গিরিশচন্দ্র ঘোষ : বাংলা নাটকের কিংবদন্তি শিল্পী

| বুধবার , ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৫:১৯ পূর্বাহ্ণ

গিরিশচন্দ্র ঘোষ (১৮৪৪১৯১২)। বাংলা মঞ্চ নাটকের সূচনালগ্নে নাট্য চর্চা ও নাট্য আন্দোলনে প্রতিনিধিস্থানীয় ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্যক্তিত্ব। তিনি একাধারে কবি, নাট্যকার, পরিচালক ও অভিনেতা। মেধা, মনন, নানা উদ্ভাবনী কৌশল এবং একাগ্র সাধনার মধ্য দিয়ে বাংলা মঞ্চনাটকে নবীন মাত্রা সঞ্চার করেছিলেন প্রথিতযশা এই ব্যক্তিত্ব। গিরিশচন্দ্র ঘোষের জন্ম ১৮৪৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি কলকাতার বাগবাজারে। ছেলেবেলায় বাবামা দুজনকেই হারালে তাঁর অভিভাবকহীন জীবনযাপন খুব একটা নিয়মতান্ত্রিক হয়নি। ১৮৬২ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলে প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ার পাট চুকে যায় সেখানেই। তবে সাহিত্য পাঠের আগ্রহ ছিল বরাবরই। তাই অর্থ উপার্জনের জন্য নানা পেশায় নিয়েজিত থাকলেও প্রচুর পড়াশোনা করতেন গিরিশ। নাটকের সাথে যুক্ত হন ১৮৬৭ সালেবাগবাজারের শখের যাত্রাদল প্রযোজিত মধুসূদন দত্তের ‘শর্মিষ্ঠা’ নাটকের গীতিকার হিসেবে।

এরপর অভিনয় করেছেন দীনবন্ধু মিত্রের ‘সধবার একাদশী’ নাটকে ‘নিমচাঁদ’ চরিত্রে। নাটকের ভুবনে এভাবেই তাঁর যুক্ত হওয়া। পৌরাণিক, ঐতিহাসিক, সামাজিকসব মিলিয়ে প্রায় ৮০টির মতো নাটক রচনা করেছেন তিনি। অনুবাদ করেছেন শেকসপিয়রের নাটক। পৌরাণিক নাটকে অমিত্রাক্ষর ছন্দকে নতুন মাত্রায় সংলাপউপযোগী করে প্রয়োগ করেছেন। গিরিশচন্দ্র ঘোষ রচিত উল্লেখযোগ্য নাটকের মধ্যে রয়েছে : ‘আগমনী’, ‘দক্ষযজ্ঞ’, ‘পাণ্ডবের অজ্ঞাতবাস’, ‘পাণ্ডবগৌরব’, ‘জনা’, ‘বিল্বমঙ্গল’, ‘হারানিধি’, ‘সিরাজদ্দৌলা’, ‘মীরকাশিম’, ‘ছত্রপতী শিবাজী’, ‘অশোক তপোবন’ ইত্যাদি।

বঙ্কিমচন্দ্রের ‘মৃণালিনী’, ‘বিষবৃক্ষ’, এবং ‘দুর্গেশনন্দিনী’ উপন্যাস, মধুসূদনের ‘মেঘনাদবধ কাব্য’, নবীনচন্দ্রের ‘পলাশীর যুদ্ধ’ প্রভৃতি কাব্যের নাট্যরূপ নাট্যজগতে গিরিশচন্দ্রের উল্লেখযোগ্য অবদান। বিভিন্ন সময়ে তিনি গ্রেট ন্যাশনাল, স্টার, এমারেন্ড, মিনার্ভা, ক্ল্যাসিক প্রভৃতি থিয়েটারে নাটক পরিচালনা ও অভিনয় করেছেন। মঞ্চ অভিনয়ের নবযাত্রাযুগে গিরিশচন্দ্রের অভিনয় নৈপুণ্য তাঁকে পরিণত করেছিল কিংবদন্তি শিল্পীতে। জীবনের শেষ দিকের রচনাগুলোতে তাঁর আধ্যাত্মচেতনা ও ভক্তিভাবের প্রভাব লক্ষ করা যায়। ১৯১২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধবইমেলা এবং প্রাসঙ্গিক কথা