা এখনও দুঃস্বপ্নের মতো তাড়িয়ে বেড়ায় উপকূলবাসীকে। নিহতদের লাশ আর স্বজন হারানোদের আর্তচিৎকার এখনো কানে বাজে তাদের। ভয়াবহ দুর্যোগের দুঃসহ স্মৃতি এখনো বয়ে বেড়াচ্ছে চট্টগ্রামের উপকূলের মানুষ।

প্রতি বছরই উপকূলীয় এলাকার স্বজন হারানো মানুষের মাঝে শোকের বার্তা নিয়ে ফিরে আসে ভয়াল ২৯ এপ্রিল। এই দিনে যারা নিজেদের প্রিয় মানুষ ও স্বজনদের হারিয়েছেন, যাদের সুন্দর স্বপ্নকে মুহূর্তের মাঝে লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছেতারা এই দিনটিতে নিহত স্বজনদের স্মরণ করেন নানা ধর্মীয় কর্মসূচি পালন করে।

৩২ বছর আগের এই দিনে মহাপ্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের আঘাতে বিলীন হয়ে গিয়েছিল চট্টগ্রামকক্সবাজারসহ বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকার প্রায় ২৫০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। সেই বাঁধের অগ্রগতি কী! সংশ্লিষ্টরা জানান, এখনো সম্পূর্ণ অরক্ষিত চট্টগ্রাম, কক্সবাজার উপকূল। বাংলাদেশের অন্যতম সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রামের বন্দর নগরীর পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী, আনোয়ারা, সীতাকুণ্ড, মিরসরাই, সন্দ্বীপ, কক্সবাজারের পেকুয়া, কুতুবদিয়া, মহেশখালীসহ উপকূলীয় এলাকার লোকজন এখনো রয়েছে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের আতংকে।

৯১ সালের এ ভয়াল রাতে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের এসব এলাকায় ব্যাপক প্রাণহানি ঘটলেও এখনো পর্যন্ত সেখানে নির্মিত হয়নি স্থায়ী বেড়িবাঁধ। অতীতে লক্ষ্য করা গেছে বাঁধ নির্মাণ ঘোর বর্ষাকালে জোয়ারের পানি ঠেকানোর নামে রিংবাঁধ নির্মাণ, মেরামত, সংস্কার ইত্যাদি নানা নামে প্রতি বছরই নেয়া হয় বিভিন্ন প্রকল্প। কিন্তু এসব প্রকল্পে ঘটে সরকারি বরাদ্দকৃত অর্থ নয় ছয় এর ঘটনা। কিন্তু উপকূলবাসীর মাবোনদের জীবনের ভাগ্য নিয়ে চলে নানান খেলা।

তাঁরা বলেন, বাঁশখালী উপকূলীয় এলাকার ভয়াবহ বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসলেও অদ্যাবধি কোনো ইতিবাচক খবর কর্তৃপক্ষ হতে আসেনি বলে এলাকাবাসী খুবই উদ্বিগ্ন এবং মহা আতংকে দিন কাটাচ্ছে।

পরিবেশবিদদের মতে, ‘বাংলাদেশ একটি আর্দ্রক্রান্তীয় অঞ্চলের দেশ যার উত্তরে হিমালয় এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। এ ভৌগোলিক অবস্থা বাংলাদেশকে জীবন ধারনের জন্য শুধু উষ্ণআর্দ্র আবহাওয়া ও মৌসুমী বায়ু দেয়নি, দিয়েছে জীবন ও সম্পদ ধ্বংসকারী ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো, বজ্রপাত, বন্যা, ভূমিকম্প এবং সুনামীর মতো দুর্যোগও। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম দুর্যোগপ্রবণ দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। তাঁরা বলেন, বিভিন্ন গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ২০৫০ এবং ২১০০ সালে যথাক্রমে ৩২ এবং ৮৮ সে.মি সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে। যার ফলশ্রুতিতে জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা ২৩ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। যদি এটা সত্য হয়, ভবিষ্যতে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাস থেকে বাঁচতে আরও অতিরিক্ত আশ্রয়কেন্দ্রের প্রয়োজন হবে। তাঁরা উপকূলীয় এলাকার নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে বেড়িবাঁধ রক্ষার উপরও জোর দেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে