চট্টগ্রামে ৪০ প্রজাতির মাছ প্রসেস করে পাঠানো হচ্ছে ঢাকায়

বড় সাইজের মাছও আধা বা এক কেজি প্যাকেট করে ১৬টি পয়েন্টে বিক্রি ‘রেডি টু কুক ফিশ’ প্রকল্পে ব্যাপক সাড়া

হাসান আকবর | বুধবার , ২৪ এপ্রিল, ২০২৪ at ৬:১৮ পূর্বাহ্ণ

কাপ্তাই লেক এবং বঙ্গোপসাগরের ৪০ প্রজাতির মাছ চট্টগ্রামে প্রসেস করে পাঠানো হচ্ছে ঢাকায়। ‘রেডি টু কুক ফিশ’ হিসেবে সরাসরি রান্নার উপযোগী করে পাঠানো এই মাছ ঢাকার ১৬টি পয়েন্টে জমজমাটভাবে বিক্রি হচ্ছে। বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি) আগামীতে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে এবং অনলাইনে এই মাছ বাজারজাত করবে। কাপ্তাই লেকের ঢাউশ সাইজের রুই মাছ যারা কিনতে পারছেন না, তারা চাইলে আধা কেজি এক কেজি প্যাকেটেই এই মাছ কিনতে পারবেন। বড় লাক্ষা মাছের স্বাদ যারা ভুলতে বসেছেন তাদের রান্নার চুলায় পৌঁছে যাবে আধা কেজি কিংবা এক কেজি মাছ। একটি বড় মাছের যে কোন অংশ পছন্দ করারও সুযোগ থাকছে বিএফডিসির নয়া নতুন ধারার এই প্রজেক্টে। ভবিষ্যতে ‘রেডি টু কুক’ প্রসেসে চট্টগ্রামের এই মাছ বিদেশেও রপ্তানি হবে।

বিএফডিসি সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশের মৎস্য ভাণ্ডারের একটি বড় অংশের যোগানদাতা চট্টগ্রাম। চট্টগ্রামের সাগর এবং কাপ্তাই লেকসহ বিভিন্ন নদীতে উৎপাদিত মাছ বেশ জনপ্রিয়। এছাড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের হাওরবাওড় ও নদ নদীতে প্রচুর মাছ হয়। কিন্তু যথাযথ প্রক্রিয়া এবং পদক্ষেপের অভাবে দেশের এক অঞ্চলের মাছের স্বাদ অন্য অঞ্চলের মানুষ সহজে নিতে পারে না। ইচ্ছে করলেও রাজশাহী অঞ্চলের জনপ্রিয় মাছগুলোর স্বাদ চট্টগ্রামের মানুষ, অপরদিকে চট্টগ্রামের কাপ্তাই লেকের মাছের স্বাদ রাজশাহীর মানুষ নিতে পারে না। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ মৎস্য উৎপাদনে বিপ্লব সাধন করেছে। কিন্তু উৎপাদন যেভাবে বেড়েছে সেভাবে বাজারজাত বা রপ্তানি বাড়েনি। বিশ্বের বহু দেশ মাছ রপ্তানিতে বেশ পোক্ত অবস্থান করলেও সম্ভাবনা থাকা স্বত্ত্বেও বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে। বিশ্বের মাছ উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান বর্তমানে তৃতীয়, অথচ মাছ রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান ২১তম। শুধুমাত্র পরিকল্পনা গ্রহণ এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের অভাবে সম্ভাবনাময় এই খাতে বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন দেশে মাছের উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি মাছ বাজারজাতকরণ এবং রপ্তানিতেও বড় ধরণের পরিবর্তন আনতে চায়। আর এ জন্যই একেবারে নয়া ধাচের ‘রেডি টু কুক ফিশ’ (রান্নার জন্য পুরোপুরি তৈরি) প্রকল্প গ্রহণ করেছে।

