জলাবদ্ধতা নিরসনে তিন বছরে এসেছে ২,২৪৮ কোটি টাকা

৫,৬০০ কোটি টাকার মেগা প্রকল্প

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২৩ মে, ২০২২ at ৫:৪০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে তিন বছরে এসেছে ২ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা। ৫ হাজার ৬শ’ কোটি টাকার প্রকল্পটির জন্য আগামী জুনের মধ্যে সর্বমোট ২৬শ’ কোটি টাকা সিডিএর তহবিলে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। টাকার সংকটে প্রকল্পটির প্রয়োজনীয় ভূমি অধিগ্রহণও ঝুলে রয়েছে। এতে করে নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করা এবং জলাবদ্ধতা নিরসনের সুফল পুরোপুরি পাওয়াটা অনিশ্চিত হয়ে রয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের গৃহীত ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সমপ্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার এই মেগাপ্রকল্পটি ২০১৭ সালের আগস্টে একনেকে অনুমোদন পায়। তবে এর কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালে।

গতকাল পর্যন্ত তিন বছরে প্রকল্পটির জন্য অর্থ পাওয়া গেছে ২ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা। আগামী মাসে এই প্রকল্পের জন্য চলতি অর্থবছরের শেষ ভাগের অর্থ ছাড়ের কথা রয়েছে। ওই অর্থগুলো পাওয়া গেলে আগামী জুন পর্যন্ত প্রকল্পটিতে টাকা পাওয়া যাবে সর্বমোট ২ হাজার ৬শ’ কোটি টাকা। মেগা প্রকল্পটির ব্যয় ইতোমধ্যে এক দফা বাড়ানো হয়েছে। এতে প্রকল্প ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। প্রায় সাড়ে নয় হাজার কোটি টাকার বাড়তি ব্যয়ের প্রস্তাব পাঠানো হলেও এখন পর্যন্ত তার অনুমোদন মিলেনি। প্রকল্পটিতে বেশির ভাগ অর্থ চলে যাচ্ছে ভূমি অধিগ্রহণে। ৫ হাজার ৬শ’ কোটি টাকার মধ্যে ৩ হাজার ২শ’ কোটি টাকা অবকাঠামোগত নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল। বাকি ২ হাজার ৪শ’ কোটি টাকা ছিল ভূমি অধিগ্রহণ ব্যয়। মৌজা রেটের দেড়গুণ দর ধরে উক্ত টাকা হিসাব করা হয়েছিল। পরবর্তীতে সরকারি নীতি পরিবর্তন করা হলে ভূমি অধিগ্রহণে ব্যয় মৌজা রেটের তিনগুণ করা হয়।

এতে করে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণের ব্যয় দ্বিগুণে উন্নীত হয়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ৮শ’ কোটি টাকা। এর মধ্যে খালের পাড়ে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ কাজের আগে ভূমি অধিগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। কিন্তু চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ অর্থের অভাবে প্রয়োজনীয় ভূমি অধিগ্রহণ করতে পারছে না। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ৯টি এলএ কেসের মাধ্যমে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের নিকট প্রস্তাব পাঠায়। প্রচলিত নিয়মে এলএ কেসের প্রাক্কলন তৈরির ৬০দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় ভূমির মূল্য জেলা প্রশাসনের এলএ শাখায় জমা দিতে হয়। যদি ৬০ দিনের মধ্যে টাকা জমা দেয়া না হয় তাহলে ওই এলএ কেস বাতিল হয়ে যায়, ভূমি অধিগ্রহণ সম্ভব হয় না। জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের প্রয়োজনীয় অর্থ না থাকায় ৯টি এলএ কেসই ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। করা যাচ্ছে না প্রাক্কলন। কারণ প্রাক্কলন ঘোষণা করা হলে মূল্য পরিশোধের যে বাধ্যবাধকতা তা দেয়ার মতো অর্থ সিডিএর হাতে নেই। ভূমি অধিগ্রহণ ঝুলে থাকায় প্রকল্পের কাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলেও সূত্র জানিয়েছে।

সূত্র বলেছে, প্রকল্পটির কাজ ২০২২ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। অথচ জুন পর্যন্ত সময়ে প্রকল্পের অর্ধেক টাকাও পাওয়া যায়নি। এতে করে প্রকল্পটির কাজের মেয়াদ এবং ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হচ্ছে। ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা, প্রয়োজনীয় অর্থের যোগানসহ বিভিন্ন প্রতিকূলতায় প্রকল্পটির কাজ শেষ না হওয়ায় নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সুফল মিলছে না বলেও সূত্রগুলো মন্তব্য করেছে।

বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী হাসান বিন শামসের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবের কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ভূমি অধিগ্রহণের ব্যাপারটি আমরা দুই বছরেও যদি শেষ করতে চাই তবুও আমাদের একই সাথে অন্তত দুই হাজার কোটি টাকা দরকার। অথচ আমরা তিন বছরে পেয়েছি ২৬শ’ কোটি টাকা। টাকার অভাবে ভূমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় আমাদেরকে নানাভাবে চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅঞ্চল ভিত্তিক যথাযথ উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
পরবর্তী নিবন্ধ‘মাঙ্কিপক্স’ নিয়ে দেশের সব বন্দরে সতর্কতা