শিক্ষার্থীদের থাকতে হবে জীবন সাজানোর স্বপ্ন

মহামুনিতে অনিরুদ্ধ মেমোরিয়াল ট্রাস্টের অনুষ্ঠানে এম এ মালেক

রাউজান প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৫:৪১ পূর্বাহ্ণ

একুশে পদকপ্রাপ্ত দৈনিক আজাদী সম্পাদক লায়ন এম এ মালেক বলেছেন, একুশ মানে মাথা নত না করা। আর এই মাথা নত না করার শিক্ষাটা আমি বাবার কাছ থেকে পেয়েছিলাম। আমার বাবা ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক একুশের প্রথম কবিতা হিসেবে রচিত মাহবুবউল আলম চৌধুরীর ‘কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’ ছাপিয়ে দিয়ে মাথা নত না করার শিক্ষাটা দিয়ে গিয়েছিলেন।

মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ও দৈনিক আজাদী মাথা নত করেনি। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র হিসেবে বছরের পর বছর দৈনিক আজাদী মাথা উঁচু করে চট্টগ্রামের মানুষের কথা বলেছে। তিনি বলেন, আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া হচ্ছে একুশে পদক। এই স্বীকৃতি আমার মাথা নত না করার স্বীকৃতি। গত ২১ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার রাউজানের মহামুনি গ্রামে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত শিক্ষাবৃত্তি প্রদান, বিনামূল্যে চক্ষুশিবির ও চিকিৎসাসেবা অনুষ্ঠানে উদ্বোধকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

লায়ন্স ক্লাবস ইন্টারন্যাশনাল ডিস্ট্রিক্ট ৩১৫বি৪ এর সাবেক গভর্নর শিল্পপতি লায়ন রূপম কিশোর বড়ুয়ার প্রয়াত সন্তান অনিরুদ্ধ বড়ুয়া অনির নামে প্রতিষ্ঠিত মেমোরিয়াল ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় এবং লায়ন্স ক্লাব অব চিটাগাং কর্ণফুলীর সহযোগিতায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ সহযোগিতা প্রদান করে স্থানীয় তরুণ সংঘ। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এর প্রাক্তন জেলা গভর্নর এমএ মালেক বলেন, ঘুমের ঘোরে নয়, জেগে থেকে তোমরা নিজেদের জীবন নিয়ে স্বপ্ন দেখো, জীবন সাজানোর স্বপ্ন, জাতির উন্নয়নের স্বপ্ন।

অনুষ্ঠানে ১৯৬৪ সালের একটি অভিজ্ঞতা শেয়ার করে এমএ মালেক বলেন, করাচিতে ব্যাংক একাউন্ট খুলতে গিয়ে মাতৃভাষার প্রতি আপোষহীন ভূমিকার কারণে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছিলাম। আমি বাংলায় স্বাক্ষর দিয়ে ব্যাংক একাউন্ট খুলবো, উনারা উর্দু অথবা ইংরেজী ছাড়া খুলবেন না। বাংলায় স্বাক্ষর করার কারণে আমার ব্যাংক একাউন্ট খুলতে রাজি হচ্ছিল না। আমার জেদ চেপে গিয়েছিল। কোনো অবস্থাতেই আমি উর্দু বা ইংরেজিতে স্বাক্ষর করে একাউন্ট খুলবো না। একটির পর একটি ব্যাংকে ঘুরতে ঘুরতে পরবর্তীতে শহর থেকে বেশ দূরে মফস্বলে গিয়ে বাঙালি এক অফিসারের সহায়তায় আমি বাংলায় স্বাক্ষর করে ব্যাংক একাউন্ট খুলেছিলাম। মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ স্বাধীন হলে পাকিস্তানের ইউনাইটেড ব্যাংকে থাকা আমার ওই একাউন্ট জব্দ হয়ে গিয়েছিল, আমার টাকাগুলো আর ফেরত পাইনি।

তিনি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হাজার বছরের শেষ্ঠ সন্তান হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়। আমি বলি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হাজার বছরের নয় তিনি যুগ যুগান্তরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। তিনি আমাদের একটি দেশ দিয়েছেন, একটি পতাকা দিয়েছেন।

মহামুনি মন্দিরের পাদদেশে ফণীতটী মঞ্চে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রাক্তন জেলা গভর্নর লায়ন রূপম কিশোর বড়ুয়া। অনুষ্ঠানের শুরুতে একুশে পদকে ভূষিত হওয়ায় দৈনিক আজাদী সম্পাদক লায়ন এম এ মালেককে সংবর্ধনা দেয়া হয়। অনুষ্ঠানে রেলপথ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী ভ্যার্চুয়ালি যোগদিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। তিনি লায়ন রূপম কিশোর বড়ুয়ার মানবিক কর্মকাণ্ডের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন লায়ন সুপ্রভা বড়ুয়া, সত্যব্রত বড়ুয়া, মলয়মুৎসুদ্দি, দেবব্রত বড়ুয়া, নবেন্দু তালুকদার, সরজিত বড়ুয়া, অধ্যাপক সরোজ বড়ুয়া, অঞ্জন বড়ুয়া, সুজন প্রসাদ বড়ুয়া,শরণ প্রসাদ বড়ুয়া প্রমুখ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১৭ গুণী পেলেন চসিকের একুশে স্মারক সম্মাননা
পরবর্তী নিবন্ধছয় লেনের স্বপ্নের মাতামুহুরী সেতু দৃশ্যমান