নয়া এই প্রকল্পের আওতায় কাপ্তাই লেক এবং বঙ্গোপসাগর থেকে সংগৃহীত ৪০ প্রজাতির মাছ স্বাস্থ্যসম্মতভাবে মেশিনের সাহায্যে কেটে এবং পরিস্কার করে সরাসরি চুলায় দেয়ার উপযোগী করে বাজারজাত করা হচ্ছে। আধা কেজি এবং এক কেজির প্যাকেটজাত করা হচ্ছে মাছ। এতে করে কাপ্তাই লেক কিংবা সাগরের বড় বড় মাছগুলো যেগুলো ইচ্ছে করলেও পুরোটা অনেকে কিনতে পারেন না সেগুলো তারা আধা কেজি কিংবা এক কেজি কিনতে পারবেন। অপরদিকে কিছু ছোট মাছ যেগুলো বাসায় নিয়ে পরিস্কার করে রান্নার উপযোগী করতে বহু সময় লেগে যায় সেগুলোও একেবারে তৈরি করে প্যাকেটজাত করা হচ্ছে। পুরো দেশ থেকে সংগ্রহ করা মাছ চট্টগ্রামের মৎস্য বন্দরের প্রসেসিং সেন্টারে প্রসেস করার পর মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন ঢাকার যাত্রাবাড়ী নিয়ে যাচ্ছে। ওখান থেকে পরবর্তীতে ঢাকার ১৬টি পয়েন্টে এসব মাছ বিক্রি করা হচ্ছে। সম্প্রতি চালু করা মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের এই কার্যক্রম ব্যাপক সাড়া ফেলেছে এবং প্রচুর মাছ বিক্রি হচ্ছে। আগে ভর্তুকি দিয়ে চালানো প্রতিষ্ঠানগুলো এই উদ্যোগের ফলে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের নয়া চেয়ারম্যান হিসেবে সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার দায়িত্ব নেয়ার পর নয়া নয়া পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছেন। মাছের উৎপাদন এবং বাজার সম্প্রসারণের জন্য নেয়া পদক্ষেপগুলোর সুফল মিলতে শুরু করেছে।

মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের পদস্থ একজন কর্মকর্তা জানান, আমরা কর্মজীবী নারী এবং সাধারণ মানুষদের জন্য এই বিশেষ প্রকল্প হাতে নিয়েছি। যাদের হাতে সময় নেই, কিংবা মাছ পরিস্কার করার ঝামেলা সহ্য করতে চান না তারা আমাদের এই রেডি টু কুক ফিশের ফলে অনেক ঝঞ্জাট থেকে বেঁচে যাবেন। তবে যারা আস্ত মাছ কিনতে পারেন না তারাও আমাদের এই পদক্ষেপের ফলে উপকৃত হবেন। পুরো মাছ না কিনে আধা কেজি মাছ কেনার সুযোগ বহু মানুষকেই ভুলে যাওয়া মাছের স্বাদ মনে করিয়ে দেবে।

সম্প্রতি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আবদুর রহমান রেডি টু কুক ফিশ প্রকল্পের উদ্বোধন করে বলেছেন, এর সুফল দেশের মৎস্য সেক্টরে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। তিনি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে রেডি টু কুক ফিশের অনেক চাহিদা বলে উল্লেখ করে বলেন, বিদেশের বাজারে রেডি টু কুক ফিশের ক্ষেত্রে কোন কোন ধরনের মাছের চাহিদা রয়েছে, সেটা খুঁজে বের করতে হবে। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এই ব্যাপারে নির্দেশনা প্রদান করেন। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে রেডি টু কুক ফিশ প্রস্তুত করতে পারলে এসব পণ্য রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হবে। রেডি টু কুক ফিশ শুধু মাছ বাজারজাতকরণ, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনই নয়, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিসহ সামাজিক নানা খাতে বড় ধরণের ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার গতরাতে দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমাদের এই প্রকল্পের মাধ্যমে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। ঢাকার বাজারে চট্টগ্রামের প্রচুর মাছ বিক্রি হচ্ছে। অচিরেই আমরা চট্টগ্রামসহ সারা দেশে এই কার্যক্রম শুরু করবো। তিনি বলেন, আমরা অনলাইনেও রেডি টু কুক ফিশ বিক্রি করবো। ফোনে অর্ডার দিলে আমাদের লোক বাসায় মাছ পৌঁছে দেবে। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বেশ আগেই এমন একটি পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন। ওই কথার আলোকেই বিষয়টি নিয়ে আমি চিন্তাভাবনা করি এবং আমাদের কিছু অবকাঠামোকে এই খাতে ব্যবহার করি। ইতোমধ্যে আমরা প্রত্যাশার বেশি সাড়া পেয়েছি। তিনি সামনের দিনগুলোতে রেডি টু কুক ফিশের ভালো বাজার তৈরি হবে বলে মন্তব্য করে বলেন, মানুষের সময়ের বড় অভাব, কাজের লোকের অভাব। এসব মোকাবেলা করতে রেডি টু কুক ফিশ স্বস্তি নিয়ে আসবে। তিনি একটি সুপার শপের সাথে এই ব্যাপারে সমঝোতা স্বারক স্বাক্ষরিত হয়েছে বলে উল্লেখ করে বলেন, ওই কোম্পানির সবগুলো আউটলেটেই আমাদের রেডি টু কুক ফিশ থাকবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাড়ে ১২ কোটি টাকা খেলাপী ঋণ, গ্রেপ্তারের পর ব্যবসায়ী কারাগারে
পরবর্তী নিবন্ধবেসরকারি হাসপাতাল ও ল্যাবে কর্মবিরতি চিকিৎসকের চেম্বারও বন্ধ ছিল