চোরাচালানের পশুর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশীয় খামারিরা

চকরিয়া প্রতিনিধি | শুক্রবার , ৩০ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৪:০৫ পূর্বাহ্ণ

থাইল্যান্ড থেকে মিয়ানমার হয়ে সীমান্ত পেরিয়ে বান্দরবানের আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ির অন্তত শতাধিক স্থান দিয়ে প্রতিদিনই দেশে ঢুকছে চোরাচালানের মাধ্যমে আসা হাজারো গবাদি পশু। তম্মধ্যে স্বল্পসংখ্যক মহিষ হলেও বাকিগুলো গরু। এতে দেশীয় গরুর খামারি ছাড়াও ঘরোয়াভাবে লালনপালন করা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও পড়েছেন চরম বিপাকে। এদিকে বান্দরবানের আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে চোরাচালানের মাধ্যমে সীমান্ত পেরিয়ে দেশে ঢোকা গবাদি পশুগুলো মজুদ করে রাখা হচ্ছে চকরিয়ার মানিকপুর, ফাঁসিয়াখালী ও ডুলাহাজারার বিভিন্ন খামারে। মূলত এসব স্থানে এখন গড়ে উঠেছে দেশে অবৈধভাবে ঢোকা গবাদি পশুর বিকিকিনির হাট।

অভিযোগ উঠেছে, চোরাচালানের মাধ্যমে দেশে ঢোকা এসব অবৈধ গবাদি পশুর বিপরীতে সরকার যেমন এক টাকাও রাজস্ব পাচ্ছে না, তেমনি এসব অবৈধ ও রোগাক্রান্ত গবাদিপশুর কারণে চরমভাবে মার খাচ্ছে দেশীয় খামারি ও ঘরোয়াভাবে লালনকারী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।

চোরাচালানের মাধ্যমে সীমান্ত পেরিয়ে দেশে গবাদি পশু আনায় জড়িত একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক আজাদীকে জানান, দীর্ঘ একবছরের বেশি সময় ধরে চোরাচালানের মাধ্যমে থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার থেকে প্রতিদিন হাজারো গবাদি পশু ঢুকছে দেশে সীমান্ত জেলা বান্দরবানের আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ির অন্তত শতাধিক পয়েন্ট দিয়ে। এর সঙ্গে সরাসরি জড়িত রয়েছে ক্ষমতাসীন দল ও অঙ্গসংগঠনের অনেক নেতাকর্মী। তারা এসব পশু দেশে ঢোকানোসহ বিকিকিনি সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বান্দরবানের আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ির পর এবার চোরাচালানের মাধ্যমে ঢোকা অবৈধ গবাদি পশুর হাট বসেছে চকরিয়ার মানিকপুর বাজার, ফাঁসিয়াখালীর হাসেরদিঘী ও ডুলাহাজারার রংমহল এলাকায়। বর্তমানে প্রতিদিন এসব অবৈধ হাটে শত শত ট্রাকে করে ঢুকছে গবাদি পশু। আর সেই পশু দেশের উত্তরবঙ্গসহ বিভিন্ন জেলার বেপারিরা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বেশ কয়েকজন সাংবাদিক আজাদীকে বলেন, চোরাচালানের মাধ্যমে আসা এসব গবাদি পশু সীমান্তরক্ষী বাহিনীর জন্য অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। সংঘবদ্ধ চোরাচালান সিন্ডিকেটের সাথে আঁতাত করেই সীমান্তরক্ষী বাহিনী এসব গবাদি পশু দেশে ঢুকতে সাহায্য করছে। যারা এই চোরাচালান বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে তারাই মোটা অংকের টাকায় ম্যানেজ হয়ে যাচ্ছে। এতে বেপরোয়াভাবে প্রতিদিন সীমান্ত দিয়ে ঢুকছে হাজারো গবাদি পশু। চোরাচালানের এসব গবাদি পশুর কারণে চরমভাবে মার খাচ্ছে দেশীয় খামারি ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঘরোয়া ব্যবসায়ীরা।

সুরাজপুরমানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম বলেন, চোরাচালানের মাধ্যমে আসা এসব গবাদি পশুর কারণে দেশীয় খামারি এবং ঘরোয়া ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এই অপতৎপরতা বন্ধ করা না গেলে দেশীয় ব্যবসায়ীরা পথে বসবে। একই কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরাও।

প্রসঙ্গত, বান্দরবানের আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে কেবল গত এক মাসে কয়েকশ গরু ও মহিষ জব্দ করে বিজিবি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদুই বছরের প্রাক-প্রাথমিক চট্টগ্রামের ৯৭ স্কুলে
পরবর্তী নিবন্ধনাইক্ষ্যংছড়িতে ৩০টি চোরাই গরু জব্দ, পাঁচ কারবারি আটক