সুন্দরপুর বেশ সুন্দর একটি গ্রাম। গ্রামের মাঝখানে বিশাল পুকুর, পুকুরের চারপাশে মনোরম সবুজ প্রকৃতি, দক্ষিণ দিকে চিনির টিন চালা ঘরটি। সবার ছোট চিনি, তাকে সবাই ভালবাসে। পাশে মস্তবড় ঘাস বিল, খেলার মাঠ, প্রতি বছরে পূজার দিনে মেলা জমে, চিনির অনেক বন্ধু খেলার সাথী, তারপরও শহর থেকে হৃদিকা পরীক্ষা শেষে ছুটিতে বেড়াতে গ্রামে আসে, তার গ্রাম খুব পছন্দ। চিনিদের সাথে তার বেশ ভালো বন্ধুত্ব হয়। সবাই জমিয়ে গল্প করে, মেলাতে ঘুরে বেড়িয়ে কত মজা করে, হৃদিকার বেশ ভালো লাগে।
চিনির আর এক বন্ধু পোষা বিড়াল মিনি। তার সাথে খুব বন্ধুত্ব হয়ে গেছে, মিনিও আনন্দে ছোটাছুটি শুরু করলো। হঠাৎ করে মিনি ব্যথা পেয়ে অনেকটা জায়গা কেটে গেছে।
মিনি গুটিগুটি পায়ে হাঁটতে পারছে না।
মিনিকে চিনি বুকে জড়িয়ে ধরে। তার চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।
তার পোষা আদরের মিনি।
অল্পদিনে মিনির প্রতি তার ভীষণ মায়া জন্মে গেছে।
ফার্মেসি থেকে একটা স্যাভলন ক্রিম কিনে নিলো ও। কুসুম– কুসুম গরম পানি দিয়ে বিড়ালছানার ক্ষতস্থান পরিষ্কার করলো। তারপর পরিষ্কার শুকনো কাপড় দিয়ে পুরো শরীরটা আস্তে আস্তে মুছে দিলো। খাবার ও দুধ দিলো। মিনিকে নরম বিছানায় শুইয়ে দিলো। মিনি চোখ মেলে চুপ হয়ে থাকল।
মা এবার চিনিকে বকা দিয়ে বলল, সারাদিন তো মিনির সেবা করে যাচ্ছ, এবার নিজে কিছু খাবে তো?
চিনি মায়ের বকা খেয়ে চুপ হয়ে থাকে।
যাও, খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো, সকালে ইসকুলে যাবে।
চিনির অনেক ভালো লাগছে, মিনি এখন সুস্থ আছে, অনেকটাই ভালো, বাড়িতে ভাই বোন সবাই চিনিকে ভালোবাসে, আদর ও যত্ন করে।
চিনি বোনকে বলে, একটা রাক্ষসের গল্প বলতে, গল্প শুনতে শুনতে চিনি ঘুমিয়ে পড়ে।
আজ ইসকুলে ক্লাসপার্টির দিন।ছাত্রছাত্রী সবাই আনন্দিত, সবাই সুন্দর সুন্দর পোশাক পরে এসেছে, সবার মুখে দারুণ হাসি।
অনিতা ম্যাম বলল, কী ব্যাপার, তোমরা সবাই দাঁড়িয়ে আছো কেন? আমাকে সবাই হেল্প করো।
সবাই ম্যামদের সাথে রঙিন কাগজ আর বেলুন দিয়ে সুন্দর করে শ্রেণীকক্ষগুলো সাজাল, ওদের সাজানোর শ্রী দেখে ম্যাম অসম্ভব খুশি হলো।
ম্যাম বলল, বাহ্, তোমরা তো বেশ সুন্দর করে সাজিয়েছো। তবে মনে রেখো তোমাদের সবার প্রতিযোগিতায় ভালো করতে হবে, তোমাদের ছড়া, কবিতা, গল্প বলা, গান সবগুলোতে। তোমাদের আজ কিছু মূল্যবান পুরস্কার দেবো, তোমরা সবাই তৈরি থেকো।
এ কথা শুনে সবাই তো মহাখুশি। ক্লাসে হইচই বেঁধে গেল।
ম্যাম বলে, তোমরা একটু শান্ত থাক, প্রিন্সিপাল স্যার খুব রেগে যাবেন। তবে তোমাদের মধ্যে যারা ভালো রেজাল্ট করেছে, তাদেরকে প্রিন্সিপাল স্যার পুরস্কার দিবেন।
প্রিন্সিপাল স্যার বলেন, আজ আমি সত্যিই খুব আনন্দিত। আমাদের ইসকুল সেরা পুরস্কার পেয়েছে, আমাদের ছাত্রছাত্রী খুবই ভালো রেজাল্ট করেছে, আমার ভীষণ ভালো লাগছে, আমাদের চিনি সবচেয়ে ভালো রেজাল্ট করেছে, প্রিন্সিপাল স্যার বলতে বলতে আনন্দে তাঁর চোখ ভিজে গেল।
গ্রামের চেয়ারম্যান চিনির বাবা। বাবাকে খুব ভয় পায় চিনি। ও দ্রুত বাবাকে সালাম করলো।
বাবা বলল, কী ব্যাপার, এতো সালাম কিসের জন্য?
চিনি আমতা আমতা করে রেজাল্টের কথা বললো।
বাবা মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল, আলহামদুলিল্লাহ।
চেয়ারম্যান বলল, কে কোথায় আছিস,
গ্রামের মানুষদের মিষ্টি খাওয়াতে হবে।
অনেক মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে এলো ফরিদ ভাই। প্যাকেট খুলে সবাইকে মিষ্টি বিতরণ করল। চেয়ারম্যানের বাড়িতে যেন বিজয় আনন্দ উপচে পড়ল।
হঠাৎ করে মিনি রাস্তায় পথ হারিয়ে ফেললো। বাড়ি ফিরেনি। কতো খোঁজাখুঁজি হলো কিন্তু মিনিকে কোথাও পাওয়া গেল না।
এভাবে কিছুদিন অতিবাহিত হলো, মিনিকে খুঁজতে থাকে সবাই। মিনির চিন্তায় চিন্তায় চিনিও অসুস্থ হয়ে পড়ে।
পথটা হারিয়ে মিনি খুব একা একা চলতে থাকে। বাড়ির পথ খুঁজে পায় না। ও খুঁজতে থাকে তার প্রিয় বন্ধু চিনিকে।
এদিকে চিনি কিছুই খায় না, শুধু কান্না করতে করতে বাতাস ভারী করে। সে কাউকে বলতেও পারছে না। তার কষ্টের কথা।
একদিন হৃদিকা আসার পথে মিনিকে দেখতে পায়। মিনিকে তার খুব চেনা।
সে মিনিকে কোলে নিয়ে খুব আদর করে, জড়িয়ে ধরে বুকের সাথে। বিকেলবেলা সে মিনিকে নিয়ে চিনির বাড়িতে হাজির।
মিনিকে দেখে চিনি হৃদিকার কাছাকাছি চলে গেল। দ্রুত মিনিকে কোলে তুলে নিল। নাক ঘষতে থাকল তার গোটা শরীরে। এমন মুহূর্ত বুঝি চিনির জীবনে আর কখনো আসেনি।