গত দুই বছর মহামারি করোনা ভাইরাস এর কারণে চট্টগ্রামে আয়োজিত বলী খেলা বন্ধ ছিল। সেই সাথে অনুষ্ঠিত বৈশাখী মেলা ও হয়নি। চট্টগ্রামবাসী প্রতিবছর বলী খেলা ও বৈশাখী মেলার অপেক্ষায় থাকে। অনেক দূর দূরান্ত থেকে মানুষ এই মেলায় আসে তাদের গৃহস্থালির নিত্যপ্রয়োজনীয় পছন্দের জিনিস ক্রয়ের জন্য। তবে এই বছর বলী খেলা ও বৈশাখী মেলা হবে শুনে আবার সবার মাঝে মেলায় যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেল।
জব্বারের বলীখেলা এক ধরনের কুস্তি খেলা। এটা প্রতিবছর ১২ই বৈশাখ চট্টগ্রামের লালদিঘি ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়। বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের পর এদেশে ব্রিটিশ শাসন শুরু হয়। মূলত বাঙালি সংস্কৃতির বিকাশ এবং যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্রিটিশ বিরোধী মনোভাব আর শক্তিমত্তা প্রদর্শনের জন্য তাদের মনোবল বাড়ানোর উদ্দেশ্যে চট্টগ্রামের বদরপাতি এলাকার ব্যবসায়ী আব্দুল জব্বার সওদাগর বলী খেলার প্রবর্তন করেন। ১৯০৯ সালে তিনি এই প্রতিযোগিতার সূচনা করেন। ব্যতিক্রম ধর্মী এই প্রতিযোগিতার জন্য ব্রিটিশ সরকার তাকে খান বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত করলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। তাঁর মৃত্যুর পর এটি জব্বারের বলীখেলা নামে পরিচিতি লাভ করে। এই বলী খেলাকে কেন্দ্র করে লালদিঘি ময়দানের আশেপাশে বৈশাখী মেলার আয়োজন হয়।
আগামী ১২ই বৈশাখ ২৫ শে এপ্রিল বিকাল তিনটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত ১১৩তম বলী খেলা অনুষ্ঠিত হবে। ২৪, ২৫, ২৬ এপ্রিল বৈশাখী মেলা চলবে। বলী খেলা উপলক্ষে যে বৈশাখী মেলা হয় তাতে সারা বছর যে জিনিস পাওয়া যায় না এখানে সহজেই তার সন্ধান মেলে। তাই সবাই উৎসুক থাকে এই মেলার জন্য। এটা চট্টগ্রামবাসীর মিলন মেলা। ছোট, বড়, ছেলে, বুড়ো সবাই তাদের পছন্দের জিনিস ক্রয়ের জন্য এই মেলায় আসে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস, খেলনা, ঘর সাজানোর রকমারি জিনিস, মাটির তৈরি জিনিস, নানা ফলদ, বনজ, ঔষধি গাছ থেকে শুরু করে সব পাওয়া যায় এই মেলায়। এই ঐতিহ্যবাহী বৈশাখী মেলায় সবাই একত্রিত হয়ে মেলাকে প্রাণবন্ত করে তোলে।
লেখক : শিক্ষক, কবি