চকরিয়ায় যুবদল নেতাকে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধে হত্যার অভিযোগ

চকরিয়া প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ১২:১৬ অপরাহ্ণ

কক্সবাজারের চকরিয়ায় সাইফুল ইসলাম (৩৩) নামের এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধে হত্যার অভিযোগ ওঠেছে। মৃত্যু নিশ্চিত করার পর তাকে বাড়ির কাছে বিলের মাঝে ফেলে যায় প্রতিপক্ষের লোকজন।

খবর পেয়ে ভোররাতে পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি শেষে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে।

এর আগে গতকাল সোমবার দিবাগত গভীর রাতে তাকে গ্রেপ্তারের জন্য বাড়িতে পুলিশ যায়। এ সময় বাড়িতে তল্লাশি করেও তাকে না পেয়ে পুলিশ ফেরত যায়। এর কয়েক মিনিট পরই হেলমেট পরিহিত হয়ে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী সাইফুল ইসলামকে ধাওয়া দিয়ে ধরে পাশের বিলের মাঝে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।

গতকাল সোমবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে উপজেলার কাকারা ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম মাইজ কাকারা গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। নিহত সাইফুল ইসলাম ওই এলাকার শাহ আলমের পুত্র।

পরিবার সূত্র জানায়- নিহত সাইফুল ইসলাম বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি পেশাগত কাজের সুবিধার্থে এক যুগেরও বেশিসময় ধরে বসবাস করেন চকরিয়া পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রাজধানী পাড়ায়। সে সুবাদে তিনি পৌরসভা যুবদলের ওই ওয়ার্ডের সিনিয়র সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

কয়েকবছর আগে সাইফুল নিজ এলাকা কাকারার পশ্চিম মাইজ কাকারায় সপরিবারে বসবাস শুরু করেন। কাকারা ইউনিয়ন বিএনপির নেতা জয়নাল আবেদীনও এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

নিহত সাইফুল ইসলামের স্ত্রী রিনা আক্তার অভিযোগ করেছেন- তাদের বাড়ির কাছের বাসিন্দা নুরুল ইসলামের সঙ্গে জায়গা নিয়ে বিরোধের জের ধরে কয়েকদিন আগে প্রতিপক্ষ আমজাদ হোসেনদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এই ঘটনা চলাকালে প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন তার স্বামী সাইফুল ইসলামও।

পরে নুরুল ইসলাম এক লক্ষ টাকার লোভ দেখিয়ে তার পক্ষে স্বাক্ষী দিতে বললেও রাজি হননি স্বামী সাইফুল। এই কারণে জায়গার বিরোধ নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় থানায় রুজুকৃত মামলায় চার নম্বর ক্রমিকে আসামি করে দেওয়া হয়। সেই মামলার আসামি হিসেবে সাইফুলকে ধরতে সোমবার দিবাগত রাতে পুলিশ আসে বাড়িতে।

এ সময় বাড়িতে না থাকায় তাকে ধরতে পারেনি পুলিশ। এর পর পুলিশ চলে যাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ১০-১২ জনের একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী মাথায় হেলমেট পরে এসে বাড়িতে ঢুকে পড়ে। এ সময় বাড়ির পেছন থেকে ধাওয়া দিয়ে তার স্বামী সাইফুলকে দিগম্বর করে নিয়ে যায় পাশের বিলে। সেখানে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধে হত্যা করে লাশ ফেলে যায় সন্ত্রাসীরা।

পশ্চিম মাইজ কাকারা গ্রামের একাধিক বাসিন্দা অভিযোগ করেছেন-পুলিশ চলে যাওয়ার পর সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা হেলমেট পরে এসে সাইফুলকে ধরতে এসে আশপাশের বেশ কয়েকটি বাড়িতেও ঢুকে তল্লাশি চালায়। এ সময় কয়েকটি বাড়ি থেকে দামি মালামালও লুট করে নিয়ে যায়। এই অবস্থায় রাতভর ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো পাড়ায়।

এদিকে অভিযুক্ত নুরুল ইসলামের বক্তব্য নেওয়ার জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এর পর তাঁর বাড়িতে গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি। উপরন্তু বাড়ির বাউন্ডারির গেটে তালা ঝুলতেও দেখা যায়।

এ ব্যাপারে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মনির হোসেন বলেন, ‘সোমবার দিবাগত রাতে মামলার আসামী সাইফুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের জন্য বাড়িতে পুলিশ যায় সেটা সত্য। কিন্তু তাকে বাড়িতে না পেয়ে পুলিশ চলে আসে। এর পর কী ঘটনা ঘটেছে তা তদন্ত করে দেখা হবে।’

ওসি-চকরিয়া বলেন- ‘খবর পেয়ে আজ (মঙ্গলবার) ভোরে সাইফুল ইসলামের মরদেহ উদ্ধারের পর সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। এ সময় সাইফুলের শরীরের কোথাও কোন আঘাতের জখম পাওয়া না গেলেও মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এই ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ প্রাপ্তিসাপেক্ষে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধখালেদা জিয়ার জানাজা বুধবার: সালাহউদ্দিন আহমেদ
পরবর্তী নিবন্ধপ্রতারণার অভিযোগে অভিজাত রেস্টুরেন্ট মালিক গ্রেপ্তার