ঘাতক পিকআপ চালক ঢাকায় গ্রেপ্তার

চকরিয়া মর্মান্তিক ঘটনা ।। কুয়াশাচ্ছন্ন সড়কে বেপরোয়া গতির কারণে দুর্ঘটনা : র‌্যাব

চকরিয়া প্রতিনিধি | রবিবার , ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৫:৪৮ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারের চকরিয়ার মালুমঘাটে শ্মশানে পূজা দিয়ে ফেরার পথে সড়কে নিহত পাঁচ ভাইকে চাপা দেওয়া বেপরোয়া সেই পিকআপের চালক সহিদুল ইসলাম ওরফে সাইফুলকে (২৫) গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। গত শুক্রবার মধ্যরাতে রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সে বান্দরবানের লামা উপজেলা সদর এলাকার মো. আলী জাফরের ছেলে বলে জানায় র‌্যাবের কাছে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি ভোর ৫টার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের মালুমঘাট স্টেশনের কাছে ভয়াবহ এই ঘটনা সংঘটিত করার পর সে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে গেলেও প্রযুক্তির সহায়তায় চারদিনের মাথায় তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে র‌্যাব। এরপর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে স্বীকার করেছে, ভোরে কুয়াশার কারণে দেখতে না পেয়ে সাত ভাই-বোনকে চাপা দেয়।
এ বিষয়ে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে র‌্যাব জানায়, অনেক কুয়াশা থাকার পরেও সবজি ডেলিভারি দেওয়ার জন্য সাইফুল বেপরোয়া গতিতে পিকআপটি চালাচ্ছিল। এ কারণে চলন্ত অবস্থায় সাত ভাই-বোনকে খেয়াল করতে পারেনি। তবে খুব কাছে আসার পর নজরে এলেও গতি বেশি থাকায় গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়ে তাদের চাপা দেয়। এ সময় চালকের সঙ্গে পিকআপ মালিকের ছেলে তারেক ও ভাগ্নে রবিউলও ছিল বলে র‌্যাবকে জানায় সাইফুল।
ঘটনার পর থেকে গাড়ির মালিক মাহমুদুল করিম প্রকাশ বাদল, তার ছেলে তারেক ও ভাগ্নে রবিউল পলাতক রয়েছে বলে র‌্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়। চালক মাহমুদুলের বাড়ি চকরিয়ার পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাহেবখান পাড়ায়। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, জড়িত চালক সাইফুলের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। ওই পিকআপের কাগজপত্রও মেয়াদোত্তীর্ণ। ২০১৮ সালের পর এই গাড়ির নথিপত্র হালনাগাদ করেনি।
সাইফুলকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, চকরিয়ার বিভিন্নস্থান থেকে সবজি সংগ্রহের পর এই পিকআপ দিয়ে কক্সবাজার এবং মহেশখালীতে সরবরাহ করা হয়। ঘটনার সময় কুয়াশা ছিল। গাড়িটি চলছিল ৬৫ থেকে ৭০ কিলোমিটার গতিতে। কুয়াশার কারণে সে কাউকে দেখতে পায়নি। এ কারণে রাস্তা পারাপারের জন্য অপেক্ষায় থাকা ব্যক্তিদের ওপর গাড়ি তুলে দেয়। শেষ মুহূর্তে ব্রেক চাপলেও কোনো কাজে আসেনি।
র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, সাইফুল জানিয়েছে, দুর্ঘটনার পর সে গাড়ি থেকে নেমে ঘটনাস্থলে যায়। কিন্তু মালিকের ছেলে তারেকের পরামর্শে আহতদের হাসপাতালে না নিয়ে তারা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরে একটি বাজারে এসে মালিক মাহমুদুলের সঙ্গে মোবাইল ফোনে বিষয়টি নিয়ে কথা বললে বাজারের পাশে পিকআপটি রেখে চকরিয়ায় গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে বলে। মালিকের সঙ্গে সরাসরি দেখা হওয়ার পর তিনি সাইফুলকে বলেন, এ ঘটনায় একটি সরকারি মামলা হবে। এক বছর লুকিয়ে থাকতে হবে। মালিকের নির্দেশনায় তিনি আত্মগোপনে চলে যান। দুইবছর ধরে গাড়ি চালালেও কোনো লাইসেন্স ছিল না সাইফুলের। এই তথ্য জানিয়ে র‌্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন বলেন, সাইফুল বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের গাড়ি চালিয়েছেন। সর্বশেষ পিকআপটি সাত দিন ধরে চালাচ্ছিলেন। এতে তিনি দৈনিক ৫০০ টাকা মজুরি পেতেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মহাসড়কের মালুমঘাট হাইওয়ে থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবুল হোসেন বলেন, ঘাতক পিকআপ চালককে ঢাকায় গ্রেপ্তার করার তথ্য পেয়েছি।
শোকে মুহ্যমান বৃদ্ধা মা ও স্বজনেরা : স্বামী সুরেশ চন্দ্র শীল মারা যাওয়ার দশদিনের মাথায় একসঙ্গে পাঁচপুত্র হারানো বৃদ্ধা মৃণালিনী শীল, স্বামীহারা পাঁচ পুত্রবধূসহ পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়-স্বজনেরা এখনো শোকে মুহ্যমান। ধর্মীয় বিধান মতে, সুরেশ এবং তার পাঁচ পুত্রের মৃত্যুতে অশৌচকালীন সময় (১৪ দিন) পর্যন্ত পরিবারের সকল সদস্য ছিলেন নিরামিষভোজী। গতকাল শনিবার ছিল গোষ্ঠীসহ পরিবারের সকল সদস্যের মুখে আমিষ জাতীয় (মাছ, মাংসসহ) খাবার মুখে নেওয়ার রীতি।
গতকাল সকালে চকরিয়ার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের মালুমঘাটের হাসিনাপাড়ায় সুরেশ চন্দ্র শীলের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, উঠানের মধ্যেই চলছে রান্না-বান্না। এরপর দুপুরের দিকে চেয়ার-টেবিল সাজিয়ে সেখানে কলাপাতা বিছিয়ে তার ওপর থালাভর্তি করে ভাত এবং আমিষ জাতীয় খাবার রাখা হয়। আত্মীয়-স্বজনেরা প্রয়াত সুরেশের স্ত্রী বৃদ্ধা মৃণালিনী শীল, স্বামীহারা পাঁচ পুত্রবধূ এবং তাদের পুত্র-কন্যাদের বসিয়ে আমিষ জাতীয় খাবার মুখে নেওয়ার অনুমতি দিচ্ছেন। স্বজনেরা অনুমতি দিলেও বৃদ্ধা মৃণালিনী এবং একসঙ্গে স্বামীহারা হওয়া পাঁচ পুত্রবধূ খাবারের টেবিলে বসেও কান্নার জন্য খাবার মুখে নিতে পারছিলেন না। এ সময় স্বজনেরা তাদের সান্ত্বনা দিয়ে মুখে খাবার তুলে দেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজাতীয় পতাকার স্ট্যান্ডে ঝুলে যুবকের আত্মহত্যা
পরবর্তী নিবন্ধশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি আর বাড়ছে না : শিক্ষামন্ত্রী