চন্দনাইশে নৌকা ও মোমবাতি প্রার্থীর পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন

চন্দনাইশ প্রতিনিধি | শনিবার , ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ at ৮:৪১ অপরাহ্ণ

আগামীকাল ১৪ ফেব্রুয়ারি রবিবার চন্দনাইশ পৌরসভা নির্বাচন। এ নির্বাচনকে সামনে রেখে পৃথক সংবাদ সম্মেলন করেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান মেয়র মুহাম্মদ মাহাবুবুল আলম খোকা ও বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট মনোনীত মোমবাতি প্রতীকের প্রার্থী মুহাম্মদ ফারুক বাহাদুর।
পৃথক সংবাদ সম্মেলনে একে অপরের ওপর অভিযোগসহ তাদের কর্ম পরিকল্পনা তুলে ধরেন দু’প্রার্থীই।
আজ শনিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টায় নৌকার প্রার্থী মাহাবুবুল আলম খোকা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “২০১৫ সালে নেত্রী যখন আমাকে নৌকার প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছিলেন তখন দলীয় নেতাকর্মীদের আপ্রাণ চেষ্টায় অলি পরিবারকে পরাজিত করে প্রথম নৌকার প্রার্থী হিসেবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলাম। তখন চন্দনাইশ পৌরসভা ছিল দুর্নীতির আখড়া। নিয়মশৃংখলা কিছুই ছিল না।”
তিনি বলেন, “মেয়রের দায়িত্ব নিয়ে পৌরসেবক হিসেবে মাত্র ৯ মাসের মধ্যেই চন্দনাইশ পৌরসভাকে প্রথম শ্রেণীর পৌরসভায় উন্নীত করি। জনগণকে তড়িৎ সেবা দান নিশ্চিত করেছি। ২০১৫ সালের পূর্বে চন্দনাইশ পৌরসভা ছিল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের। এটা কারো জানা ছিল না। এই পৌরসভা থেকে কোনো ভ্যাট মন্ত্রণালয়ে যায়নি। আমি দায়িত্ব নিয়েই ২ বছরের মধ্যে পৌরসভাকে দুর্নীতিমুক্ত করি এবং সকল কর্মচারীকে নিয়মশৃংখলার মধ্যে নিয়ে আসি। দৃষ্টিনন্দন পৌরসভা করার লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রকল্প প্রস্তুত করে ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেছি। পৌরবাসীর দাবি ছিল পাবলিক টয়লেট করা এবং বাগিচাহাট, খানহাট ও চন্দনাইশ সদরে ৩টি দ্বিতল বিশিষ্ট পাবলিক টয়লেটের কাজ শীঘ্রই শুরু হচ্ছে। প্রতিটি টয়লেটের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫০ লাখ টাকা। একই সাথে ৪ তলা বিশিষ্ট পৌর মার্কেট, দ্বিতল বিশিষ্ট খানহাট বাজার নির্মাণের প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। এছাড়া বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ১২৫ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।”
তিনি এবারও নির্বাচিত হলে পুরো পৌর এলাকাকে সড়ক বাতির আওতায় আনা, পৌর মার্কেট নির্মাণ, শিশু মাতৃসদন কেন্দ্র স্থাপন, টেকনিক্যাল কলেজ, মিনি স্টেডিয়াম, পুরো পৌর এলাকায় ড্রেনেজ ব্যবস্থা, কালভার্ট স্থাপন, আয়বর্ধক কিছু প্রকল্প গ্রহণ, বিনোদনের জন্য দৃষ্টিনন্দন পার্ক নির্মাণ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম সিরাজুল ইসলাম রহমানীর নামে হাতিরঝিলের মতো একটি দৃষ্টিনন্দন সড়ক নির্মাণ করা এবং অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করতে এবারও পৌরবাসীর ভোট প্রার্থনা করেন। গত ১২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় ইসলামী ফ্রন্ট প্রার্থী ফারুক বাহাদুরের বাড়িতে হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, “গত শুক্রবার প্রচারণার শেষ দিনে প্রত্যেক ওয়ার্ড থেকে মিছিল নিয়ে এসে কেন্দ্র থেকে একত্রিত হয়ে একটি মিছিল বের করি। দক্ষিণ হারলা থেকে মিছিল নিয়ে ফারুক বাহাদুরের বাড়ির পাশ দিয়ে আসার সময় তার বাড়ির ছাদ থেকে মিছিলকে লক্ষ্য করে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। প্রতিরোধের সময় তার বাড়ি থেকে ২০টির বেশি ক্যামেরা সেই দৃশ্য ধারণ করছিল। এ সময় তারা ক্যামেরাকে লক্ষ্য করে পাল্টা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। সেসময় তার মায়ের মাথায় সামান্য আঘাতপ্রাপ্ত হয় যেটি ছিল ফারুক বাহাদুরের পূর্ব পরিকল্পিত একটি ঘটনা, সাজানো নাটক। এছাড়া তিনি তার বাড়ির পাশের ভোট কেন্দ্রের সাথে সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে তার ঘরে মনিটর রাখার মতো ঘটনা ঘটিয়েছেন। যে ব্যাপারে আমি রিটার্নিং অফিসারকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। এছাড়া তিনি বিএল বড়ুয়া স্কুলের পাশ ঘেঁষে যে বাড়িটি নির্মাণ করেছেন সেই বাড়ির নকশা পৌরসভার অনুমোদন নেই। তিনি চোরাই স্বর্ণ ব্যবসায়ী। তার কারণে অনেক ছেলেকে জেলে যেতে হয়েছে।”
এলডিপি প্রার্থী সম্পর্কে তিনি বলেন, “পৌরসভার একজন ঠিকাদার হলো এলডিপি প্রার্থী আইনুল কবির। প্রাক্তন মেয়র আইয়ুব কুতুবী তার শেষ সময়ে ২৫টি টেন্ডারের মধ্যে ২৪টি টেন্ডারের কাজ আইনুল কবিরকে পাইয়ে দিয়েছিলেন।”
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হাবিবুর রহমান, পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক এম কায়সার উদ্দীন চৌধুরী, তৌহিদুল ইসলাম রহমানী, যুবলীগের আহ্বায়ক তৌহিদুল আলম, আওয়ামী লীগ নেতা নবাব আলী, যুবলীগ নেতা এসএম মুছা তছলিম, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সেলিম হোসেন প্রমুখ।
অপরদিকে দুপুরে ইসলামী ফ্রন্ট প্রার্থী মুহাম্মদ ফারুক বাহাদুর সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “প্রতিটা মানুষ তার নাগরিক অধিকার নিয়ে বাঁচতে চায়। আমিও তার ব্যতিক্রম নই। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে গণতান্ত্রিক চেতনাকে শাণিত করার মানসে মেয়র প্রার্থী হয়েছি কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় প্রতিপক্ষ আমার নিশ্চিত জয় দেখে ঈর্ষান্বিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দলের শ্লোগান দিয়ে একদল দুর্বৃত্ত গত শুক্রবার মাগরিবের নামাজ চলাকালে আমার বাড়িতে হামলা চালিয়ে আমার বৃদ্ধ মাতাকে আহত করেছে। আমাকে নির্বাচন থেকে বিরত রেখে একটি রাজনৈতিক দলের বিজয় নিশ্চিত করতে নির্বাচনী পরিবেশ নষ্টসহ নেতাকর্মীদের ভয়-ভীতি দেখানোর লক্ষ্যে এ ধরনের হামলা।”
তিনি এ ধরনের হামলা ন্যাক্কারজনক বলে দাবি করে এর তীব্র নিন্দা জানান। সেই সাথে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন থেকে মুক্তির জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত মাঠ ছেড়ে যাবেন না। চন্দনাইশ পৌরসভার ভোটাররা ব্যালটের মাধ্যমে সকল অন্যায়ের জবাব দিবে।” এছাড়া বর্তমান মেয়র তার বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ এনেছেন সবগুলোকেই তিনি ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেন।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব স.উ.ম আবদুস সামাদ, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা সোলাইমান ফারুকী, প্রচার সচিব মাওলানা রেজাউল করিম তালুকদার, অধ্যক্ষ মাওলানা খাজা মোবারক আলী, ফয়েজ উল্লাহ খতিবী, মাওলানা সোহেল আনচারী, হাফেজ আহমদ হোসেন, আলমগীর বঈদী, কেন্দ্রীয় ছাত্রসেনার সভাপতি জিএম শাহাদাত হোসেন মানিকসহ বিপুল সংখ্যক দলীয় নেতৃবৃন্দ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসরকারের বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে : আমীর খসরু
পরবর্তী নিবন্ধজাপানে ৭ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্প