চা-শ্রমিকদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করার ঘোষণা মানবিক ও সময়োচিত পদক্ষেপ

| বুধবার , ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৫:৪৩ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পের নাম ‘চা শিল্প’। জাতীয় অর্থনীতিতে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, বাংলাদেশের চা উৎপাদনের পরিমাণ বছরে প্রায় ৯৬.০৭ মিলিয়ন কেজি এবং এখান থেকে চা রপ্তানি করা হয় ২৫টি দেশে। এই চা উৎপাদনের সঙ্গে যারা সরাসরি জড়িত তারাই চাশ্রমিক। কিন্তু চাশ্রমিকরা সকল নাগরিক সুবিধা ভোগের অধিকার সমভাবে প্রাপ্য হলেও তারা পারিবারিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে বৈষম্যের শিকার বলে প্রতীয়মান। তাদের প্রতি সদয় আচরণ ও তাদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হওয়া পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, সকলের দায়িত্ব বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, তাঁর সরকার চাশ্রমিকদের উন্নত জীবন নিশ্চিত করার জন্য সর্বদা সচেষ্ট রয়েছে। তিনি বলেন, তাঁর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চাশ্রমিকদের নাগরিকত্ব প্রদান করায় তিনি (প্রধানমন্ত্রী) তাঁদের প্রতি বিশেষ দায়িত্ব অনুভব করেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চাশ্রমিকদের সঙ্গে ভার্চ্যুয়ালি মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন।

সরকার সবার জন্য অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ সব মৌলিক চাহিদা পূরণ করছে এবং সব গৃহহীনকে বিনা মূল্যে ঘরবাড়ি নির্মাণ করে দিচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাশ্রমিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘সবার জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা আমি করে দেব। এই মাটির ওপর আপনাদের অধিকারটা যেন থাকে, সেই ব্যবস্থাটাই করে দিয়ে যাব ইনশাআল্লাহ।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা যেমন নাগরিকত্ব দিয়েছিলেন, তেমনি আপনাদের (চাশ্রমিকদের) প্রতি আমার আলাদা দায়িত্ব রয়েছে। আমি সব সময় সেই অনুযায়ী দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করছি।’

ভিডিও কনফারেন্সে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট ও চট্টগ্রাম থেকে যোগদানকারী চাশ্রমিকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই চাশিল্পকে বিকশিত করার পাশাপাশি চাশ্রমিকেরা যাতে উন্নত জীবনযাপন করতে পারেন, সে বিষয়ে সর্বদা সচেষ্ট রয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা চাশ্রমিকদের সব সমস্যার সমাধান ও চাুশিল্পকে (দেশের অন্যান্য অঞ্চলে) ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য সর্বদা সচেষ্ট রয়েছি।’ এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন তৎকালীন চা বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন, তখন এই শিল্পের বিকাশ ও চাুশ্রমিকদের উন্নত জীবন নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।’

এখানে উল্লেখ্য, অবহেলিত ও অনগ্রসর এ জনগোষ্ঠীর মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ, তাদের সামাজিক ন্যায় বিচার নিশ্চিতকরণ, পারিবারিক ও আর্থসামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সরকার সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের আওতায় ‘চাশ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন কার্যক্রম’ গ্রহণ করেছে। এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো : আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ও সামাজিক নিরাপত্তা বিধান; আপদকালীন সময়ে চাশ্রমিকদের অর্থ সহায়তা প্রদান; পরিবার ও সমাজে তাঁদের মর্যাদা বৃদ্ধি।

এজন্য প্রধানমন্ত্রী চাশ্রমিকদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়ার যে ঘোষণা দিয়েছেন, তা নিঃসন্দেহে অভিনন্দনযোগ্য ও প্রশংসনীয়। এর কারণে চাশ্রমিকদের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটবে, তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

২০১৯ সালে সিলেট অঞ্চলের চাবাগানগুলোর স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিয়ে প্রথম জরিপটি চালায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। এই জরিপে দেখা গেছে, অপুষ্টির কারণে চাবাগানের ৪৫ শতাংশ শিশুই খর্বাকার, ২৭ শতাংশ শীর্ণকায়। স্বল্প ওজনের শিশু ৪৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এই জরিপের তথ্য অনুযায়ী ১৮ বছরের আগেই বিয়ে হয়ে যাচ্ছে ৪৬ শতাংশ কিশোরীর, মা হয়ে যাচ্ছে ২২ শতাংশ। এ ছাড়া ন্যূনতম স্যানিটেশনসুবিধা নেই চাবাগানের ৬৭ শতাংশ পরিবারের। এর আগে ২০১৮ সালে বেসরকারি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি) মৌলভীবাজারের চাবাগানগুলোর নারীদের ওপর একটি গবেষণা চালায়। এতে দেখা যায়, প্রায় ১৫ শতাংশ নারী জরায়ু ক্যানসারে ভুগছেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, স্বল্পমজুরি, ন্যূনতম স্বাস্থ্যসেবার অভাব, মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্যসেবার অপ্রতুলতা, শিক্ষার অভাব ও কুসংস্কারের কারণে এমন অপুষ্টি আর রোগের শিকার চাবাগানের নারী ও শিশুরা।

এই পরিসংখ্যানে চা শ্রমিকদের বর্তমান অবস্থার চিত্র ফুটে উঠেছে। তাদের মানবেতর জীবনযাপনের সংবাদ আমরা এখন প্রত্যক্ষ করি নানা গণমাধ্যমে। আমরা মনে করি, চাশ্রমিকদের উন্নত জীবন নিশ্চিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস বাণী তাঁদের জন্য বড় নিয়ামক। তাঁদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করার ঘোষণাকে আমরা মানবিক ও সময়োচিত পদক্ষেপ বলে মনে করি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধব্রাজিলের স্বাধীনতা দিবস