চসিক-সিডিএসহ ১১ প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে বেলার নোটিশ

বিপ্লব উদ্যানে বিদ্যমান সকল স্থাপনা উচ্ছেদের দাবি

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১ ডিসেম্বর, ২০২৩ at ৫:৪২ পূর্বাহ্ণ

নগরের বিপ্লব উদ্যানে সৌন্দর্যবর্ধনে সম্পাদিত চুক্তি বাতিল করতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, সিডিএ চেয়ারম্যান ও সিএমপি কমিশনার এবং তিন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ১১ প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে নোটিশ দিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। গতকাল বৃহস্পতিবার রেজিস্ট্রিকৃত ডাকযোগে এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে বলে জানান বেলার আইনজীবী অ্যাডভোকেট জাকিয়া সুলতানা।

এ নোটিশকে ‘নোটিশ অব ডিমান্ড ফর জাস্টিস’ বলে অবিহিত করে বেলা। এতে ৭ দিনের মধ্যে গৃহিত পদক্ষেপ অবহিত করার অনুরোধ করা হয়। অন্যথায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানানো হয়। নোটিশটি পাঠানো হয়েছেগৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও পরিবেশ বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ অদিপ্তরের মহাপরিচালক, সিডিএ চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক, পুলিশ কমিশনার এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রিফর্ম কনসোর্টিয়া লিমেটেডের মহাব্যবস্থাপক ও স্টাইল লিভিং আর্কিটেক্ট লিমিটেড এর চেয়ারম্যানের কাছে।

নোটিশে বলা হয়, বিপ্লব উদ্যানে বিদ্যমান সকল স্থাপনা উচ্ছেদপূর্বক সেখানে সর্বসাধারণের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার জোর দাবি জানাচ্ছে বেলা। একই সাথে বিপ্লব উদ্যানের সৌন্দর্যবর্ধনের নামে স্থাপনা নির্মাণ ও বর্ধিতকরণে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং রিফর্ম কনসোর্টিয়া লিমেটেডের মহাব্যবস্থাপক ও স্টাইল লিভিং আর্কিটেক্ট লিমিটেডের চেয়ারম্যানের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি বাতিল করে আইন ও আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী বিপ্লব উদ্যানের যথাযথ সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জোরালো দাবি জানাচ্ছে। এ বিষয়ে গৃহিত পদক্ষেপ আগামী ৭ সাত দিনের মধ্যে জানাতে বলা হয়।

প্রসঙ্গত ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর স্টাইল লিভিং আর্কিটেক্টস লিমিটেড ও রিফর্ম লিমিটেড নামে বেসরকারি দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে চসিক। বিপ্লব উদ্যানের সৌন্দর্যবর্ধনের নামে করা ২০ বছর মেয়াদি ওই চুক্তির পর উদ্যানে গড়ে তুলে ইটকংক্রিটের অবকাঠামো। তখন নগরবাসী অভিযোগ করেসৌন্দর্যবর্ধনের পরিবর্তে উল্টো সৌন্দর্যহানি ঘটে উদ্যানটির। এ অবস্থায় গত ২২ আগস্ট নতুন করে চুক্তি করে চসিক। এবার অবশ্য রিফর্ম কনসোর্টিয়াম নামে কেবল একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে। প্রতিষ্ঠানটি কিছুদিন আগে কাজও শুরু করেছে।

এদিকে বেলার নোটিশে বলা হয়, সবুজে ঘেরা ও রকমারি গাছের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর বিপ্লব উদ্যানের সবুজায়ন ধ্বংস করে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে স্থাপনা নির্মাণ করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। সমপ্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, উদ্যানে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য স্থাপনা বর্ধিতকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। সৌন্দর্যবর্ধনের নামে সিটি কর্পোরেশন দফায় দফায় সুপরিকল্পিতভাবে ও কৌশলে এ উদ্যানের সবুজায়ন ধ্বংস করছে।

দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী উদ্যান উন্মুক্ত স্থান অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যাবে না বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য হস্তান্তরও করা যাবে না উল্লেখ করে নোটিশে বলা হয়, বিল্পব উদ্যানে নির্মিত বাণিজ্যিক স্থাপনা উচ্ছেদপূর্বক তা সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে না পারা আইন বাস্তবায়নপ্রয়োগকারী সংস্থা হিসেবে আপনার (যাদের নোটিশ দেয়া হয়েছে) ব্যর্থতার পরিচায়ক।

নোটিশে বলা হয়, নগরবাসী উদ্যানে স্থাপনা নির্মাণ ও বর্ধিতকরণের বিপক্ষে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে। একই সাথে আইনী সহায়তা পেতে বেলা বরাবর আবেদন জানায়। আবেদনের প্রেক্ষিতে বেলা প্রতিনিধি উদ্যানটি সরেজমিন পরিদর্শন করে।

বিপ্লব উদ্যানে বিদ্যমান সকল স্থাপনা উচ্ছেদের দাবি বিএইচআরএফের : এদিকে নগরের বিপ্লব উদ্যানে বিদ্যমান সকল স্থাপনা উচ্ছেদ করে সেখানে সর্বসাধারণের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন (বিএইচআরএফ)। একই সঙ্গে মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহাসিক উদ্যানটির পরিবেশ রক্ষায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে অবিলম্বে চুক্তি বাতিলের আহ্বান জানিয়েছে বিএইচআরএফ। সংগঠনটির চেয়ারপার্সন অ্যাডভোকেট এলিনা খান ও মহাসচিব অ্যাডভোকেট জিয়া হাবীব আহসান গতকাল বৃহস্পতিবার এক যৌথ বিবৃতিতে এ আহ্বান জানান।

বিবৃতিতে বলা হয়, সৌন্দর্যবর্ধনের নামে স্থাপনা নির্মাণ ও বর্ধিতকরণে সম্পাদিত ‘জনস্বার্থ বিরোধী কালো চুক্তি’ বাতিল করে পরিবেশ আইন ও আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী উদ্যানটির যথাযথ সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি দেয়া হয় বিবৃতিতে।

বিএইচআরএফ নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী উদ্যান বা উন্মুক্ত স্থান অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যাবে না বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য হস্তান্তরও করা যাবে না। বিল্পব উদ্যানে নির্মিত বাণিজ্যিক স্থাপনা উচ্ছেদপূর্বক তা সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে না পারায় সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের ব্যর্থতার অত্যন্ত দুঃখজনক।

বিবৃতিতে বলা হয়, ২ একর আয়তন বিশিষ্ট ঐতিহাসিক বিপ্লব উদ্যানটি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের বিপ্লবী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের স্মরণে ১৯৭৯ সালে এ উদ্যান নির্মিত হয়। চট্টগ্রাম শহরের ব্যস্ততম এলাকা ২ নং গেইট এবং এর আশেপাশের এলাকায় বসবাসরত নগরবাসীর একমাত্র উন্মুক্ত সবুজ স্থান এ উদ্যান। নগরবাসীর নিকট এটি একটি অঙিজেন ভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত। উদ্যানটি নগরীর শিশু কিশোরদের খেলাধুলার ও বয়ঃবৃদ্ধদের অবসর যাপনের একটি অন্যতম স্থান। সবুজে ঘেরা ও রকমারি গাছের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এ উদ্যানের সবুজায়ন ধ্বংস করে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে স্থাপনা নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। স্থাপনা বর্ধিতকরণের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে চসিক। সৌন্দর্যবর্ধনের নামে চসিক দফায় দফায় সুপরিকল্পিতভাবে ও কৌশলে এ উদ্যানের সবুজায়ন ধ্বংস করা হচ্ছে। নগরবাসী উদ্যানে স্থাপনা নির্মাণ ও বর্ধিতকরণের বিপক্ষে মানববন্ধনসহ নানা প্রতিবাদী কর্মসূচী পালন করে আসছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসীতাকুণ্ডে স্বতন্ত্র হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন দিদার
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম-৮ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেন আবদুচ ছালাম