চট্টগ্রামের প্রথম ও পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল বিদ্যালয় সাউথ এশিয়ান স্কুল

এস এম জাওয়াদ | রবিবার , ২৬ ডিসেম্বর, ২০২১ at ১২:১৭ অপরাহ্ণ

সজ্জিত, প্রশস্ত ও আলোকিত ক্লাসরুমে মাত্র ৩০ জন ছাত্রছাত্রী। গতানুগতিক ব্ল্যাকবোর্ডের পরিবর্তে ইন্টিরেকটিভ হোয়াইট বোর্ডে ভেসে উঠছে পাঠ্য অংশের লেকচারশীট, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে পর্দায় ভেসে উঠছে পাঠ সংশ্লিষ্ট রঙিন ছবি। সাউন্ড সিস্টেমে শিক্ষকের স্পষ্ট উচ্চারণ শুনছে শেষ চেয়ারের শিক্ষার্থীও। বইয়ের পাতার জড় শব্দ ও ছবিগুলো বড্ড জীবন্ত ও প্রাণবন্ত হয়ে ধরা পড়ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কাছে।

অডিও ভিডিও ক্লিপসের উপস্থাপনায় অংকের জটিল সূত্র কিংবা বিজ্ঞানের দূর্বোধ্য বিষয় সবকিছুই সহজ মনে হচ্ছে। ছোট্টমণিরা তাদের বইয়ের ছড়া, ছবি আর বর্ণমালাগুলোকে জীবন্ত দেখছে ডিজিটাল স্ক্রীনে আর মেলে ধরছে তার কল্পনার ডানা! এমন একটি স্কুল একসময় কেবলই কল্পনার মনে হলেও একে বাস্তবতায় রুপ দিয়েছে নগরীর শিক্ষাজোন চকবাজারে প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রামের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল বিদ্যাপীঠ ‘সাউথ এশিয়ান স্কুল’।
চট্টগ্রাম নগরীর একমাত্র পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল স্কুলের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বিদ্যালয়টি করোনাকালীন সময়ে সফল শিক্ষা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সচেতন অভিভাবক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

আনন্দময় শিক্ষা :
অভিজ্ঞ প্রধান শিক্ষক বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ লকিতুল্লাহ এ প্রসঙ্গে বলেন, শিশুদের কাঁধে বইয়ের বোঝা নয়, ওরা শিখবে আনন্দের মাঝে- এই নীতিতেই শিশুবান্ধব ইন্টেরিয়র ডেকোরেশন, ছবি ও আসবাবপত্রে সজ্জিত ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত প্লে, নার্সারী এবং কেজি (ইংরেজী ভার্সন, ন্যাশনাল কারিকুলাম) শ্রেণীর ক্লাসরুমগুলো সত্যিই নজর কাড়ার মত। ছোট্ট সোনামণিদের জীবনের প্রথম পাঠটি দেয়ার জন্য রয়েছেন শিশু মনোবিজ্ঞানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অভিজ্ঞ শিক্ষিকাগণ, যারা মাতৃসুলভ মমতায় শিশুদের আপন করে নেন।

ছড়া, অভিনয়, আবৃত্তি কিংবা গানের সুরে পড়ানোর সাথে সাথে ছবি, চার্ট, খেলনাসহ নানা শিক্ষা উপকরণ ব্যবহার করেন শিক্ষিকাবৃন্দ। বাংলাদেশে আমরাই প্রথম ক্লাসে এনিমেশন, গেমস,পাজল, স্টোরীর মাধ্যমে পাঠদানের ব্যবস্থা করেছি। ফলে পাঠ্য বইয়ের বর্ণমালা, ছড়া কিংবা ছবিগুলো যখন ডিজিটাল স্ক্রীনে জীবন্ত হয়ে উঠে তখন কোমলমতি শিশুদের কাছে পাঠ্যবিষয়গুলো হয়ে ওঠে সহজতর এবং আকর্ষণীয়। লেখাপড়ার ফাঁকে বিনোদনের জন্য রয়েছে খেলনাসামগ্রীতে ভরপুর আকর্ষণীয় প্লে রুম যেখানে ভীষণ উচ্ছাসে মেতে উঠে ছোট্ট সোনামণিরা।

