চট্টগ্রাম বন্দরে ইতিহাস

১৩৫ বছর পর ভিড়ল ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে গতি বাড়বে, কমবে পণ্য পরিবহন খরচ

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১৬ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৭:৫২ পূর্বাহ্ণ

প্রতিষ্ঠার ১৩৫ বছর পর বড় জাহাজ ভিড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে। গতকাল বিকেলে ২০০ মিটার লম্বা এবং ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ নোঙর করেছে বন্দরের নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনালের এক নম্বর বার্থে। বড় জাহাজ বার্থিংয়ের মাধ্যমে বৈশ্বিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব বাড়বে। বন্দর কর্তৃপক্ষের বড় জাহাজ ভিড়ানোর এই উদ্যোগ দেশের অর্থনীতিসহ আমদানিরপ্তানি বাণিজ্যে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা যায়, ১৮৮৭ সালে পোর্ট কমিশনার্স অ্যাক্ট প্রণয়ন করে ব্রিটিশ সরকার। ১৮৮৮ সালের ২৫ এপ্রিল তা কার্যকর হয়। ইতোমধ্যে ১৩৫ বছর গত হয়েছে। মাত্র দুটি মুরিং টাইপের জেটি নিয়ে যে কার্যক্রম শুরু হয়েছিল দিনে দিনে তা বিশাল কর্মযজ্ঞে পরিণত হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর বর্তমানে দেশের আমদানিরপ্তানি বাণিজ্যের সিংহভাগ নিয়ন্ত্রণ করে। বছরে গড়ে চার হাজারের বেশি জাহাজের আনাগোনা এই বন্দরে। গত বছর ৩২ লাখ টিইইউএসের বেশি কন্টেনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। সত্তরের দশকে চট্টগ্রাম বন্দরে ১৬০ মিটার লম্বা এবং ৭.৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়ানো হতো। ১৯৮০ সালে এসে প্রথম ১৭০ মিটার লম্বা এবং সাড়ে ৮ মিটার ড্রাফটের জাহাজ বার্থিং দেয়া হয়। ১৯৯০ সালে এসে ড্রাফট না বাড়িয়ে ল্যান্থ বাড়িয়ে ১৮০ মিটার লম্বা এবং সাড়ে ৮ মিটার ড্রাফটের জাহাজ বার্থিং দেয়া শুরু হয়। ১৯৯৫ সালে এসে শুরু হয় ১৮৬ মিটার লম্বা এবং ৯.২ মিটার ড্রাফটের জাহাজ। ২০১৪ সালে এসে বার্থিং দেয়া হয় ১৯০ মিটার লম্বা এবং ৯ মিটার ড্রাফটের জাহাজ। প্রায় দশ বছর পর আজ থেকে নতুন করে ২০০ মিটার লম্বা এবং ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়ানোর কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। গতকাল বিকাল ৫টার দিকে মার্শাল আইল্যান্ডের পতাকাবাহী এমভি কমন এটলাজ নামের একটি মাদার ভ্যাসেল নিরাপদে বন্দরের নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনালের এক নম্বর বার্থে নোঙর ফেলেছে। জাহাজটিতে বেসরকারিভাবে আমদানিকৃত ৩৬ হাজার ৪২৭ টন চিনি রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দরে এতদিন যে ধরনের জাহাজ ভিড়ানো হতো শিপিং বাণিজ্যে সেগুলোকে মাঝারি আকৃতির জাহাজ বলা হয়। ১৯০ মিটার লম্বা বা ৯.৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজে ২২শ থেকে ২৬শ টিইউএএস কন্টেনার বোঝাই করা যায়। মাত্র আধা মিটার ড্রাফট বৃদ্ধি এবং ১০ মিটার ল্যান্থ বৃদ্ধি করে ১০ মিটার ড্রাফট এবং ২০০শ মিটার ল্যান্থের জাহাজে ৩৮শ টিইইউএস পর্যন্ত কন্টেনার বোঝাই করা যায়। ১০ মিটার ল্যান্থ বাড়ার কারণে গড়ে ১ হাজার কন্টেনার বাড়তি পণ্য বোঝাই করার সুযোগ তৈরি করবে। দুইশ মিটার লম্বা ও ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজকে ‘বড়’ জাহাজ বিবেচনা করা হয়। চট্টগাম বন্দরে আজ থেকে ১০ মিটার ড্রাফট এবং ২শ মিটার ল্যান্থের জাহাজ ভিড়বে। যেখানে খোলা পণ্যবাহী জাহাজে বর্তমানের তুলনায় গড়ে ১০ হাজার টনের বেশি খোলা পণ্য এবং গড়ে ১ হাজার টিইইউএস কন্টেনার বেশি পরিবহন করা সম্ভব হবে। আমদানিরপ্তানি বাণিজ্যে তা গতি বাড়বে। পাশাপাশি পণ্য পরিবহন খরচ কমাবে।

এতদিন এই ধরনের জাহাজকে বহির্নোঙরে অবস্থান করে লাইটারেজ জাহাজের মাধ্যমে পণ্য খালাস করতে হতো; যা ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ। আজ থেকে বড় জাহাজ সরাসরি বন্দরের জেটিতে বার্থিং নিয়ে পণ্য খালাস করে চলে যাবে।

এই কার্যক্রমের শুরুতে কয়েকদিন জেনারেল কার্গোবাহী জাহাজ ভিড়ানো হবে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বিশ্বের শিপিং সেক্টরে বড় জাহাজ ভিড়ানোর ব্যাপারটি ঘোষণা দেয়া হলে ক্রমান্বয়ে ২শ মিটার লম্বার এবং ১০ মিটার ড্রাফটের কন্টেনার জাহাজ ভিড়ানো শুরু হবে। এতদিন চট্টগ্রাম বন্দরে ১৯০ মিটারের চেয়ে বেশি লম্বা কোনো কন্টেনার জাহাজ আসত না। নতুন এই উদ্যোগে বড় কন্টেনার জাহাজের জন্যও চট্টগ্রাম বন্দরের দুয়ার খুলছে।

এমভি কমন এটলাজ গতকাল বন্দরে নোঙর করলেও বড় জাহাজ ভিড়ানোর কার্যক্রম আজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে। অনুষ্ঠানে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বন্দর চেয়ারম্যান ও সদস্যসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বন্দর ব্যবহারকারীরা উপস্থিত থাকবেন।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক আজাদীকে বলেন, বড় জাহাজ ভিড়ানোর কার্যক্রম শুরু করছি। শুরুতে নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনাল, চিটাগাং কন্টেনার টার্মিনাল এবং ১০, ১১ ও ১২ নম্বর জেটিতে ১০ মিটার ড্রাফট এবং ২শ মিটার লম্বা বড় জাহাজ ভিড়ানোর কার্যক্রম শুরু হবে, যা দেশের কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ে ইতিহাসে নতুন মাত্রা যোগ করবে।

প্রসঙ্গত, কর্ণফুলী নদী ও বন্দর চ্যানেল নিয়ে সামগ্রিক একটি জরিপ ও গবেষণা কাজ করেছে লন্ডনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এইচ আর ওয়েলিংপোর্ট। তাদের গবেষণা প্রতিবেদন ও পরামর্শের ভিত্তিতে ১০ মিটার ড্রাফটের ২শ মিটার লম্বা জাহাজ ভিড়ানোর উদ্যোগ নেয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধউঠে গেল আমানতের সুদে সীমা
পরবর্তী নিবন্ধটানেলের গাড়ি কোন পথে যাবে কক্সবাজার