জমজমাট বিতর্ক, উজ্জ্বল সমাপনী

দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনেই সম্ভব নারীর অগ্রযাত্রা : তথ্য সচিব ।। বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রে সরকারের সুদৃষ্টি চান আজাদী সম্পাদক

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৬:০২ পূর্বাহ্ণ

তথ্য ও সমপ্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মকবুল হোসেন বলেছেন, দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারীকে পেছনে ফেলে দেশকে এগিয়ে নেওয়া অসম্ভব। সর্বক্ষেত্রে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের মাধ্যমে নারীর অগ্রযাত্রা সম্ভব। রাষ্ট্র ও জনগণের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে নারীর এগিয়ে যাওয়ার পথ সুগম হবে। শুধুমাত্র রাষ্ট্রীয় কাঠামোর আইন দ্বারা এই পরিবর্তন সম্ভব নয়।
গতকাল শনিবার সকালে চট্টগ্রাম থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্র আয়োজিত প্রথম আন্তঃকলেজ জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, আমাদের দেশে নারী নির্যাতন ও যৌতুক বিরোধী আইন অনেক আগে হয়েছে। কিন্তু আইনের প্রয়োগের ক্ষেত্রে আমরা অতটা অগ্রসর হতে পারিনি। রাষ্ট্র আইন তৈরি করেছে, কিন্তু এটাকে জনগণের কল্যাণে পৌঁছে দেওয়ার জন্যে মানুষের মাঝে যে পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করা দরকার সেটা করতে আমরা অতটা অগ্রসর হইনি। এজন্য আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক সোহরাব হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক, একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আহমেদ ইকবাল হায়দার ও বিটিভির উপ-মহাপরিচালক (বার্তা) অনুপ খাস্তগীর। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার নিতাই কুমার ভট্টাচার্য। এর আগে প্রথম আন্তঃকলেজ জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। ‘সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিই নারীর এগিয়ে যাওয়ার পথে প্রধান অন্তরায়’ বিষয়ের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে ঢাকা নটরডেম কলেজ দল। বিপক্ষে ছিল চট্টগ্রাম ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ দল। আজাদী সম্পাদক এম এ মালেকের সভাপতিত্বে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন কথাসাহিত্যিক বাদল সৈয়দ, প্রাক্তন বিতার্কিক ও উপ-পুলিশ কমিশনার বিজয় বসাক এবং প্রাক্তন বিতার্কিক ও সাংবাদিক মাহফুজ মিশু।
বিতর্ক প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠান তত্ত্বাবধানে ছিলেন বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের প্রোগ্রাম ম্যানেজার রোমানা শারমীন ও সাহরিয়ার মোহাম্মদ হাসান। অনুষ্ঠানটি প্রযোজনা করেন বিটিভির নির্বাহী প্রযোজক ইলন সফির। প্রতিযোগিতায় ৮০.১ পয়েন্ট পেয়ে বিজয়ী হয়েছে ঢাকা নটরডেম কলেজ দল। ৭৯.১৬ পয়েন্ট পেয়ে রানার্সআপ হয়েছে ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ দল। শ্রেষ্ঠ বক্তা নির্বাচিত হয়েছেন নটরডেম কলেজের দলনেতা আবিদ মাহমুদ।
দ্বিতীয় পর্বে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তথ্য সচিব মকবুল হোসেন বলেন, ঢাকায় বসে আমি শুনি, চট্টগ্রাম টেলিভিশন কেন্দ্র পাল্টে গেছে। ভালো মানের অনুষ্ঠান হচ্ছে। তিনি বলেন, বিতর্ক প্রতিযোগিতায় শুধু জেতা নয়, যারা সাহস করে বিতর্কে অংশগ্রহণ করেন, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। অংশগ্রহণকারী প্রত্যেকটা টিম বিষয়ভিত্তিক অনেক লেখাপড়া করেছে। এর মধ্য দিয়ে তোমাদের অনেক জ্ঞান অর্জন হয়েছে। পাশাপাশি তোমাদের দৃষ্টিভঙ্গিরও একটা পরিবর্তন এসেছে। তোমাদের ভেতরে একটা আইডিয়া ডেভেলপ করেছে।
তিনি বলেন, দৃষ্টিভঙ্গি যদি পৃথিবীতে না থাকত তাহলে যুগে যুগে সৃষ্টিকর্তা যেসব ধর্ম প্রচারককে পাঠিয়েছেন তারা ধর্ম প্রচার করে মানুষকে সৎ এবং ভালো পথে নিয়ে আসতে পারতেন না। এটার ফাউন্ডেশন হলো মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি।
দুই দলের বিষয়বস্তুর ওপর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন অত্যন্ত ভালো হয়েছে উল্লেখ করে তথ্য সচিব বলেন, বিতর্কের সময় ও নিয়ম কানুন সুনির্দিষ্ট। আজকের বিতর্ক পাঁচ মিনিটের পরিবর্তে দশ মিনিট হলে বিতার্কিকদের পটেনশিয়ালিটি দেখানোর সুযোগ আরও বেশি থাকত এবং আমরা বেশি উপকৃত হতাম। তিনি বলেন, আমাদের সমাজের পুরুষদের মাঝে একটা পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গি আসছে বলেই আজকে নারীরা এত উন্নতি করছে এবং রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন।
বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক সোহরাব হোসেন বলেন, আমরা সমুদ্রসীমার ক্ষেত্রে বিজয় লাভ করতে পেরেছি তথ্য প্রমাণ উপস্থাপনের মাধ্যমে। আজকে যারা বিজয়ী হয়েছেন তারাও তথ্য প্রমাণ ও যুক্তি তর্কের মাধ্যমে জয়ী হয়েছেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র দৈনিক আজাদী সবসময় চট্টগ্রামের মাটি ও মানুষের কথা বলেছে। গত ৬২ বছর ধরে দৈনিক আজাদী এই অঞ্চলের শিক্ষা, সংস্কৃতির বিকাশসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য কাজ করেছে।
বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের ২৫ বছর পূর্তি হতে যাচ্ছে জেনে নিজের উচ্ছ্বাসের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তিন ঘণ্টা থেকে ছয় ঘণ্টা, বারো ঘণ্টা হয়ে এখন চট্টগ্রাম কেন্দ্র থেকে ১৮ ঘণ্টার অনুষ্ঠান সম্প্রচার হচ্ছে। এটি ২৪ ঘণ্টায় উন্নীত হবে। স্যাটেলাইটের এই যুগে পুরো পৃথিবী থেকে চট্টগ্রামের অনুষ্ঠান দেখা যাচ্ছে। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের ব্যাপার। আমাদের সংস্কৃতি বিকাশের ক্ষেত্রে অনেক বড় পাওনা। তিনি চট্টগ্রাম টেলিভিশন কেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ এবং অনুষ্ঠানের মান বৃদ্ধি করার প্রয়োজনীয় সহায়তার জন্য তথ্য সচিবের প্রতি অনুরোধ জানান। চট্টগ্রাম টেলিভিশন কেন্দ্র প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত একটি স্থানে অবস্থিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারের সুদৃষ্টি পেলে সুন্দর এই টেলিভিশন কেন্দ্র থেকে অনেক সুন্দর সুন্দর অনুষ্ঠান তৈরি ও সম্প্রচারিত হবে।
এর আগে অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে বিতর্ক প্রতিযোগিতার সভাপতির বক্তব্যে আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেন, বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্র থেকে প্রথমবারের মতো আন্তঃকলেজ জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং ভবিষ্যতে এ ধারাবাহিকতা রক্ষা হবে। তিনি বলেন, দুই দলই অত্যন্ত ভালো বক্তব্য উপস্থাপন করেছে। যুক্তিতর্ক দেখিয়েছে। তিনি ‘নিউজ’ শব্দটির ‘এন ই ডব্লিউ এস’ চারটি অক্ষরের এব্রিভিয়েশন প্রথমে বলতে পারায় ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ দলের দলনেতা অরিত্রকে তাৎক্ষণিকভাবে পাঁচশ টাকা প্রদান করেন। অনুষ্ঠান শেষে টেলিভিশন থেকে দেওয়া সম্মানীর অর্থও তিনি বিতার্কিকদের মিষ্টি খাওয়ার জন্য দিয়ে দেন।
উল্লেখ্য, সারা দেশের ৪৮টি কলেজ এই বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের একদল প্রাক্তন বিতার্কিক, বিতর্ক প্রশিক্ষক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব বিভিন্ন পর্বে বিচারকার্যের দায়িত্ব পালন করেন। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ বিতর্ক পর্বগুলোতে সভাপতিত্ব করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাফসানের পর মারা গেলো পিয়ামও
পরবর্তী নিবন্ধবান্দরবানে ভ্রমণকারীদের গাড়িতে পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের গুলি