ব্যতিক্রমী শিক্ষণ পদ্ধতি :
সার্বিক তত্বাবধানকারী প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম জানান, ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত ছাত্রীদের জন্য রয়েছে পৃথক ক্যাম্পাস। আমরা অনুসরণ করি ব্যতিক্রমী শিখন পদ্ধতি METHOD-69 যাতে রয়েছে –
বেসিক ক্লাসঃ এতে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর ব্যবহার করে সহজ এবং গবেষণালব্ধ পদ্ধতিতে এনিমেশন, গেমস, পাজল, স্টোরীর মাধ্যমে এর মাধ্যমে পাঠদান করা হয়।
ভিডিও ক্লাস: প্রতিটি অধ্যায়ের উপর ৩/৪টি মূল ক্লাস থাকে। মূল ক্লাস শেষ হবার পর ভিডিও ক্লাস এর মাধ্যমে যে কোন শিক্ষার্থী কঠিন বিষয়গুলোর ভিডিও বার বার দেখে তাদের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারে।

গ্রুপ ওয়ার্ক : সৃজনশীল পদ্ধতি সঠিকভাবে প্রয়োগের বা বাস্তবায়নের পূর্বশর্তই হলো ক্লাসে গ্রুপ ওয়ার্ক। এতে ছাত্র-ছাত্রীদের সৃজনশীল প্রতিভা বিকাশের পাশাপাশি আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তোলে।

ফিডব্যাক ক্লাস : ছাত্র-ছাত্রীরা কতটুকু অর্জন করল তা যাচাই বাছাই করাই এর মূল উদ্দেশ্য।
প্রেজেন্টেশন ক্লাস : প্রতি মাসে প্রত্যেক শিক্ষার্থী তাদের অর্জিত জ্ঞান ক্লাসরুমে সকলের সামনে উপস্থাপন করে।

প্রাইভেট পড়তে হয় না :
দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকমন্ডলী কর্তৃক বিজ্ঞানসম্মত স্বতন্ত্র ‘Method-69’ পদ্ধতিতে পাঠদানের ফলে ডিজিটাল ক্লাসরুম এ ক্লাসের পড়া ক্লাসেই শেষ হয়। শ্রেণীশিক্ষক ছাড়াও রয়েছেন প্রতি ৩০ জনের জন্য একজন করে গাইড শিক্ষক, যিনি শিক্ষার্থীর বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধান করেন। ক্লাসের পর রয়েছে অতিরিক্ত ক্লাস যেখানে পড়িয়ে, শিখিয়ে, লিখিয়ে পড়া আদায় করা হয়।

এছাড়া লেখাপড়ায় দূর্বল প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে একজন শিক্ষক। উপরন্তু সাউথ এশিয়ান স্কুলের শিক্ষকদের নিজ স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের প্রাইভেট পড়ানো নিষিদ্ধ। তাই ক্লাসেই সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সাথে পাঠ আদায়ে সচেষ্ট থকেন শিক্ষক। ফলে কোন শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়তে হয় না। নিয়মিত Class Test, Monthly Test, Quiz Test, Term Test ইত্যাদির মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের মূল্যায়ন গ্রেডিং ও প্রমোশন নির্ধারণ করা হয়। Daily Auto SMS Alert System এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীর স্কুলে উপস্থিতি ও স্কুল ত্যাগের বিষয়টি সময় উল্লেখ করে তাৎক্ষণিক অভিভাবকের মোবাইলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পৌঁছে দেয়া হয়। অভিভাবকের মোবাইলে সংযুক্ত করা হয়েছে বিশেষ এ্যাপস যার মাধ্যমে স্টুডেন্ট ওয়েব পোর্টালে প্রবেশ করে জানতে পারেন তার সন্তানের শিক্ষাসংক্রান্ত সকল তথ্য।ফলে অভিভাবক থাকেন দুশ্চিন্তামুক্ত!

পিইসিই, জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার্থীর বিশেষ যত্ন :
প্রতি বছর পিএসসি, জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় ৫০% A+ সহ শতভাগ পাশের রেকর্ডধারী সাউথ এশিয়ান স্কুলে একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী সৃজনশীল পদ্ধতিতে অভিজ্ঞ ও দক্ষ শিক্ষকবৃন্দ পাঠদান করে থাকেন। প্রতিটি পাঠ শেষে চলে সৃজনশীল প্রশ্নের অনুশীলন এবং দেয়া হয় কোর্সপ্ল্যানভিত্তিক লেকচারশীট এবং প্র্যাকটিস শীট।শিক্ষকগণ মূল বইয়ের উপর বেশী জোর দেন এবং পড়ান প্রতিটি লাইন ধরে ধরে। দুর্বল শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে One To One Teaching Support । এরপর নিয়মিত DailyTest ও Quiz শিক্ষার্থীকে বহুনির্বাচনী প্রশ্নোত্তর সমাধানে পারদর্শী করে তোলে।

আইটি প্রশিক্ষণ :
ডিজিটাল এই স্কুলে কম্পিউটার ও ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের জন্য রয়েছে জনপ্রতি একটি কম্পিউটারসমৃদ্ধ অত্যাধুনিক কম্পিউটার ল্যাব এবং বিজ্ঞানাগার। শিশুশ্রেণী হতে উচ্চশ্রেণী সবার জন্য কম্পিউটার ক্লাস বাধ্যতামূলক। উপরন্তু সিলেবাসের বাইরেও ষষ্ট থেকে দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের C+, JAVA,Web Design এর মত এডভান্স কোর্স শেখাচ্ছেন আই টি প্রকৌশলীবৃন্দ।

সহশিক্ষা কার্যক্রম :
শিক্ষার্থীর সুপ্ত মেধার বিকাশ ও সৃজনশীল প্রতিভা বৃদ্ধির জন্য একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকের পরিচালনায় রয়েছে, স্পোকেন ইংলিশ, ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব, খেলাধুলা (আউটডোর/ইনডোর), শরীরচর্চা, দেয়ালিকা প্রকাশ, চিত্রাংকন, নাচ ও গান ও বিতর্ক চর্চা। মহান একুশে, স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসসহ সকল জাতীয় দিবস উদযাপিত হয় সাড়ম্বরে।

করোনাকালীন সময়ে শিক্ষা ব্যবস্থাপনা :
সাউথ এশিয়ান স্কুল জন্মলগ্ন থেকেই ডিজিটাল স্কুল। তাই করোনাকালীন সময়ে অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থাপনায় সুষ্ঠু সমন্বয়ে আমাদের কোনপ্রকার বেগ পেতে হয়নি। আমরা শিক্ষার্থীদের জন্য SAS Apps নামে একটি এ্যাপস তৈরী করেছি যার মাধ্যমে প্রশিক্ষিত শিক্ষকগণ অনলাইনে ক্লাস ও পরীক্ষা নিয়েছেন। বিশেষ জুম লিংকের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা এই ক্লাসে সরাসরি প্রশ্ন করতে পারে এবং শিক্ষকও জবাব দিতে পারেন। যা ফেসবুক ভিডিও ক্লাসে সম্ভব নয়। ক্লাস শেষে পুরো পাঠের ভিডিওটি এবং হ্যান্ডনোটশীট ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে দেয়া হয়।

এই বিশেষ Apps এর মাধ্যমে আমরা হোমওয়ার্ক দিয়েছি, নোটিশ জানিয়েছি। মাসিক পরীক্ষা, টার্মিনাল পরীক্ষাসহ নানা মূল্যায়ন পরীক্ষা নিতে সক্ষম হয়েছি। এই Apps এর মাধ্যমে ঘরে বসেই স্কুল ফি দিতে পারছে অভিভাবকগণ। ফলে করোনাকালে স্বস্থ্যবিধি মেনেই স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন সচল রাখতে পেরেছি।সম্মানিত অভিভাবকবৃন্দ কর্তৃক প্রশংসিত হয়েছে আমাদের এই শিক্ষাসেবা।

পরিশেষে স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী মো: গিয়াস উদ্দিন বলেন, “আমরা শিক্ষাকে একটি ব্রত ও সামাজিক দায়িত্ব মনে করি। আপনার সন্তানকে দেশীয় সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও মূল্যবোধকে ধারণ করে আধুনিক শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার সাথে সাথে সহীহ কুরআন ও নামায শিক্ষা এবং নৈতিকতা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ মানুষরুপে গড়ে তুলতে আমাদের প্রচেষ্টার কোন ঘাটতি থাকবেনা। তবে এই পথচলায় আপনাদের সহযোগিতাই আমাদের একমাত্র পাথেয়”।

বিস্তারিত জানতে গুলজারের পশ্চিমে, ১০১ ,চট্টেশ্বরী রোড, চকবাজার এই ঠিকানায় এবং ০১৬৪৭-৪৭৯৩৩৪, ০১৬৪৭-৪৭৯৩৩২ ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা যাবে। লগ ইন করতে পারেন South Asian School ফেসবুক পেইজে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে করোনায় নতুন শনাক্ত ৩ জন
পরবর্তী নিবন্ধকর্ণফুলী উপজেলায় ভোট শুরুর ২ ঘণ্টা আগে মেম্বার প্রার্থীর মৃত্যু