চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোয় গুরুত্ব

কাল ১৩৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ২৪ এপ্রিল, ২০২২ at ৫:২৫ পূর্বাহ্ণ

দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য গতিশীল রাখতে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। বন্দরের সক্ষমতার ওপর দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের গতিশীলতাসহ সার্বিক অর্থনীতি বহুলাংশে নির্ভরশীল। তাই পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনাল দ্রুত চালু করা, বে টার্মিনাল নির্মাণসহ নতুন জেটি ও ইয়ার্ড নির্মাণের পাশাপাশি কিছু জরুরি পদক্ষেপ না নিলে গতি ধরে রাখা কঠিন হবে। আগামীকাল চট্টগ্রাম বন্দরের ১৩৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীকে সামনে রেখে ব্যবহারকারীদের পক্ষ থেকে সক্ষমতা বাড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।
বন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য ক্রমাগত বাড়ছে। ৭ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের মধ্য দিয়ে ১৯৭৭ সালে শুরু হয়েছিল চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেনার হ্যান্ডলিং, যা বর্তমানে ৩২ লাখ টিইইউএস ছাড়িয়ে গেছে। কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ে বন্দরের স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি ১৫ শতাংশের কাছে। বিপুল সংখ্যক কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের পাশাপাশি প্রায় ১১ কোটি টন খোলা পণ্য হ্যান্ডলিং করতে হয় বন্দরকে।
এই কর্মযজ্ঞ সামলানোর জন্য চট্টগ্রাম বন্দরকে প্রতিনিয়ত নিজেকে তৈরি করতে হচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্য যে হারে বাড়ছে বিদ্যমান বন্দরকে সেভাবে বাড়ানো সম্ভব নয় জানিয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতে করে নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ করে বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
চট্টগ্রাম বন্দর উন্নয়ন ও গবেষণা পরিষদের সভাপতি এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাবেক সদস্য কমডোর (অব.) জোবায়ের আহমেদ বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো এখন সময়ের দাবি। বিদ্যমান বন্দর দিয়ে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের চাহিদা বেশি দিন মোকাবেলা করা সম্ভব হবে না। এর ওপর প্রতিবেশী দেশ ভারতের সাতটি রাজ্যকে ট্রানজিট প্রদান করার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। এই ট্রানজিট আমাদের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আমরা লাভবান হব। কিন্তু ওই সাত প্রদেশকে ট্রানজিট দিতে হলে যে সক্ষমতা দরকার তার জন্য চট্টগ্রাম বন্দরকে এখনি প্রস্তুতি নিতে হবে।
চট্টগ্রাম বন্দরকে নিয়ে দীর্ঘ গবেষণার প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনাল দ্রুত চালু করার কোনো বিকল্প নেই। একই সাথে বে টার্মিনাল নির্মাণ দ্রুত শেষ করতে হবে। এই দুটি টার্মিনাল দ্রুত অপারেশনে আনা না গেলে বন্দরের সক্ষমতা প্রশ্নের মুখে পড়বে। তিনি বলেন, বন্দরের টার্মিনালগুলোতে অভিজ্ঞ অপারেটর নিয়োগ করার ওপরও গতি নির্ভর করে।
বন্দরে জাহাজের ড্রাফট ও ল্যানথ বাড়ানোর উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর উন্নয়ন ও গবেষণা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহফুজুর রহমান খান বলেন, নাব্যতা রক্ষায় সদরঘাট থেকে কর্ণফুলী নদীর মোহনা পর্যন্ত খনন কাজ জোরদার করতে হবে। তিনি মাতারবাড়ী বন্দরের কাজও দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ করে অভিজ্ঞ অপারেটর নিয়োগের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। কন্টেনার হ্যান্ডলিং ব্যবস্থাকে পুরোপুরি ডিজিটালাইজ করা, নিলামযোগ্য কন্টেনার কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে দ্রুত সরিয়ে ফেলা, এলসিএল কন্টেনার বন্দরের ইয়ার্ডে আনস্টাফিং করার পরিবর্তে বাইরে করার পরামর্শ দেন তিনি।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সিংহভাগ কন্টেনার পরিবাহিত হয় সড়কপথে। সড়কপথের পরিবর্তে রেল ও নৌপথ ব্যবহার করে ঢাকা অঞ্চলের কন্টেনার পরিবহন বাড়ানো গেলে সক্ষমতার ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বর্তমানে বছরে ৭০/৭৫ হাজার টিইইউএস কন্টেনার রেলপথে পরিবাহিত হয়। এটিকে কমপক্ষে ৫ লাখ টিইইউএসে উন্নীত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। একই সাথে পানগাঁও টার্মিনালে কন্টেনার পরিবহন বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়া হলে বন্দরের সার্বিক পরিস্থিতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তিনি বলেন, চট্টগ্রামকে বন্দরকে দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক চাহিদাও মেটাতে হয়। এটি মাথায় রেখে বন্দরের উন্নয়নে সার্বিক পদক্ষেপ নিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহাতাহাতিতে পণ্ড বিএনপির সদস্য সংগ্রহ অভিযান
পরবর্তী নিবন্ধলালদীঘি অভিমুখী যান চলাচলে বিধি-নিষেধ