চকরিয়ায় করেন গান, চট্টগ্রামে চুরি

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১৩ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৬:৩০ পূর্বাহ্ণ

চকরিয়ায় আঞ্চলিক গানের সুপরিচিত গায়ক চট্টগ্রামে ধরা পড়েছে ‘চোর’ হিসেবে। নাম তার তৌহিদুল ইসলাম। আছে নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলও। এক মাস আগে নগরীর বায়েজিদ থানা এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের বাসা থেকে সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন সংক্রান্ত প্রকল্প প্রস্তাবনাসহ একটি ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন চুরির ঘটনায় দুই সহযোগীসহ তৌহিদুল ধরা পড়ার পর বেরিয়ে আসে তার অপরাধ জীবনের আদ্যোপান্ত। পুলিশ জানতে পারে, এটিই প্রথম চুরি নয় তার; গত দুই বছরে চট্টগ্রাম শহরে সে অন্তত ৪০টি বাসায় চুরি করেছে।
বায়েজিদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুজ্জামান আজাদীকে বলেন, গত ৯ নভেম্বর সকালে নগরীর গুলবাগ আবাসিক এলাকায় ‘বন্ধু নিবাস’ নামে একটি ভবনের অষ্টম তলায় পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবুর রহমানের বাসায় চুরি হয়। তিনি অস্ট্রেলিয়ার কুইন্স লাইন ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড টেকনোলজি ব্রিজম্যানের ভিজিটিং রিসার্চ ফেলো। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগের ডিন ইয়াং টং গু, ভিজিটিং রিসার্চ ফেলো মাজহারুল করিম ও মাহবুবুর রহমান এবং চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ মিলে অস্ট্রেলিয়ার আদলে বাংলাদেশে সাশ্রয়ী পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন নিয়ে একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরি করেন। সেই প্রস্তাবনা মাহবুবুর রহমানের ল্যাপটপে সংরক্ষিত ছিল। ওই ল্যাপটপ এবং মোবাইল চুরির ঘটনায় মাহবুবুর রহমান মামলা দায়ের করেন।
ওসি বলেন, শিক্ষকের ল্যাপটপে যেহেতু সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে জমা দেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ছিল; আমরা তাই শুরু থেকেই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ শুরু করি। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে আমরা তৌহিদুল ও ১০-১১ বছর বয়সী এক ছেলেকে শনাক্ত করি। তাদের গ্রেপ্তারের জন্য আমরা খুঁজছিলাম। এর মধ্যে গত শনিবার ভোরে হালিশহর থানায় স্থানীয়দের হাতে ধরা পড়ে তৌহিদুল ইসলাম (১৮) ও তার সহযোগী ছোটন মিয়া (১৮)। দুই চোর ধরা পড়ার খবর পেয়ে আমরা তাদের ছবি নিই। সেখানে একজনকে আমরা তৌহিদুল হিসেবে শনাক্ত করে নিজেদের হেফাজতে নিই। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করি। তার তথ্যে কঙবাজারে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় চোরাই মালামালের ক্রেতা সাইফুল ইসলামকে (২৬)। তাদের সবার বাড়ি কঙবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার কোণাখালী গ্রামে। তৌহিদুলের সঙ্গে থাকা শিশুটিকে আমরা এখন খুঁজছি। তৌহিদুলকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওসি জানান, তৌহিদুল কঙবাজারের আঞ্চলিক গানের একজন শিল্পী হিসেবে পরিচিত। তার ইউটিউব চ্যানেলও কঙবাজারে জনপ্রিয়। কিন্তু গত দুই বছর ধরে সে চুরির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। এলাকায় তার কয়েকজন সহযোগী আছে। মাঝে মাঝে তাদের নিয়ে চট্টগ্রাম শহরে আসে। গভীর রাতে বাড়ি থেকে রওনা হয়ে চট্টগ্রামে বাস থেকে নেমে চলে যায় বিভিন্ন এলাকায়। খুঁজতে থাকে কোন ভবনে উঠা যাবে। বিশেষত যেসব বাসার লোক ভোরে নামাজ পড়তে কিংবা প্রাতঃভ্রমণে বের হয়; সেই সব বাসার গেট এবং দরজা খোলা থাকে, সেগুলোকে তারা টার্গেট করে। সুযোগ বুঝে সেসব বাসায় প্রবেশ করে দুই থেকে তিন মিনিটের মধ্যে ল্যাপটপ, মোবাইল জাতীয় মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে দ্রুত এলাকা থেকে চলে যায় চকরিয়ায়। এ প্রক্রিয়ায় গত দুই বছরে তারা অন্তত ৪০টি বাসায় চুরি করেছে জানিয়ে ওসি কামরুজ্জামান বলেন, চুরির মালামাল সাইফুলের মাধ্যমে কঙবাজারে বিভিন্ন প্রকল্প ও এনজিওতে কর্মরত লোকজনের কাছে বিক্রি করে। তৌহিদুলসহ গ্রেপ্তার তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচদিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবায়েজিদ ও ভূজপুর সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১ আহত ৪
পরবর্তী নিবন্ধকাটা শুরুর একদিন পরই আবার বন্ধ