ঘর, সহায়-সম্বল সব হারালেন ওরা

মাদারবাড়িতে আগুনে পুড়ল ৩৩ ঘর অসুস্থ হয়ে একজনের মৃত্যু

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১২ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৬:৪২ পূর্বাহ্ণ

নগরীর একটি বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শনিবার ভোরে সদরঘাট থানাধীন পশ্চিম মাদারবাড়ি ডিটি রোড এসআরবি রেল গেটের বস্তিতে এ ঘটনা ঘটে। আগুনে ৩৩টি কাঁচাঘর পুড়ে গেছে। এক কক্ষের এসব কাঁচাঘরে নিম্নআয়ের ৩০টির বেশি পরিবার থাকত। তারা কেউ দিন মজুর, কেউ রিকশা চালক, কেউ আবার অন্যের বাসা-বাড়িতে কাজ করে দিন পার করছিলেন। আগুনে এসব পরিবার মাথা গোঁজার ঠাঁই হারানোর পাশাপাশি নিজেদের সহায়-সম্বলও হারিয়েছেন। ঘর ও সহায়-সম্বল হারিয়ে খোলা আকাশের নিচেই এখন তাদের ঠিকানা।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডের খবর শুনে এক ব্যক্তির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লেও এই মৃত্যুর সাথে অগ্নিকাণ্ডের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে জানিয়েছে পুলিশ। তিনি অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন। ফায়ার সার্ভিসও বলছে, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় হতাহতের কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই।
ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানিয়েছে, গতকাল ভোর চারটা ২০ মিনিটে অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে ছয়টি গাড়িযোগে ঘটনাস্থলে পৌঁছান ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। সকাল ৬টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন তারা। তবে এর আগেই ৩৩টি কাঁচাঘর পুড়ে যায়।
ঘটনাস্থলে যাওয়া ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক ফারুক হোসেন শিকদার জানান, আগুনে বস্তির তিন সারিতে ২২ জন মালিকের ৩৩টি কাঁচাঘর পুড়ে গেছে। এক কক্ষ বিশিষ্ট এসব ঘরে নিম্নআয়ের লোকজন বসবাস করতেন। আগুনে ৩০টির বেশি পরিবার তাদের সহায়-সম্বল হারিয়েছে। যদিও অগ্নিকাণ্ডের কারণ ও ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে নির্দিষ্ট কিছু জানাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ তদন্ত সাপেক্ষে জানা যাবে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস আগ্রাবাদ স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার এনামুল হক।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পরিত্যক্ত রেললাইনের দুই পাশে (পূর্ব ও পশ্চিম) ওই বস্তি গড়ে উঠেছে। এতে একশর বেশি বসতঘর ছিল। রেললাইনের পশ্চিম পাড়ের বস্তিতে আগুন লেগেছে। স্থানীয়দের কেউ কেউ জানিয়েছেন, বস্তির বিদ্যুৎ সংযোগ অবৈধভাবে নেওয়া। বিদ্যুতের শর্ট সার্কিট বা রান্নার চুলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। অবশ্য, ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলছেন, ওখানে ভাঙ্গারি দোকান ছিল। আবার খোলা চুলায়ও রান্না করা হতো। এছাড়া বিদ্যুতের ওয়্যারিংগুলোর বেশিরভাগই ঢিলেঢালা ও জরাজীর্ণ। এর যে কোনো কারণে আগুন লাগতে পারে।
আগুনে সব হারানো সাফিয়া খাতুন বলেন, ভোর রাতে হঠাৎ দেখি দাউ দাউ আগুন। মুহূর্তেই ঘরের চালে আগুন চলে আসে। নিজের জান আর বাচ্চাদের নিয়ে কোনোমতে বের হয়ে এসেছি। ঘর থেকে কিছুই বের করতে পারিনি।
আগুন নিভে যাওয়ার পর গতকাল সকালে নিজের পাঠ্যবই খুঁজে ফিরছিল নাসিমা। আগের দিন সন্ধ্যায়ও বেশ কিছু সময় বই নিয়ে পড়ালেখা করেছিল দ্বিতীয় শ্রেণি পড়ুয়া এই ছাত্রী। কিন্তু আগুনের লেলিহান শিখায় তার পাঠ্যবইও পুড়ে ছাই হয়েছে। সব হারানোর হাহাকারে এটাও জানালেন নাসিমার মা ঝর্ণা আক্তার। অনেক কষ্টে কিছু টাকা জমিয়েছিল বস্তির কেউ কেউ। কিন্তু জমানো টাকাপয়সা যা ছিল তার সবই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে আগুনে। সহায়-সম্বল হারিয়ে তাই বুক ফাটা আর্তনাদ ঝরছিল অসহায় এসব মানুষের।
মৃত্যু আগুনের সাথে সম্পৃক্ত নয় : অগ্নিকাণ্ডের সময় আব্দুল জলিল নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। আগুনের খবরে স্ট্রোক করে তার মৃত্যু হয় বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। তবে প্রায় ৭০ বছর বয়স্ক ওই ব্যক্তির মৃত্যু অগ্নিকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত নয় বলে দাবি করেছেন সদরঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাখাওয়াত হোসেন। তিনি আজাদীকে বলেন, তিনি ওই বস্তির বাসিন্দাও না। বিভিন্ন অসুখে ভুগছিলেন। আগেও নাকি দুবার স্ট্রোক করেছেন। শনিবার ভোরে তৃতীয়বারের মতো স্ট্রোক করেছেন। পরে তার মৃত্যু হয়।
ফায়ার সার্ভিস আগ্রাবাদের সিনিয়র স্টেশন অফিসার এনামুল হকও বলছেন, আগুন লেগেছে রেললাইনের পশ্চিম পাশের বস্তিতে। ওই ব্যক্তি থাকতেন পূর্ব পাড়ের বস্তিতে। তিনি আগে থেকেই বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছিলেন। অগ্নিকাণ্ডের সময় স্ট্রোক করে মারা গেছেন বলে আমরা শুনেছি। হয়তো অসুখেই তিনি মারা গেছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনগরে চালু হলো হাফ ভাড়া
পরবর্তী নিবন্ধকানাডা-আমিরাতে ঢুকতে না পেরে ঢাকায় ফিরছেন মুরাদ