চট্টগ্রাম আদালত ভবন এলাকা যেন গাড়ির হাট

যানবাহনের চাপে দশ হাজারের বেশি মানুষের নিত্য ভোগান্তি

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ৩০ অক্টোবর, ২০২০ at ৬:২৯ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের পরীর পাহাড়স্থ আদালত ভবন এলাকা যেন গাড়ির হাট। আদালত ভবনের সড়কের দু’পাশ জুড়ে শত শত প্রাইভেটকার, মোটর সাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনের সকাল-বিকাল যেন মেলা বসে। রাস্তা দখল করে রয়েছে ভ্রাম্যমাণ বাজারও। এতে প্রায় সময় যানজট লেগে থাকায় চট্টগ্রাম আদালত ভবনে আসা অন্তত ১০ হাজারের অধিক মানুষ দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। সমস্যায় পড়ছে আদালতে আসামি বহনকারী যানবাহনও। নগরীর কোতোয়ালী থানা এলাকায়স্থ পরীর পাহাড়ে পুরাতন আদালত ভবন এলাকায় রয়েছে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, নতুন আদালত ভবন, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কার্যালয়, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির ছয়টি ভবন ও জেলা রেজিষ্ট্রার কার্যালয়।
চট্টগ্রামে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক ও বিচারিক কার্যালয় এলাকায় প্রশাসনিক ও বিচারিক কর্মকর্তা, আইন কর্মকর্তা,কর্মচারী, সেবা ও বিচার প্রার্থী মিলে অন্তত দৈনিক ১০ হাজারের ওপরে মানুষের যাতায়াত রয়েছে। কিন্তু সেখানে পথচারী ও যানবাহন চলাচলের জন্য রয়েছে মাত্র কয়েক ফুটের সরু সড়ক।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের সামনে ও নতুন আদালত ভবন ও চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির একটি ভবনে কয়েকটি গাড়ি পার্কিং করার জায়গা রয়েছে। এসব পার্কিং এর জায়গা বিচারক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সিনিয়র আইনজীবীর গাড়ি ও সরকারি যানবাহনগুলোর জন্য বরাদ্দ থাকে। এছাড়া আদালত ভবনে আসা দৈনিক ১০ হাজারের মানুষের একটি অংশের সাথে আসছে আরও কয়েকশ’ প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, সিএনজি, মোটর সাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন।
সরেজমিন জানা গেছে, আদালত ভবন এলাকায় চাহিদার তুলনায় পার্কিং জায়গা অপ্রতুল হওয়ায় এসব যানবাহনগুলো সরু সড়কের দু’পাশ দখল করে পার্কিং করছে। আইনজীবী সমিতির যে কয়েকটি ভবন রয়েছে সেগুলোর প্রত্যেকটির সামনে রয়েছে মোটর সাইকেল স্ট্যান্ড। পুরো সড়ক দখল করে পার্কিং করে রাখা হচ্ছে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, সিএনজিসহ বিভিন্ন যানবাহন। চট্টগ্রাম পুরাতন আদালত ভবনের সামনের ফাঁকা জায়গায় লেগে থাকছে প্রাইভেট গাড়ির জট। আবার পার্কিং জায়গা না থাকায় নতুন আদালত ভবনের ভেতরে রাখা হচ্ছে বিভিন্ন যানবাহন।
সড়কের কিছু অংশে বসা ভ্রাম্যমাণ বাজার বাড়াচ্ছে আরও ভোগান্তি। শুটকি থেকে শুরু করে রকমারি পণ্যে নিয়ে বসে ভ্রাম্যমাণ বাজার। এতে চট্টগ্রাম আদালত ভবনে যাওয়ার জন্য নিচ থেকে ওপরে উঠার সড়কটির দু’পাশেই সবসময়ই লেগে আছে যানজট। এতে ভোগান্তির যেন শেষ নেই আদালত ভবনে আসা সব ধরনের মানুষের।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে বিভাগীয় কমিশনার, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার ও পরিচালকের (স্থানীয় সরকার) জন্য ৭টি গাড়ি ও একটি মাইক্রোবাস রয়েছে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ৯টি যানবাহন থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। চট্টগ্রাম আদালতসহ সবগুলো মিলে সরকারি যানবাহনের সংখ্যা ১শ’ হবে। কিন্তু এগুলোর বাইরে আরও দুই থেকে তিনশ’ যানবাহন আদালত এলাকায় পার্কিং করা হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এসব যানবাহনের বেশিরভাগরই মালিক প্রশাসনিক ও আইন কর্মকর্তা, আইনজীবীদের পাশাপাশি সেবা নিতে আসা লোকজনের। দীর্ঘদিন ধরে এ সমস্যা চলে আসছে। এসব বিষয়ে যথাযথ কোনো উদ্যোগ বাস্তবায়ন হতে দেখা যাচ্ছে না।
এবিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) এ জেড এম শরীফ হোসেন আজাদীকে বলেন, আদালত ভবন এলাকায় যানবাহন শৃক্সখলায় আনতে আমাদের বিভিন্ন পরিকল্পনা ও চেষ্টার শেষ নেই। কিন্তু এটা একটি জনসমাগম এলাকা হওয়ায় এখানে এত লোকের যাতায়াত, যা নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন। এরপরও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি বলে জানান জেলা প্রশাসনের এই কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে মাঠে নামার প্রক্রিয়া শুরু করেছে বলে জানানো হয় সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে। চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ এইচ এম জিয়াউদ্দিন এ ধরনের দুর্ভোগের বিষয়টি স্বীকার করে গতকাল আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রাম আদালত ভবন এলাকায় যানবাহন শৃক্সখলায় আনতে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত একটি বৈঠকে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। রাস্তা দখল করে পার্কিং করা বিভিন্ন যানবাহনের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা ও জরিমানা করার একটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া রাস্তার ওপর বসা ভ্রাম্যমাণ বাজারগুলো উচ্ছেদের জন্য অভিযান পরিচালিত হবে। আগামী রোববার থেকে এ অভিযান শুরুর কথা জানান চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির এই নেতা।
এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাডভোকেট এ এইচ এম জিয়াউদ্দিন বলেছেন, বর্তমানে মোটর সাইকেল পার্কিং এর জন্য সামান্য কিছু জায়গা ইজারা দেয়া হয়েছে। কিন্তু সেখানে গাড়িগুলো না রেখে এলোমেলোভাবে রাস্তায় পার্কিং করে রাখা হচ্ছে।
সরেজমিন জানা যায়, আইনজীবী সমিতির একটি ভবনের নিচে ২০/২৫ টি গাড়ি রাখার জায়গা রয়েছে। কিন্তু এসব পার্কিং বরাদ্দ থাকে আইনজীবীদের জন্য। এছাড়া একটিতে ভবনের সামনে ফাঁকা জায়গায় মোটর সাইকেল রাখার পার্কিং সুবিধা রয়েছে। কিন্তু তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।
আইনজীবীদের একটি অংশ বলছেন, আদালত ভবন এলাকায় পথচারীদের চলাচলের জন্য মূল সড়ক থেকে কয়েকটি ফুটওভার ব্রিজ তৈরি হলে এ ধরনের ভোগান্তি কমে যাবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধফ্রান্সে গির্জায় ছুরি হামলা নিহত ৩
পরবর্তী নিবন্ধডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রূপাকে দুদকে তলব