মহামারীর এই প্রাদুর্ভাবের শুরুর সময় থেকে নিয়মিতই চাকরি হারিয়েছে হাজার হাজার চাকরিজীবী। আবার দেখা গেছে বিভিন্ন কোম্পানীগুলিও কর্মী ছাঁটাইয়ের মত কঠিন সিন্ধান্ত নিতে পিছপা হননি। অন্যদিকে বহু স্বনির্ভর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরও মহামারীর কারণে রুজিরোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। দেশের লাখ লাখ শিক্ষার্থী যেখানে কোচিং, টিউশন, রাইডিং ইত্যাদি করে নিজ খরচ তথা পরিবার পর্যন্ত চালাত, তাদেরও বর্তমানে অস্তিত্ব সংকট দেখা দিয়েছে। ফলশ্রুতিতে, বেকারত্বের উক্ত হার কোথায় গিয়ে যে ঠেকেছে তা সহজে অনুমেয়। বিবিএস জানিয়েছে এপ্রিল-জুলাই সময়ে দেশে বেকারত্ব ১০গুণ বেড়েছে। পরিস্থিতি এমন যে, চতুর্দিকে চাকরি প্রার্থীর জীবনধারণের পাথেয় হতে পারে একটা চাকরি।
হাজার হাজার শিক্ষার্থী নিয়মিতই উচ্চ শিক্ষা শেষ করে যুক্ত হচ্ছে চাকরির বাজারে প্রতিযোগী হয়ে। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা হিসেব করলে দেখা যায়, আমাদের দেশে শিশুরা প্রাথমিক শিক্ষার জন্য ভর্তিই হয় ৬/৭ বছর বয়সে। সেই শিক্ষার্থী মাধ্যমিক পরীক্ষা পাশ করতে করতে জীবনের ১৬ থেকে ১৭ বছর চলে যায়। তারপর ১৮/১৯ বছরে গিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে। তারপর ১৯/২০ বছরের দিকে উচ্চ শিক্ষার জন্য ভর্তি হয়, যেখান থেকে বের হতেই লাগে কমপক্ষে পাঁচ বছর। আবার দেখা যায় দেশের উচ্চ শিক্ষা পর্যায়ে সেশন জট নামের আশীর্বাদে কোন কারণ ছাড়াই কেড়ে নেয় এক/দুই বছর। যার ফলে, স্বভাবতই একজন শিক্ষার্থী চাকরির বাজারে আবেদন করার যোগ্যতা অর্জন করতেই তার জীবনের ২৫ থেকে ২৭ টা বছর পার করতে হয়। এদিকে করোনার কারণে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই সেশন জ্যামের কবলে পড়ে একটা বছর হারিয়ে ফেলছেন। আবার দেশের চাকরির বাজারে আবেদনেরও একটা সময়সীমা আছে ৩০ বছর (যদিও কিছু ক্ষেত্রে ৩২ করা হয়েছে)। অর্থাৎ উচ্চ শিক্ষা শেষে একজন শিক্ষার্থীর জীবনটা নির্ধারণ হয় সর্বোচ্চ ৩/৪ বছরের চাকরির যুদ্ধে।
এতকিছুর মাঝেও যখন একজন সম্মান শেষ করা শিক্ষার্থী চাকরির আবেদন করার জন্য চাকরি নিয়োগ খোঁজে তখনই দেখা যায় আবেদনের শর্ত হিসেবে জুড়ে দেওয়া হয় এত এত বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হতে হবে। উক্ত পদের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে অথবা অভিজ্ঞতা সম্পন্নদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। একটু সুস্থ মস্তিষ্ক নিয়ে চিন্তা করুন তো, যেখানে উচ্চ শিক্ষা শেষ করতেই একজন শিক্ষার্থীকে ২৫-২৭ বছর পার করে দিতে হয় বয়সসীমা আবার ৩০, সেখানে দুই, তিন, চার বছরের অভিজ্ঞতা খোঁজা কতটা যৌক্তিক কিংবা অমানবিক? অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই প্রয়োজন, তাই বলে এভাবে নতুনদের আবেদনেই কোনঠাসা করে ফেলাটা এক প্রকার জুলুম বৈ কি!