চাল এবং গম আমদানির সিদ্ধান্তে ইতিবাচক প্রভাব

খাদ্য নিরাপত্তায় সরকারের গুরুত্বারোপ

| শনিবার , ১২ নভেম্বর, ২০২২ at ৭:২৯ পূর্বাহ্ণ

দৈনিক আজাদীতে ১০ নভেম্বর প্রকাশিত খবরে জানা যায়, দেশে চালের পর্যাপ্ত মজুদ থাকলেও প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টন চাল এবং সাড়ে সাত লাখ টন গম আনা হচ্ছে। দেশের চলতি বছরের পাশাপাশি আগামী বছরের খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে সরকার বিভিন্ন দেশ থেকে চাল এবং গম আমদানি করছে। সরকারিভাবে আমদানিকৃত এসব চাল এবং গম দিয়ে ওএমএস, কাজের বিনিময়ে খাদ্য, বিধবা ভাতাসহ বিভিন্ন গণমুখী কার্যক্রম পরিচালিত হবে। চালের এই বিশাল মজুদ খুচরা বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ে সরকার খুব সতর্ক। খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। বর্তমান সরকারের সময়ে খাদ্য নিরাপত্তার যে ঝুঁকির কথা বলা হচ্ছে-তা অনেকে উড়িয়ে দিচ্ছেন। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কথাবার্তা। তাঁরা বলছেন, দেশের মধ্যে এক ধরনের আতংক তৈরি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাদের দেশে যে পরিমাণ রিসোর্স আছে, সেটি আমরা পুরোপুরি ব্যবহার করতে পারিনি। যদি পুরোপুরি ব্যবহার করতে পারি তাহলে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা নয়, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবো। বর্তমান সরকার সে পদক্ষেপ নিচ্ছে।
তবে, বিশ্ব আগামী বছর ‘দুর্ভিক্ষের মত খারাপ পরিস্থিতির’ মুখোমুখি হতে পারে বলে সতর্ক করে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়ে সম্প্রতি গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘যার যেখানে যতটুকু জমি আছে, অথবা জলাধার আছে, সেখানে যেন কিছু না কিছু উৎপাদন করে। কারণ এটা বিশ্বব্যাপী একটা আশঙ্কা আগামী বছরটা মহা-সংকটের বছর হবে। সবচেয়ে বড় কথা খাদ্য সংকটের বিষয়টা বেশি বিবেচনা করা দরকার। এক ইঞ্চি জমি যেন অনাবাধি না থাকে। আমরা সেদিক লক্ষ্য রেখেই বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিচ্ছি। দেশবাসীকে সাশ্রয়ী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে সরকার প্রধান বলেন, প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। বিদ্যুৎ ব্যবহার, পানি ব্যবহার, খাদ্য ব্যবহার প্রত্যেকটা ব্যবহারের ক্ষেত্রে সবাই যেন সীমিত হয়, সাশ্রয়ী হয়। কারণ আগামী সংকটটা যেন আগামীতে সেভাবে না দেখা দেয়। কৃষি উৎপাদন বাড়াতে উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কৃষি উৎপাদন আমরা যদি আরও করতে পারি, ভালোভাবে বাড়াতে পারি এবং আমাদের যা আছে- তাতে অসুবিধা হবে না। আমরা খেয়ে-পরে থাকতে পারব। আবার মানুষকে খাওয়াতেও পারব, এটুকু আশ্বাস দিতে পারি। সংকটের প্রেক্ষাপট এবং তা মোকাবেলায় সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, যেহেতু করোনাভাইরাস দেখা দিয়েছিল, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দাৃ (উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা) ২০২৪ সালে কার্যকর করার কথা, আমরা ২০২৬ সাল পর্যন্ত সময় নিয়েছি। সেক্ষেত্রে আমাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাজেটে আমরা কিন্তু পিছিয়ে থাকিনি। বিশ্বব্যাপী এত যে অর্থনৈতিক সংকট তার মাঝেও বাজেট আমরা দিয়েছি, আগের বাজেটের থেকে কিছু বেশি অর্থই আমরা ব্যবহার করেছি। বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, সরকার তা অর্জনের ক্ষেত্রে ‘সঠিক পথে’ রয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। সংকট মোকাবিলার জন্য পাঁচ মাসের খাদ্য কেনার রিজার্ভ রয়েছে জানিয়ে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আগামীর কথা চিন্তা করে আমাদের বাজেট কী রকম হবে, কী কী কাজ করব, সে বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের চিন্তাভাবনা আছে। আমাদের অর্থনীতি এই সংকট মোকাবিলা করে, একদিকে করোনাকালীন সংকট আরেক দিকে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ এবং নিষেধাজ্ঞা পাল্টা নিষেধাজ্ঞা মাঝেও কিন্তু আমরা অর্থনীতি সচল রাখতে পেরেছি।
দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য নিরাপদ খাদ্য ও প্রয়োজনীয় পুষ্টি নিশ্চিত করা বর্তমান সরকারের একটি বড় চ্যালেঞ্জ বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলেছেন, বাড়ছে জনসংখ্যা কমছে কৃষিজমি। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব। এই তিনটি বিষয়ই দেশের খাদ্য উৎপাদনের জন্য চ্যালেঞ্জ।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, খাদ্যপ্রাপ্তির সক্ষমতার বিষয়টি সম্পদের মালিকানা, দারিদ্র্যের হার, আয়, মজুরি, কর্মসংস্থান, মুদ্রাস্ফীতি, সরকারি অর্থ ও খাদ্য সহায়তা প্রভৃতি বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল। কোভিড-১৯ এর আগে দেশে দরিদ্র মানুষের হার ছিল ২০.৫ শতাংশ। চিন্তার বিষয় হলো আগে যে মাত্রায় দারিদ্র্যের হার কমে আসছিল, ২০০০ সালের পর থেকে প্রবৃদ্ধির উলম্ফন সত্ত্বেও দারিদ্র্য কমার হার শ্লথ হয়ে গেছে; এর অর্থ এখন প্রবৃদ্ধিই দারিদ্র হ্রাসের একমাত্র নিয়ামক নয়; আগে এই দাওয়াই যেভাবে কাজ করেছে, এখন আর সেভাবে কাজ করছে না। এর কারণ খুঁজে বের করতে হবে এবং তা দূর করার ব্যবস্থা নিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে