চুরি বা ছিনতাই হওয়া মোবাইল উদ্ধারে থানার শরণাপন্ন হয়েও লাভ হচ্ছে না ভুক্তভোগীদের। মোবাইল হারিয়ে অনেকেই থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করছেন। তবে থানা পুলিশের মাধ্যমে এসব মোবাইল উদ্ধারের হার খুবই সামান্য। কখনো যদি বড় কোনো মোবাইল চোর সিন্ডিকেট পুলিশের জালে ধরা পড়ে এবং তাদের থেকে ৫০/১০০টা মোবাইল ফোন উদ্ধার হয়, তখন সংশ্লিষ্ট থানা থেকে মোবাইলগুলোর আইএমইআই নম্বর মিডিয়ার মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন থাকলে সেখানে হারানো মোবাইল ফোনটি থাকলেও থাকতে পারে। চুরি বা ছিনতাই হওয়া মোবাইল উদ্ধারে থানার সক্ষমতা নিয়ে তাই প্রশ্ন তুলেছেন মোবাইল হারানো ব্যক্তিগণ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, নিজস্ব প্রচেষ্টায় কোনো থানার পুলিশ চোরাই মোবাইল উদ্ধার করতে পারে না। এ জন্য থানাকে নির্ভর করতে হয় ঊর্ধ্বতন অফিসের ওপর। কারণ, মোবাইলের অবস্থান শনাক্ত ও তাতে ব্যবহার করা সিমের মালিকের পরিচয় বের করার প্রযুক্তি থানায় নেই। এছাড়া প্রযুক্তির সহায়তায় যেভাবে ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে মোবাইলটিকে ট্র্যাকিং করা হয়, সেই প্রক্রিয়াটিও স্পর্শকাতর। সব পুলিশ কর্মকর্তাকে সরাসরি এ ধরনের তথ্য চাওয়ার অনুমতিও দেওয়া হয়নি। নির্দিষ্ট কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এসব তথ্য পাওয়া যায়। ধৈর্য ধরে সে তথ্য নিয়ে তদন্ত কর্মকর্তাদের লেগে থাকতে হয়। এরপর চোরাই মোবাইল ফোন উদ্ধারের সম্ভাবনা দেখা দেয়। তবে যদি ফোনটা চালু না থাকে বা দেশের বাইরে চলে যায় তবে সেটি আর উদ্ধার করা সম্ভব হয় না। ইদানীং মোবাইল চোরেরা নতুন কৌশল আবিষ্কার করেছে পুলিশি ঝামেলা ঠেকাতে। চট্টগ্রাম তথা সারা দেশে চুরি যাওয়া মোবাইলগুলো চলে যাচ্ছে ভারতে। আবার ভারতে চুরি যাওয়া মোবাইল আসছে বাংলাদেশে। এর ফলে আইএমইআই নম্বর বা প্রকৃত মালিকের পরিচয় খুঁজে পাওয়া যায় না।
মোবাইল ফোন চুরি বা ছিনতাই হলে ভুক্তভোগীকে থানায় জিডি করতে হয়। জিডিতে চুরি বা ছিনতাইয়ের কথা লেখা যায় না। লিখতে হয় ‘হারানো গেছে’। জিডিতে ভুক্তভোগী তার পরিচয়, ফোনের মডেল, ফোন নম্বর ও আইএমইআই নম্বর এবং মেইল খোলা থাকলে মেইল আইডিও উল্লেখ করেন। আইএমইআই নম্বর ভুলে গেলেও সমস্যা হয় না। মোবাইল ফোন নম্বর দিয়ে সেটা উদ্ধার করা যায়। তবে তাতেও সময়ক্ষেপণ হয়।
সিএমপির কোতোয়ালী থানার ওসি মো. নেজাম উদ্দিন আজাদীকে বলেন, মোবাইলটি খোলা থাকতে হবে। তবেই কললিস্ট পাওয়া যাবে। কিন্তু অনেক সময় মোবাইল বন্ধ রাখা হয়। আবার কেউ দামি মোবাইলের যন্ত্রাংশ খুলে বিক্রি করে। কেউ কেউ ওই ফোনে সিম ব্যবহার না করে ইন্টারনেট ব্যবহার করে। এছাড়া একটি চক্র আবার আইএমইআই নম্বর বদলে ফেলে।
খুলশী থানার ওসি সন্তোষ চাকমা আজাদীকে বলেন, চুরি, ছিনতাই বা হারিয়ে যাওয়া মোবাইল উদ্ধার সবসময় নাও হতে পারে। তবে মোবাইলটি দেশে থাকলে এবং সেটি কেউ ব্যবহার করলে শনাক্ত করা সম্ভব। যদি ছিনতাই চক্র মোবাইলের নেটওয়ার্ক আইসি বদলে আইএমইআই নম্বরও বদলে ফেলে, তবে উদ্ধার করা সম্ভব হয় না।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) ১৬টি থানায় প্রায় প্রতিদিনই মোবাইল হারানোর জিডি হচ্ছে। কোনও থানায় দিনে ৫-১০টি জিডি হওয়ার রেকর্ডও আছে। তবে সিএমপিতে নির্দিষ্ট হিসাব নেই। জিডির পর মোবাইল ফোন ফিরে পাওয়ার ঘটনা সামান্য। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোনও হদিস মেলে না বলে অভিযোগ রয়েছে।