চসিকের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রকল্প অনুমোদন

এয়ারপোর্ট রোডসহ বিভিন্ন সড়ক ও অবকাঠামো উন্নয়ন মেয়রের অনুরোধে ৫শ কোটি টাকা মাফ করলেন প্রধানমন্ত্রী

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ৫ জানুয়ারি, ২০২২ at ৬:৫২ পূর্বাহ্ণ

ম্যাচিং ফান্ডের শর্ত ছাড়াই চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। ‘চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওতায় এয়ারপোর্ট রোডসহ বিভিন্ন সড়কসমূহ উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৪৯০ কোটি ৯৬ লাখ ৬৯ হাজার টাকা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গতকাল রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে এনইসিতে একনেক বৈঠক হয়।
প্রকল্পের উন্নয়ন প্রস্তাবনায় (ডিপিপি) এক হাজার ৯৯২ কোটি ৭৭ লাখ ৩৫ হাজার টাকা সরকারি অর্থায়নে, বাকি ৪৯৮ কোটি ১৯ লাখ ৩৪ হাজার টাকা ম্যাচিং ফান্ড হিসেবে চসিকের অর্থায়ন করার প্রস্তাবনা ছিল। তবে একনেক সভায় উপস্থিত সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী আর্থিক সক্ষমতা না থাকায় ম্যাচিং ফান্ডের অর্থের যোগান দেয়া সম্ভব হবে না বলে জানান। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন, প্রকল্পের সম্পূর্ণ অর্থ জিওবি ফান্ডে করে দেয়ার জন্য। মেয়রের অনুরোধের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী চসিককে জিরো ম্যাচিং ফান্ড করে দেন, যা সিটি মেয়রকে প্রধানমন্ত্রীর উপহার বলে মন্তব্য করেন অনেকে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিটি মেয়রের প্রশংসাও করেছেন। চট্টগ্রামের মেয়রের মধ্যে সততা ও আন্তরিকতা আছে বলে মন্তব্য করেন। এছাড়া মেয়র চট্টগ্রামের পরিবর্তন আনতে পারবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
জানতে চাইলে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী আজাদীকে বলেন, ম্যাচিং ফান্ড মাফ করার জন্য নেত্রীকে অনুরোধ জানিয়েছি। তিনি আমার অনুরোধ রেখেছেন। এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
তিনি বলেন, সভায় সিটি কর্পোরেশনের কি কি সমস্যা আছে সেগুলোও তুলে ধরেছি। যেমন সাড়ে ১১শ কোটি টাকার মতো দেনা আছে কর্পোরেশনের। ফলে কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে। তারপরও রাজস্ব আদায় করে গত ১০ মাস মোটামুটি উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছি। এর মধ্যে ম্যাচিং ফান্ডের টাকা কীভাবে পরিশোধ করব? তাই প্রকল্পের সম্পূর্ণ অর্থ জিওবি ফান্ড থেকে করে দেয়ার অনুরোধ করেছিলাম।
প্রকল্পে যা আছে : অনুমোদিত প্রকল্পে মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত। প্রকল্পের আওতায় বিমানবন্দর সড়ককে চার লেনে উন্নীত করার পাশাপাশি ৬০০ মিটার ওভারপাস নির্মাণ করা হবে। এছাড়া নগরের ৭৬৯ কিলোমিটার রাস্তার উন্নয়ন, ১৫২০ মিটার করে ৩৮টি ফুট ওভারব্রিজ, ২২৪ মিটার করে ১৪টি ব্রিজ, ৮৭ মিটার করে ২২টি কালভার্ট নির্মাণ করা হবে।
ডিপিপিতে প্রকল্পর গ্রহণের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বিভিন্ন রাস্তা উন্নয়নের মাধ্যমে যানজট নিরসন হবে। নগরবাসীর জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পাবে। ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণের মাধ্যমে পথচারীর নিরাপদে রাস্তা পারাপারের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়া শহরের প্রায় এক কোটি জনগণ প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে উপকৃত হবে। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের জন্য প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, প্রকল্প শতভাগ সরকারি অর্থায়ন করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এটা মেয়র মহোদয়কে প্রধানমন্ত্রীর উপহার। তিনি বলেন, সাধারণত একনেকে অনুমোদনের দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যে প্রকল্পের জিও (গভমেন্ট অর্ডার) পাওয়া যায়। সেটা পেলে আমরা দরপত্র আহ্বান করতে পারব। আশা করছি, চলতি মাসে জিও পাব এবং দুই-তিন মাসের মধ্যে দরপত্র আহ্বান করে কাজ শুরু করতে পারব। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে শহরের আনাচে-কানাচে সব সড়কে উন্নয়ন কাজ হবে।
উল্লেখ্য, প্রকল্পটি প্রথম ২০১৯ সালে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে চসিক। তখন প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় তিন হাজার ১৬৯ কোটি ৯৯ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। পরবর্তীতে ২০২০ সালের ২২ মার্চ প্রকল্প যাচাই কমিটির সভায় প্রকল্পের ডিপিপি সংশোধন করতে নির্দেশনা দেয় চসিককে। কয়েক দফা যাচাই-বাছাই শেষে ফিজিবিলিটি স্টাডি রিপোর্টসহ প্রকল্পটি সংশোধন করে ২০২১ সালের মার্চ মাসে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে চসিক। তখন প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় দুই হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা। সর্বশেষ পরিকল্পনা কমিশনের আপত্তিতে ব্যয় কমিয়ে দুই হাজার ৪৯০ কোটি ৯৬ লাখ ৬৯ হাজার টাকা ব্যয় প্রস্তাব করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশ্বশুরবাড়ি বেড়াতে এসে দুর্বৃত্তের গুলিতে জামাই খুন
পরবর্তী নিবন্ধথামছে না দুই শিশু কন্যার কান্না