কয়েকটি মর্মস্পর্শী মৃত্যু মানব মনকে তাড়িত করছে কদিন ধরে। পালটে যাওয়া এ জীবনের মানে কি! মানুষ কি মানুষের কাছেই হেরে যাচ্ছে, হেরে যাচ্ছে নিজের কাছে, নিজের আপনজনের কাছে! না বোধগুলো অন্যকে স্পর্শ করছে, না স্বার্থান্ধ মানুষ দ্রুত মায়াজাল ছিন্ন করছে অধিক লোভে। তারপর যা হবার তাই হচ্ছে! ভালোবাসা কি তবে শুধুই স্বার্থের জন্য! ফিরতে হবে সকলকে সুন্দর পৃথিবীর জন্যএকত্রে বসবাসের পুরাতন পথে।আনন্দের উৎস একা নয় সবার সাথে ভাগাভাগি করে নিতে হবে। স্বার্থপরতা কূপমন্ডুকতা থেকে বেরিয়ে আসতেই হবে। অন্যথায় জীবন এক আহাজারির নামে পরিণত হবে। আমরা সন্তানকে অল্পে সন্তুষ্ট হতে শিক্ষা দেই নি, আমরা পাগল হয়ে গেলাম ভালো ফল, বিদেশে ভবিষ্যৎ গড়া, অনেক বড়ো হও, অনেক টাকা করো গাড়িবাড়ি ইত্যাদি নিয়ে। আমরা ভুলে গেলাম সন্তান এই দৌড়ে জিততে গিয়ে নিজের টুকরো টুকরো বোধগুলো হারিয়ে ফেলছে, ভালোবাসা নামক জিনিসটাকে প্রতিযোগিতায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। প্রত্যাশার লোভ, ভালোবাসার চেয়ে বড়ো হয়ে উঠেছে।
আমরা জোর দিয়ে বলতে পারলাম না বাবা আমাদের এতকিছুর দরকার নাই শুধু বড়ো হয়ে একজন ভালো মানুষ হও। খুব ভালো মানুষ। বলতে পারলাম না অনেক টাকা না জমিয়ে তোমাকে মানুষ বানাতে জীবন শেষ করে গেলাম, তুমি শুধু মানুষ হয়ে দেশ দশের কাজে আসবে এইটুকু প্রত্যাশায়। সন্তানকে আগের মতো (মানে আমাদের বাবা মারা যে রকম চাইতেন) কোন দায়িত্ব দিচ্ছি না এটাও বড়ো সমস্যা। বাচ্চাকে শুধু বলছি বড় হও, ভালো ফল করো, ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হও, বিদেশ যাও। ওরা তাই অবিরাম চেষ্টায় গড়ে তুলে স্বপ্নের দুনিয়া তখন সে দুনিয়ায় অনেক বাবামা-ই আর থাকে না। আসলে থাকার মতো করে সন্তান গড়ে তুলতে পারিনি। দিনশেষে কেঁদে আর কি লাভ হবে! যা ভাবার শুরুতেই ভাবতে হবে, মগজে গেঁথে দিতে হবে তুমি মানবিক মানুষ হবে, দেশ প্রেমিক হবে, সত্যবাদী হবে, পরোপকারী হবে, উদার হবে এবং সর্বোপরি একজন ভালো মানুষ হবে। হিংসুটে, ঈর্ষাপরায়ণ, নীতিহীন, বর্বর স্বার্থপর লোভী মানুষ হবে না তাতে দেশের অমঙ্গল হবে, তোমার পরিবার আর তোমারও অমঙ্গলই হবে। কেউ কেউ বলেন এককথা কতো বলবে। অনেক শিক্ষককে ও বলতে শুনেছি অনেক বলি কাজে আসে না। না বিষয়টা এমন নয় কাজে আসছে ঠিকই আমরা দেখছি না। হাঁ, এরকম কথা বারবার বলতে হবে, প্রয়োজনে জীবনভর বলতে হবে সন্তানের জন্য। রিপিট হতে থাকবে কথাগুলো। যেনো কি ওয়ার্ডগুলো মগজে গেঁথে থাকে এবং স্পর্শ করতে থাকে, হিট করতে থাকে ভুল পথে পা বাড়ালেই। ইতিবাচক নেতিবাচক শব্দের প্রভাবে জীবন কেমন বদলে যায় তার হাজারো উদাহরণ রয়েছে পৃথিবীতে। তা জানাতে বারবার বলার বিকল্প নেই। নবী রাসূলের জীবনী, বড়ো বড়ো মনীষীদের জীবন ইতিহাস, সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছা বড়ো মানুষদের জীবন সম্পর্কে ছোটবেলা থেকেই একটা অনুরণন জাগিয়ে তুলতে হবে শিশুর মগজের ভেতরে। এই অনুপ্রেরণাই তাদের অন্তরকে জাগ্রত করে তুলবে। অন্যথায় বিপথে যাবার রাস্তাটা সহজ হয়ে উঠবেই। মানুষ একলা হতে থাকবে, জীবনের মানে যে সুন্দর তা খুঁজে পাবে না। কষ্টের মাঝেও জীবন সুন্দর অথবা কষ্ট করেই সুন্দর জীবন খুঁজে নিতে হয়। এই উপলব্ধি যত দ্রুত দিতে পারবো সন্তানকে, শিশুকে তবেই দেশের পরিবারের অশুভ দূর হয়ে আবার শুভ সূচনা হবে। শুভ হউক সকলের।