গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হলে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে

| শনিবার , ১৫ জানুয়ারি, ২০২২ at ৬:২০ পূর্বাহ্ণ

পত্রিকান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে প্রকাশ, ৬ শতাংশ সুদে জামানত ছাড়াই একজন ব্যক্তি ব্যাংক থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবেন। তহবিল থেকে স্বল্প পুঁজির স্থানীয় ব্যবসা থেকে শুরু করে মৎস্য চাষ কিংবা হাঁস-মুরগি পালন, তথ্যপ্রযুক্তি সেবাকেন্দ্র ও অন্যান্য সেবা উৎসারী কর্মকাণ্ড, এমনকি কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয় ও ফসল বিপণনেও ঋণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এ উদ্যোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের ধারণা, এ ঋণ গ্রামীণ অর্থনীতিতে আরও গতি সঞ্চার করবে।
কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি। করোনা মহামারিতে বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের অর্থনীতি অনেকটা বিপর্যস্ত। তবে এই করোনা মহামারিতেও কৃষি প্রধান বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা এখনো বেশ ভালোভাবেই সচল রয়েছে। আর কৃষির বহুমুখীকরণের মাধ্যমেই অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখা সম্ভব হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। তারা বলেন, প্রচলিত কৃষি কাজের বাইরে অর্থাৎ ধান-পাট এসব চাষের বাইরে কৃষির বিভিন্ন উপখাত যেমন, মৎস্য চাষ, হাঁস-মুরগীর খামার, পশু পালন, দুগ্ধ খামার, বছরব্যাপী সবজি ও ফলের চাষে ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। এতে যেমন বহু বেকারের কর্ম সংস্থান হয়েছে তেমনি গ্রামীণ অর্থনীতিও বেশ চাঙ্গা হয়েছে।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্যমতে, ২০১৮ সালে প্রবাসে ৩ লাখ ১৭ হাজার দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি হলেও ২০১৯ সালের শেষে এসে এই সংখ্যা ৩ লাখ ৪ হাজারে এসেছে। সেই সঙ্গে স্বল্পদক্ষ জনশক্তি প্রেরণের পরিমাণ ২ লাখ ৮৩ হাজার থেকে কমে ১ লাখ ৯৭ হাজারে নেমে এসেছে। ভবিষ্যতে প্রবাসে শ্রমবাজার তথা কর্মসংস্থান ও রেমিট্যান্স ঠিক রাখতে আমাদের শ্রমিকদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। কারণ, বৈশ্বিক এই সংকুচিত অর্থনীতিতে ভবিষ্যতের শ্রমবাজার হবে দক্ষ শ্রমনির্ভর বাজার। বৈদেশিক মুদ্রার বড় দুটি খাত তৈরি পোশাক রপ্তানি ও অভিবাসী শ্রমিকের রেমিট্যান্স দুটিই পরনির্ভর, যে কোনো সময় এর ভালো-মন্দের হেরফের ঘটতে পারে।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম তাঁর এক লেখায় লিখেছেন, করোনাকালে কর্মসংস্থান, দরিদ্রতা, আয় বৈষম্য নিরসন ও অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধি করতে গ্রামীণ অর্থনীতি গতিশীল করতে হবে। বিদেশে ফিরতে না পারা প্রবাসী কর্মী ও শহুরে কর্মসংস্থানহীন বিপুলসংখ্যক মানুষ গ্রামে ফিরে এসেছে। এই বৈপরীত্য আগে কখনও দেখা যায়নি। এই প্রেক্ষাপটে আমাদের সময় এসেছে গ্রামীণ অর্থনীতিকে আরও গতিশীল ও সমপ্রসারণ করে সেখানে কর্মসংস্থান বা আয় সংস্থান আরও বাড়ানো। গ্রামীণ অর্থনীতি বলতে শুধু শস্য উৎপাদন নয়। কৃষি খাতের অন্য উপশাখা যেমন মৎস্য, পশুপালন, পোলট্রি শিল্পেও মনোযোগ দিতে হবে। জিডিপিতে এর অবদান ১৮-১৯ শতাংশ। কৃষিপণ্য আমদানিনিভর্রতা কমাতে হবে। আবাদি জমি বাড়িয়ে কৃষিতে সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতির সঙ্গে জড়িত জনশক্তিকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। শুধু কৃষি উৎপাদন নয়, কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিপণনে জোর দিতে হবে। ব্যাংকগুলোকে গ্রামে শাখা খুলে অর্থায়নে এগিয়ে আসতে হবে। কৃষি আমাদের অর্থনীতির রক্ষাকবচ। গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হলে, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং দরিদ্রতা হ্রাস পাবে। করোনাভাইরাস আমাদের শিক্ষা দিয়েছে, শুধু সস্তা পণ্য রপ্তানি ও সস্তা শ্রম তথা পরনির্ভরশীলতার ওপর ভর করে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি টেকসই হবে না। তাই অর্থনীতির এই নড়বড়ে অবস্থা থেকে মুক্ত করতে গ্রামীণ অর্থনীতি শক্তিশালীকরণ ও দক্ষ জনশক্তির বিকল্প নেই, যা দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক পরনির্ভরশীলতা ও বৈষম্য দূর করে একটি টেকসই অর্থনীতি গঠনে ভূমিকা রাখবে।
অর্থনীতিবিদরা বলেন, করোনাকালে গ্রামীণ অর্থনীতি বিশেষ করে কৃষি আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে। গতানুগতিক ধারার বাইরে আজ কৃষি নির্ভর আরও বহু উপখাতের বিকাশ ঘটেছে। এগুলো অনেকটা শিল্পখাতে রূপ নিয়েছে। যেমন হাঁস-মুরগীর খামার বা পোল্ট্রি শিল্প, ডেইরী শিল্প, মৎস্য চাষ ইত্যাদি। অনেক বেকার তরুণ এসব খাতে সম্পৃক্ত হয়ে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করছে এবং গ্রামীণ অর্থনীতিকে সচল রাখছে। তবে এখাতে বেকার তরুণদের আরও সম্পৃক্ত করতে সরকারের উদ্যোগ নেয়া উচিত। কৃষিখাতে প্রণোদনার ঋণ প্রান্তিক উদ্যোক্তাদের কাছে যথাযথভাবে পৌঁছানো হলে কৃষিভিত্তিক এসব শিল্পখাতের ব্যাপক প্রসার ঘটবে। আর তাতে প্রচুর বেকারের কর্মসংস্থান হবে এবং কৃষি বিপ্লবের মাধ্যমে দেশও অর্থনীতিতে স্বনির্ভর হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে