চালের বস্তায় ধানের জাত ও দাম লেখার নির্দেশনা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি

দাম ওঠানামা করে বাস্তবায়ন সম্ভব নয়: মিল মালিক ও আড়তদার

শুকলাল দাশ | রবিবার , ২৬ মে, ২০২৪ at ৭:২৬ পূর্বাহ্ণ

চালের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে বস্তায় ধানের জাত, মিলের ঠিকানা ও দাম লেখা বাধ্যতামূলক ঘোষণা করে গত ২১ ফেব্রুয়ারি খাদ্য মন্ত্রণালয় পরিপত্র জারি করে। এই নির্দেশনা পহেলা বৈশাখ (১৪ এপ্রিল) থেকে কার্যকর করতে বলেছিল মন্ত্রণালয়। কিন্তু এখনো সরকারের দেওয়া এই নির্দেশনা চট্টগ্রামে কার্যকর হয়নি। গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম নগরীর চাক্তাইয়ে বেশ কয়েকটি রাইস মিল ও চালের গুদাম এবং চালের পাইকারি বাজার পাহাড়তলীতে ঘুরে কোথাও চালের বস্তায় ধানের জাত ও মিল গেটে চালের দাম লেখা দেখতে পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে মিল মালিক ও চালের আড়তদারদের সঙ্গে কথা হয়। তারা বলেন, এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। দেশের কোথাও এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন হয়নি। চালের বস্তায় মিলের নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর এই তিনটি লেখা থাকে। কিন্তু তারিখ ও মূল্য লিখতে গেলে আমরা চাল বিক্রি করতে পারব না। বাজারে চালের দাম ওঠানামা করায় বস্তায় মূল্য লিখতে পারছেন না বলে জানান তারা। তবে মিল মালিক ও চালের আড়তদারদের সঙ্গে একমত নন অনেক দোকানদার। দোকানদারা জানান, বস্তায় মূল্য লেখা থাকলে তাদেরও সুবিধা হয়। কাস্টমারের সঙ্গে বেশি কথা বলতে হয় না। সরকারের নতুন এই সিদ্ধান্ত এখনো কোথাও কার্যকর হয়নি উল্লেখ করে চট্টগ্রাম রাইস মিল মালিক সমিতির সভাপতি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ আজাদীকে বলেন, দেশের কোথাও এটা এখনো কার্যকর হয়নি। আমাদের চোখে পড়েনি। চট্টগ্রামে আমাদের যেসব রাইস মিল আছে, আমরা এখনো করতে পারিনি। এটা করা সম্ভব নয়। ডিসি সাহেব যেদিন আমাদের নিয়ে মিটিং করেছেন সেদিন আমরা বলেছি এটা কার্যকর করা অসম্ভব। এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে গেলে, বিশেষ করে চালের বস্তার গায়ে মূল্য এবং তারিখ লিখতে গেলে আমরা চাল বিক্রি করতে পারব না। বস্তায় গায়ের মূল্য এবং তারিখ এই দুটো লিখলে সমস্যা হবে। আর সব ঠিক আছে। যেমন বস্তার গায়ে ধানের জাতের নাম, মিলের নাম, নিট ওজন, ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর তো আমরা লিখে থাকি।

তিনি বলেন, চালের দাম ওঠানামা করে। আজকে ১ হাজার টাকা হলে আগামীকাল ১০২০ টাকা হয়ে যাবে। যেমন দিনাজপুর, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ২৫ কেজি একটি চলের বস্তা চট্টগ্রামে এলে সেটার গায়ে দাম লেখা থাকবে ১৭০০ টাকা। দিনাজপুর, রাজশাহী থেকে এই চালের বস্তা চট্টগ্রাম আসতে খরচ পড়বে ১০০ টাকা। টেকনাফে যেতে আরো ১০০ টাকা খরচ পড়বে। তখন ১৭০০ টাকার ২৫ কেজি চালের বস্তাটি চট্টগ্রামের দোকানদারকে বিক্রি করতে হবে ১৮০০ টাকায় আর টেকনাফের ব্যবসায়ীকে বিক্রি করতে হবে সাড়ে ১৮শ বা ১৯০০ টাকায়। ক্রেতা বস্তার গায়ে লেখা থাকা ১৭০০ টাকার চাল ১৮শ বা ১৯শ টাকা কেন বিক্রি করা হচ্ছে তা জানতে চাইবে।

ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, হয়তো ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে এটি করতে যাচ্ছে সরকার। কেউ যাতে মজুতদারি করতে না পারে।

প্রসঙ্গত, বাজারে একই জাতের ধান থেকে উৎপাদিত চাল ভিন্ন ভিন্ন নামে ও দামে বিক্রি হচ্ছে। চালের দাম অযৌক্তিকভাবে বেড়ে গেলে মিলার, পাইকারি বিক্রেতা ও খুচরা বিক্রেতা একে অপরকে দোষারোপ করছেন। এতে ভোক্তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এই অবস্থার উত্তরণের জন্য চালের বাজারমূল্য সহনীয় ও যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে ধানের নামে যাতে চাল বাজারজাতকরণ করা হয় তা নিশ্চিত এবং মনিটরিংয়ের সুবিধার্থে চাল উৎপানদনকারী মিলারগণ গুদাম থেকে বাণিজ্যিকভাবে চাল সরবরাহের প্রাক্কালে চালের বস্তার উপর উৎপাদনকারী মিলের নাম, জেলা ও উপজেলার নাম, উৎপাদনের তারিখ, মিল গেট মূল্য, ধান ও চালের জাতের নাম উল্লেখ করতে খাদ্য মন্ত্রণালয় নতুন পরিপত্র জারি করে। এর ফলে ব্যবসায়ীদের কারসাজি বন্ধ ও বাজারে চালের দাম স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক হবে বলে মনে করেন ভোক্তারা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমুক্তির নেশায় মাকে খুন!
পরবর্তী নিবন্ধরেমাল কীভাবে এলো