চিনির বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকারি উদ্যোগ সফল হোক

| মঙ্গলবার , ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৫:৩৪ পূর্বাহ্ণ

রমজানে চিনির বাজার স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। রমজানের আগে দেশে চিনির আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করেছে সরকার, পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্কও কমানো হয়েছে। গত রবিবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে শুল্ক ছাড়ের এই পরিপত্র এসেছে বলে পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেছে।

এনবিআরএর ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে খবরে বলা হয়, বর্তমানে প্রতি টন পরিশোধিত চিনির আমদানি শুল্ক রয়েছে ৬ হাজার টাকা, অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে ৩ হাজার টাকা। এই শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে ৩০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক রয়েছে। সেই শুল্ক হার ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, সব মিলিয়ে এখন থেকে আমদানিকৃত চিনির উপর থেকে খসড়া হিসাব অনুযায়ী, অপরিশোধিত প্রতি কেজি চিনির উপর থেকে শুল্ক ৭ টাকা এবং পরিশোধিত চিনির উপর থেকে ১০ টাকা প্রত্যাহার করা হয়েছে।

এই শুল্ক ছাড় আগামী ৩০ মে পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে বছরে ২৫ লাখ টন চিনির চাহিদা রয়েছে। দেশীয় চিনিকলগুলো এক লাখ টনের মতো চিনি উৎপাদন করতে পারে, চাহিদার বাকি চিনি আসে বিদেশ থেকে। গত কয়েক মাস ধরে দেশে চিনির বাজারে অস্থিরতা চলছে। বর্তমানে প্রতি কেজি খোলা চিনি ১১৫ টাকা এবং প্যাকটজাত চিনি ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে রমজানের আগেই খেজুর, চিনি, আটা, ময়দা, ভোজ্যতেল, বেসন, মুড়ি, ছোলাসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েছে। প্রতি বছর রোজা আসার আগ থেকেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বাড়া যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। রোজা শুরু হতে আরো কিছু দিন বাকি থাকলেও ভোজ্যতেলসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার খবর গণমাধ্যমে আসছে। রোজায় বাজার তদারকি শুরুর আগেই দ্রব্যমূল্য কয়েক দফা বাড়িয়ে দেয়ার এই কৌশল বিগত বছরগুলোতেও দেখা গেছে। রোজা শুরুর আগে বাজারের এই হালচাল উদ্বেগের। রমজানের সময় ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, ছোলা, মসলা ইত্যাদি পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। ব্যবসায়ীরা সুযোগ বুঝে এ সময়টাতেই চাহিদাসম্পন্ন পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। বড় থেকে ছোট ব্যবসায়ী সবার প্রবণতা এ সময় বেশি লাভ তুলে নেয়ার।

এ কথা অস্বীকার করা যাবে না যে, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য প্রতিনিয়তই বাড়ছে। স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে মাছগোশত ও ডিমের দাম। এক মাস আগে যত টাকায় চিনি ক্রয় করা হয়েছে, তা এখন অনেক বেশি টাকায় নিতে হচ্ছে। নিয়ন্ত্রণহীন এই বাজার পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। কিন্তু সরকারের কোনো পদক্ষেপই কাজে আসছে না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নিত্যপণ্যের বাজার জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য ভোক্তা অধিকার অধিদফতরসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মাধ্যমে নিয়মিত বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তবু বাজার দরের ঊর্ধ্বগতি রোধ করা যাচ্ছে না। এসময়ে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে কথাবার্তা উঠলেই ব্যবসায়ীরা একে অপরকে দোষারোপ করে অন্যের ঘাড়ে দায় চাপাতে চান। মানুষ এখন প্রয়োজনের চেয়েও কম পণ্য কিনে বাড়ি ফিরতে বাধ্য হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, চাহিদার তুলনায় কম হলেও দেশে প্রায় সব নিত্যপণ্যই কমবেশি উৎপাদন হয়। এ অবস্থায় সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী সময়মতো নিত্যপণ্য আমদানি করা হলে বাজারে কোনো পণ্যের বড় ধরনের ঘাটতির আশঙ্কা থাকে না। গ্রাম ও শহরাঞ্চলের প্রান্তিক ও শ্রমজীবী মানুষ যাতে খেয়েপরে বাঁচতে পারে, সে জন্য নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে হবে। পণ্যের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে দ্রুত কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। রোজায় বাজার নিয়ন্ত্রণে টিসিবির মাধ্যমে খোলাবাজারে পণ্য বিপণন, বাজার মনিটরিং ইত্যাদি যেসব পরিকল্পনা থাকে সেগুলো যেন যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। পণ্য পরিবহন নির্বিঘ্ন রাখতে বিশেষ করে কৃষিপণ্যের সরবরাহে যাতে কোনো বাধার সৃষ্টি হতে না পারে সেদিকে নজর রাখতে হবে সংশ্লিষ্টদের। চিনির আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার, তার সুফল যেন জনসাধারণ পেতে পারে, তার তদারকি দরকার। জনজীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে এমন অবস্থা কিছুতেই সৃষ্টি হতে দেওয়া যাবে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে