ঘুড়ি

রীমা বড়ুয়া | বুধবার , ৭ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৫:০৫ পূর্বাহ্ণ

তোমরা যারা ছোট তাদের অনেকেই নিশ্চয়ই ঘুড়ি উড়াতে পছন্দ করো। ছোটবেলায় ঘুড়ি উড়ায়নি কিংবা ঘুড়ির পেছন পেছন ছোটেনি এরকম মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে। রঙিন কাগজ দিয়ে ঘুড়ি বানানো, সুতায় ধার দেওয়া, নাটাইতে সুতা পেঁচানো ঘুড়ি উড়াতে গেলে সে অনেক অনেক কাজ। তারপর সব প্রস্তুতি নিয়ে শুধু ঘুড়ি উড়ালেই হয় না আকাশে আরেকজনের ঘুড়ি কেটে দেওয়ার মধ্যেও আছে আরেক আনন্দ। বন্ধু-বান্ধব মিলে বিকেলে খোলা মাঠে কিংবা বাড়ির ছাদে অনেকেই ঘুড়ি উড়ায়।

ধারণা করা হয় প্রায় ২ হাজার ৮০০ বছর আগে চীনে সর্বপ্রথম ঘুড়ি উড়ানোর প্রচলন হয়। পরে এটি এশিয়া মহাদেশের অন্যান্য দেশ যেমনঃ বাংলাদেশ, ভারত, জাপান এবং কোরিয়াতেও ছড়িয়ে পড়ে। ইউরোপে ঘুড়ির প্রচলন ঘটে প্রায় ১ হাজার ৬০০ বছর আগে।

প্রথমদিকে ঘুড়ি তৈরি হতো কাগজ কিংবা হালকা সিল্কের কাপড় দিয়ে। ঘুড়ির কাঠামো তৈরিতে ব্যবহৃত হতো বাঁশের কঞ্চি কিংবা অন্যান্য শক্ত অথচ নমনীয় কাঠ। ঘুড়ি উড়ানোর জন্য প্রয়োজন হতো সুতা কিংবা পাতলা দড়ি।

ঘুড়ি নানা রকমের, নানা নামের হয়ে থাকে। এটা নির্ভর করে দেশ ও এলাকার ওপর। বিভিন্ন ধরনের ঘুড়ির মধ্যে আছে চারকোণা আকৃতির বাংলা ঘুড়ি, ড্রাগন, বাঙ, মাছরাঙা, ঈগল, ডলফিন, অক্টোপাস, সাপ, ব্যাঙ, পেঁচা, চিল, জাতীয় পতাকা ইত্যাদি।

সাধারণত ঘুড়ি তৈরিতে ব্যবহৃত হয় বেশ পাতলা কাগজ যাতে ঘুড়ি হালকা হয় এবং বাতাসে সহজে ভেসে থাকতে পারে। অনেক দেশেই ঘুড়ি বানানোর জন্য সাদা কাগজের পাশাপাশি রঙিন কাগজের ব্যবহার দেখা যায়। ঘুড়ি বানাতে যত রঙিন কাগজ ব্যবহার করা যায় আর যত সুন্দর ডিজাইন করা যায় ততই বেড়ে যায় উড়ানোর আনন্দও। আধুনিক যুগে ঘুড়ি তৈরিতে কাগজের পাশাপাশি সিনথেটিক জাতীয় কাপড় ব্যবহারেরও প্রচলন দেখা যায়।

বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন উপলক্ষে ঘুড়ি উড়ানোর উৎসবও হয়ে থাকে। আয়োজন করা হয় প্রতিযোগিতারও। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তানে ঘুড়ি উড়ানো একটি অবসর বিনোদনের মাধ্যম। আমাদের দেশে পুরান ঢাকায় পৌষ মাসের শেষ দিন অর্থাৎ পৌষ সংক্রান্তিতে আয়োজিত সাকরাইন উৎসবেও নানা রঙের ও ধরনের ঘুড়ি উড়ানো হয়ে থাকে।

ঘুড়ির আনন্দ যে শুধু উড়ানোতেই তা কিন্তু নয়, আনন্দ আছে আরেকজনের উড়ন্ত ঘুড়ি কেটে দেয়ার মধ্যেও। নিজের উড়ন্ত ঘুড়ির সুতা দিয়ে আরেকজনের ঘুড়ির সুতা কেটে দিতে হলে ঘুড়ি উড়ানোর আগেই সুতাকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় ধারালো করতে হয় যাকে বলা হয় মাঞ্জা দেওয়া। সুতাকে ধারালো করতে মূল উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয় কাচের গুড়া। কাচের গুড়া যাতে সুতার গায়ে লেগে থাকে সেজন্য ব্যবহার করা হয় আঠা। সুতার সৌন্দর্য্য বাড়াতে কেউ কেউ রঙও ব্যবহার করে থাকে। অন্যের ঘুড়ির সুতা ঘষে ঘষে কেটে দেয়ার জন্য মাঞ্জার পাশাপাশি প্রয়োজন হয় বিশেষ ধরনের কৌশলেরও।

আমাদের প্রতিদিনের জীবনে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ার কারণে ঘুড়ি উড়ানোর মতো এই নির্মল বিনোদন মাধ্যমটি অনেক কমে গেছে বলা যায়। ঘুড়ি উড়ানো কমে যাওয়ার আরেকটি কারণ হলো খোলা মাঠ কিংবা খেলার মাঠ কমে আসা। তাই ঘুড়ি উড়ানোর মৌসুমে আগের মতো ঘুড়ি বানানো, নাটাই হাতে ঘুড়ি উড়ানো কিংবা কাটাকাটির খেলা খুব কমই চোখে পড়ে এখন। তারপরও তোমরা যারা পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে ছাদে ঘুড়ি উড়াও খেয়াল রাখবে সেই ছাদে যেন রেলিং দেওয়া থাকে কিংবা কাছাকাছি বিদ্যুতের তার না থাকে যাতে অসতর্কতাবশত কোনো বিপদ না ঘটে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধইউনেস্কোর ঐতিহ্যের তালিকায় তুরস্কের চা ও নাসিরুদ্দিনের গল্প
পরবর্তী নিবন্ধমাউন্ট সেমেরুতে ফের অগু্ন্যৎপাত, সতর্কতা জারি