ছয় লেনের স্বপ্নের মাতামুহুরী সেতু দৃশ্যমান

চলছে এপ্রোচ সড়ক নির্মাণ মার্চেই শেষ হবে শতভাগ কাজ

চকরিয়া প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৫:৪১ পূর্বাহ্ণ

দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে স্বপ্নের মাতামুহুরী সেতুসহ চট্টগ্রামকক্সবাজার মহাসড়কের চারটি নদীর ওপর ৭৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ছয় লেনের চারটি সেতুর মধ্যে তিনটি। নির্মাণ কাজ শেষে বর্তমানে মাতামুহুরী, সাঙ্গু ও বরগুনি সেতুর দুইদিকের সংযোগ তথা এপ্রোচ সড়ক তৈরির কাজ এগিয়ে চলছে দ্রুতগতিতে। ইন্দ্রপুল সেতুর কাজ শেষ না হলেও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে এরও নির্মাণ কাজ।

জানা গেছে, ব্যস্ততম চট্টগ্রামকক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার চিরিঙ্গায় ৩২১ মিটার দীর্ঘ ও ১৫.১ মিটার প্রস্থের ছয় লেনের মাতামুহুরী সেতুর মধ্যে বাকি তিন লেনের কাজও পুরোপুরি সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে চলছে সেতুটির দুই প্রান্তের এপ্রোচ সড়ক নির্মাণের কাজ। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী মার্চ মাসের মধ্যেই মাতামুহুরী সেতুর দুই প্রান্তে ২৭৫ মিটার করে এপ্রোচ সড়ক নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার তোড়জোড় চালানো হচ্ছে।

উল্লেখ্য, তিন লেনের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ায় ২০২১ সালের নভেম্বর মাসের শুরুতেই যানবাহন চলাচলের জন্য প্রাথমিকভাবে খুলে দেওয়া হয়। তিন লেন দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরুর পর পরই ভেঙে ফেলা হয় পুরনো দুই লেনের জরাজীর্ণ সেতুটি। ওই স্থানে কাজ শুরু করা হয় বাকি তিন লেনের নির্মাণকাজ।

এদিকে চট্টগ্রামকক্সবাজার মহাসড়কে ছয় লেন করে বাকি তিনটি সেতুর মধ্যে চন্দনাইশের বরগুনি, দোহাজারীর সাঙ্গু সেতুর নির্মাণ কাজও পুরোপুরি সম্পন্ন হয়েছে ইতোমধ্যে। তবে এখনো কাজ চলমান রয়েছে পটিয়ার ইন্দ্রপুল সেতুর। এই বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের ক্রস

বর্ডার রোড ইমপ্রুভমেন্ট নেটওয়ার্কের নির্বাহী প্রকৌশলী এবং প্রকল্প ব্যবস্থাপক জুলফিকার আহমেদ গতকাল দৈনিক আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রামকঙবাজার মহাসড়কের চারটি সেতুর মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ শুরু করা হয় ছয় লেনের মাতামুহুরী সেতুর। ইতোমধ্যে সেতুটির বাকি তিন লেনের কাজও পুরোপুরি সম্পন্ন হয়ে গেছে। বর্তমানে চলছে সেতুর দুইদিকের সংযোগ (এপ্রোচ) সড়ক নির্মাণের কাজ। আগামী মার্চের মধ্যেই এপ্রোচ সড়ক নির্মাণকাজও পুরোপুরি সম্পন্ন হবে বলে আশা করছি।

প্রকল্প ব্যবস্থাপক বলেন, মহাসড়কটিতে ছয় লেন করে চারটি সেতুর মধ্যে শুধুমাত্র পটিয়ার ইন্দ্রপুল সেতুর বাকি তিন লেনের কাজ কিছুটা অসম্পূর্ণ রয়েছে। সেটির কাজও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। বাকি তিন সেতুর মধ্যে মাতামুহুরী, সাঙ্গু ও বরগুনি সেতুর মূল নির্মাণকাজ শতভাগ শেষ হয়ে গেছে। বর্তমানে এপ্রোচ সড়ক নির্মাণকাজ চলছে। এসব কাজ সম্পন্ন হলেই সুবিধাজনক সময়ে সেতুগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্য দিয়েই ছয় লেনেই যানবাহন চলাচল শুরু হবে।

সওজ এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্পেক্ট্রা ইন্টারন্যাশনালের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা দৈনিক আজাদীকে বলেন, ছয় লেনের সেতুগুলোর মধ্যে মাঝখানের চার লেনে চলাচল করবে দূরপাল্লার ও দ্রুতগতির যানবাহন। বাকি দুই লেন দিয়ে চলবে ধীরগতির তথা স্থানীয় যানবাহন। এছাড়া এই দুই লেনে (উভয় পাশে) ফুটপাত হিসেবে ব্যবহারের জন্য এক মিটার করে উন্মুক্ত থাকবে। তিনি জানান, ডিজাইন অনুযায়ী ছয় লেনের মাতামুহুরী সেতুর দৈর্ঘ্য ৩২১ মিটার। পূর্ব প্রান্তে মহাসড়কের জিদ্দাবাজার পর্যন্ত (কাকারা রাস্তার মাথা) এবং পশ্চিম প্রান্তে সড়ক ও জনপথ বিভাগ কার্যালয় পর্যন্ত এই সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। ছয় লেনের মাতামুহুরী মূল সেতুর প্রস্থ রয়েছে ৩০ দশমিক ২ মিটার। সেতুটির তিন লেনের ১৫ দশমিক এক মিটারে ধীরগতির স্থানীয় যানবাহনের জন্য ৩ দশমিক ৬ মিটার এবং ফুটপাত রয়েছে ১ মিটার। বাকি মিটারে নির্ধারিত রয়েছে দ্রুত গতির দুই লেন। এছাড়াও সেতুটির দুইপ্রান্তের নিচে নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজও শেষ হয়েছে ৯০ শতাংশ। বাকি কাজও দ্রুতগতিতে এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

এই বিষয়ে কঙবাজার১ আসনের সংসদ সদস্য ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলম দৈনিক আজাদীকে বলেন, স্বপ্নের এই মাতামুহুরী সেতুর দুইদিকের এপ্রোচ সড়ক পুরোপুরি নির্মাণকাজ সম্পন্নের মধ্য দিয়ে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। এজন্য সুবিধাজনক সময়ে প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে এই সেতুর শুভ উদ্বোধন করবেন। অবশ্য সেতুটির তিন লেনের কাজ সম্পন্ন হওয়ায় ২০২১ সালের নভেম্বর মাসের শুরুতে প্রাথমিকভাবে উন্মুক্ত করা হয় যানবাহন চলাচলের জন্য। এতে চকরিয়া পৌর শহরের বাণিজ্যিক কেন্দ্র চিরিঙ্গায় দূরপাল্লার যানবাহনের চাপ অনেকাংশে কমে আসে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশিক্ষার্থীদের থাকতে হবে জীবন সাজানোর স্বপ্ন
পরবর্তী নিবন্ধচার দেশের অনারারি কনসাল এক পরিবারে