গ্যাসের দামবৃদ্ধি: জনজীবনের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে

| শুক্রবার , ২১ জানুয়ারি, ২০২২ at ১১:২৪ অপরাহ্ণ

গ্যাসের দাম আবার বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে বিতরণ কোম্পানিগুলো। প্রস্তাবে দুই চুলার মাসিক বিল দুই হাজার ১০০ টাকা এবং এক চুলার দুই হাজার টাকা করার কথা বলা হয়েছে। বর্তমানে দুই চুলার মাসিক বিল ৯৭৫ টাকা ও এক চুলার বিল ৯২৫ টাকা। এ ছাড়া শিল্পে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ১০ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২৩ টাকা ২৪ পয়সা এবং ক্যাপটিভে (শিল্প-কারখানায় নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাস) ১৩ টাকা ৮৫ পয়সা থেকে ৩০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০১৯ সালের ১ জুলাই গ্যাসের দাম বাড়িয়েছিল বিইআরসি। বাসাবাড়িতে দুই চুলার খরচ ৮০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৭৫ টাকা আর এক চুলার খরচ ৭৫০ টাকা থেকে ৯২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) দেওয়া প্রস্তাবে দাম প্রায় দ্বিগুণ করার প্রস্তাব দিয়েছে কোম্পানিগুলো। নিয়ন্ত্রক সংস্থা জানিয়েছে, মোট পাঁচটি বিতরণ কোম্পানি গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব জমা দিয়েছিল। তবে এসব আবেদন নিয়মমাফিক না হওয়ায় বিইআরসি তা ফেরত পাঠিয়েছিল। এরপর আবার দুটি কোম্পানি একই রকম প্রস্তাব জমা দিয়েছে। এবার সেই প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি হবে। এরপর সিদ্ধান্ত আসবে গ্যাসের দাম বাড়ানো হবে কি না। আর বাড়লে কত বাড়বে।
এদিকে আশার কথা যে, গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব আপাতত নাকচ করে দিয়েছে বিইআরসি। বিধিসম্মত না হওয়ায় দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়নি। ফলে ভোক্তাদের মাঝে স্বস্তি লক্ষ্যণীয়। অন্যদিকে, বুধবার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল জলিল বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, প্রস্তাব করার জন্য আমাদের যে আইন ও প্রবিধান রয়েছে, তাদের আবেদনগুলো সেই নিয়ম অনুযায়ী হয়নি বলে আমরা ফেরত পাঠিয়েছিলাম। তবে আবার দুটি কোম্পানি কাগজপত্র ঠিক করে প্রস্তাব জমা দিয়েছে। এখন আমাদের মূল্যায়ন কমিটি এগুলো যাচাই করে দেখবে। প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য হলে সব পক্ষকে নিয়ে গণশুনানি হবে। দাম বাড়বে কি না, কী হবে – তা গণশুনানিতেই ঠিক হবে। সরকার বলছে, বাংলাদেশের গ্যাস ক্রমেই আমদানি করা এলএনজি নির্ভর হয়ে ওঠায় মূল্য বৃদ্ধি ছাড়া বিকল্প নেই।
গ্যাসের দাম বৃদ্ধি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে অবশ্য মতপার্থক্য রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, এই মুহূর্তে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি অযৌক্তিক। আবার কারও মতে, আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সামঞ্জস্য রাখতে দাম সমন্বয় করতে হবে। তবে সাধারণ ভোক্তাদের আশঙ্কা, বিদ্যুৎ, তেলের পর গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে তা তাদের জীবনযাত্রা আরও কঠিন করে তুলবে।
জানা যায়, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে দেয়া প্রস্তাবে কোম্পানিগুলো যুক্তি দিয়েছে যে, এলএনজি আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় দেশি-বিদেশি গ্যাস কেনা, সরবরাহ, পরিচালন ব্যয় ইত্যাদি মিলিয়ে তাদের খরচ বেড়ে গেছে। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে গ্যাসের দাম বাড়ানো প্রয়োজন বলে তারা বলেছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ অন্যত্র বলছেন, ‘সরকার যে গ্যাস আমদানি করছে, সেখানে গ্যাসের দাম প্রচণ্ডভাবে বেড়ে গেছে। সরকারকে হাজার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। সেজন্য ফাইন্যান্স (অর্থ মন্ত্রণালয়) থেকে বলা হয়েছে, দাম সমন্বয় করতে হবে।’ প্রতিমন্ত্রী জানান, বিইআরসিতে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তারপর তারা শুনানি করে সিদ্ধান্ত নেবে যে, গ্যাসের দাম বাড়ানো হবে নাকি হবে না। তবে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের নিজস্ব যে গ্যাস রয়েছে, তার বড় একটি অংশ সরকার বিদ্যুৎ ও সার শিল্পে ব্যবহার করে। ফলে আবাসিক ও বেসরকারি খাতে যে গ্যাসের চাহিদা রয়েছে, সেটা মেটাতে হচ্ছে বেশি দামে আমদানি করা গ্যাস দিয়ে। আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের দাম ওঠানামা করার কারণে সরকারকেও সেই আমদানি করা গ্যাসের দাম সমন্বয় করতে হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মেলাতে আবাসিক, যানবাহন ও শিল্পখাতের গ্যাসের দাম বাড়াতে চাইছে সরকার। অন্য এক বিশেষজ্ঞ বলছেন, ‘এখন গ্যাসের দাম বাড়ানো একেবারেই যৌক্তিক না। দেশের ভেতরে যে গ্যাস রয়েছে, সেটা সরকার তোলে না। বরং বিদেশ থেকে আমদানির ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। একটা চক্রকে ব্যবসা পাইয়ে দিতে, বিশেষ সুবিধা দিতেই এটা করা হচ্ছে। কেন কোম্পানিগুলো দুইগুণ-তিনগুণ বাড়াতে চাইছে, আমরা সেটা জানি না। হয়তো সরকারকে তারা পরোক্ষভাবে আগামীতে যে এলপিজি আসবে, সেই দামকে সাপোর্ট করার জন্য তারা দামটা বাড়িয়ে নিচ্ছে।’ যে কথা না বললেই নয়, সেটা হলো- গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে সরকারকে সবসময় ভর্তুকি দিতে হয়। তাছাড়া রাষ্ট্রীয়ভাবে জোগান দেওয়া এই সেবা ও সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির ক্ষমতাও সরকারের অবশ্যই আছে। তবে মূল্য বৃদ্ধি করতে গিয়ে জনজীবনে তার প্রভাব কতটা পড়বে, তা অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে