চা শ্রমিকের মজুরি বেড়ে ১৪৫ টাকা

| রবিবার , ২১ আগস্ট, ২০২২ at ৪:৩৪ পূর্বাহ্ণ

দৈনিক মজুরি ১৪৫ টাকা করার প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির প্রতি সম্মান দেখিয়ে টানা ১২ দিনের আন্দোলন প্রত্যাহার করে কাজে ফেরার ঘোষণা দিয়েছেন চা শ্রমিকরা।
গতকাল বিকাল ৪টার দিকে আন্দোলনকারী সংগঠন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল সাংবাদিকদের বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবনাকে গ্রহণ করে উনার সম্মান রক্ষার্থে আমরা আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। তিনি আরও বলেন, এই সিদ্ধান্ত প্রতিটি চা বাগানে নেতৃত্বের মাধ্যমে তৃণমূলের কাছে যাবে। রোববার থেকে শ্রমিকরা কাজে যোগ দেবেন।
এর আগে বিকাল ৩টায় শ্রম অধিদপ্তরের মৌলভীবাজারে ভানুগাছ রোডের বিভাগীয় কার্যালয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ, শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন চা শ্রমিকদের প্রতিনিধিদল। এ সময় সেখানে হবিগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি, মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের স্থল থেকেই আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন চা শ্রমিক নেতা। খবর বিডিনিউজের।
এ সময় শ্রম অধিদপ্তরের মহাপিরচালক খালেদ মামুন চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবের সভাপতিত্বে আমরা সভায় বসেছিলাম। সেই সভায় বাগান মালিক নেতারাও ছিলেন। আমরা সেখানে একটা সিদ্ধান্ত নেই। সেটা সচিব মহোদয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে পেশ করেন, ১৪৫ টাকা। চা শিল্পের স্বার্থে শ্রমিকদের অনুরোধ করা হয়েছে তাদের ধর্মঘট প্রত্যাহার করার জন্য। আজকে আমরা প্রধানমন্ত্রীর সেই নির্দেশনাই চা শ্রমিকদের বলেছি। তারা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সম্মান দেখিয়ে তাদের ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন। এজন্য চা শ্রমিকদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
গতকাল দুপুর থেকেই শ্রীমঙ্গল ও মৌলভীবাজারের বাগানে বাগানে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন- এমন একটি খবর প্রচার হতে থাকে। শ্রমিকরা তখন বাগানে সমাবেশ, মিছিলে ছিলেন। তারা বাগান ছেড়ে শ্রম অধিদপ্তরের কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন। শ্রমিক নেতারা যখন ভিতরে বৈঠক করছিলেন, তখন বাইরে প্রচুর শ্রমিক অপেক্ষা করছিলেন। এর মধ্যেই বিকালে বৈঠক শেষে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা আসে শ্রমিকদের পক্ষ থেকে। এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে টানা ১২ দিনের আন্দোলন শেষ হলো। উপস্থিত শ্রমিকদের মধ্যে অবশ্য কেউ কেউ দাবি না মানার কথাও বলেন।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল সাংবাদিকদের সামনে এসে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে চা শ্রমিকরা ধর্মঘটে যুক্ত আছেন। দীর্ঘদিন ধরে যে দাবি নিয়ে আন্দোলন করেছেন চা শ্রমিকরা, তা হচ্ছে- ৩০০ টাকা মজুরি করার জন্য। প্রধানমন্ত্রীর যে নির্দেশনা আমাদের এমপি সাহেবের মাধ্যমে বা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পেয়েছি সেটা আমরা বলতে চাই। আপনারা যে সিদ্ধান্তটা হয়েছে, আমরা যেটা জানতে পেরেছি, (বাগান মালিকদের সংগঠন) বাংলাদেশীয় চা সংসদের সিদ্ধান্ত বলে আমি মনে করি। তারপরও আমরা প্রধানমন্ত্রীকে মানি। তার যে প্রস্তাবনা, সেটা আমরা মানি। প্রধানমন্ত্রীকে আমরা সম্মান করি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের আন্দোলন-সংগ্রাম অব্যাহত ছিলো। সেটা প্রত্যাহার করব। সকলকে আমরা অনুরোধ করব, আমাদের যে সিদ্ধান্ত, প্রধানমন্ত্রী এই সিদ্ধান্ত আমাদের হাতে তুলে দিয়েছেন, আমরা আপনাদের কাছে তুলে ধরছি। নৃপেন পাল বলেন, পাশাপাশি আমরা অনুরোধ করব, প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবনা বর্তমানে আমরা মেনে নিয়েছি। কিন্তু পরবর্তীতে লাখ লাখ চা শ্রমিক আছেন, তারা যেন কথা বলতে পারেন, সাধারণ শ্রমিকরা যেন কথা বলতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।
পরে মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ নিয়েই আমরা এখানে এসেছি। শ্রমিকদের মজুরি ২৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর শেষে শ্রমিকদের সঙ্গে বসবেন।
বৈঠকে উপস্থিত বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা বলেন, উনারা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের বলেছেন, আমাদের ১৪৫ টাকা মজুরি দেওয়া হবে এবং তিনি ভারত সফর শেষে ফিরে আসার পর আমাদের সঙ্গে বসবেন। আমাদের দাবি ৩০০ টাকার; ১৪৫ টাকায় চলা সম্ভব না। আমরা চাই, প্রধানমন্ত্রী এটা পুনরায় বিবেচনা করুন। প্রধানমন্ত্রীর সম্মান রক্ষার্থে আপাতত আমরা ধর্মঘট স্থগিত করলাম। পরবর্তীতে আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বসে মজুরি কাঠামো নিয়ে আলোচনা করব।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন এবং বাংলাদেশীয় চা সংসদের আইন অনুযায়ী, শ্রমিকদের বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, রেশন, পানীয় জলের ব্যবস্থা ও বোনাসসহ ন্যায্যমজুরি নিশ্চিত করবে বাগান মালিক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশেখ হাসিনাকে উদ্ধারের অনিশ্চিত মুহূর্তগুলো
পরবর্তী নিবন্ধপ্রথম প্যাকেজের কাজ শুরু