গান নিয়ে এগিয়ে যেতে চান শিল্পী কাকলী

আজাদী ডেস্ক | শুক্রবার , ২৮ মে, ২০২১ at ৭:০৬ পূর্বাহ্ণ

মুখে বোল ফোটার সাথে সাথেই এবং মায়ের গাওয়া গান শুনতে শুনতে মনের অজান্তেই গান গাইতেন শিশুকালে শিল্পী কাকলী দাশগুপ্তা। গান নিয়ে মায়ের আগ্রহই বেশী ছিল। শুরুটা মায়ের কাছে শেখা অর্থাৎ মায়ের কাছেই তার গানের হাতেখড়ি। পরে বড় বোনের কাছেও শেখেন তিনি। সংগীতের প্রতি নিবিড় ভালোবাসা এবং নিয়মিত সাধনা তাকে ধীরে ধীরে টেনে নিয়ে সাফল্যের শিখর চূড়ায়। ১৯৯৫ সালে বেতার ও ১৯৯৬ সালে বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রে নজরুল ও পল্লীগীতিতে তালিকাভুক্ত হন তিনি। বর্তমানে তিনি ‘এ’ গ্রেডে তালিকাভুক্ত শিল্পী তিনি। শিল্পীর ‘কাকলী দাশগুপ্তা’ নামে একটা ইউটিউব চ্যানেল আছে। কাকলীর দুটি মিউজিক ভিডিও বের হয়। প্রথম মিউজিক ভিডিও ‘কুহুকুহু’ খুব জনপ্রিয়তা পায়। দ্বিতীয় মিউজিক ভিডিও ‘বন্ধু বিহনে’ গতবছর বিজয়ের মাসে রিলিজ হয়।এর আগে ঢাকার ক্লোজআপ ওয়ান তারকা-লালন খ্যাত বিউটি, রন্টি, কর্ণিয়া, কোনাল ও কণার সাথে মিঙড অ্যালবামে গান গেয়ে প্রচর সুনাম অর্জন করেন। খুব শীঘ্রই শিল্পীর আরেকটি ডুয়েট গান প্রকাশ পাচ্ছে।
কাকলী একাডেমিকভাবে শাস্ত্রীয় সংগীত উচ্চাঙ্গের তালিম নেন- প্রথমে ওস্তাদ অসিত সেন। পরে একযুগেরও বেশী সময় ধরে আর্য সংগীত সমিতিতে তালিম নেন খ্যাতিমান ওস্তাদ মিহির লালা, নীরদ বরণ বড়ুয়া, নির্মেলেন্দু চৌধুরী, ভূপতি ধর, অমল স্যার প্রমুখ ব্যক্তিত্বদের কাছ থেকে। নজরুল সংগীতে তালিম দেন – জয়ন্তী লালা, পরেশ চন্দ্র কুরি। পল্লীগীতিতে তালিম নেন প্রয়াত লোকশিল্পী লক্ষ্মীপদ আচার্য্য, শেফালী ঘোষ, শ্যামসুন্দর বৈষ্ণব, দীপক আর্চায্য, আবদুর রহিম, মানস পাল চৌধুরী প্রমুখের কাছে। আর্য্য সংগীত সমিতিতে আট বছরের সফল কোর্স শেষ করেন উচ্চাঙ্গ সংগীত ও নজরুল সংগীতে। গানকে প্রচণ্ডভাবে ভালবাসেন কাকলী। তাই উচ্চাঙ্গ, নজরুল, রবীন্দ্র, দেশের গান, পল্লী গীতি, আঞ্চলিক, মাইজভান্ডারী কোন গানই পরিবেশনার তালিকা থেকে বাদ পড়ে না। সুরের অপূর্ব মায়াজাল দিয়েই শিল্পী দর্শক শ্রোতার হৃদয়ের কাছাকাছি যেতে পেরেছেন। মঞ্চে, টিভিতে, বেতারে ও ইউটিউব চ্যানেলে গান গেয়ে পেয়েছেন দর্শকদের আকুন্ঠ প্রংশসা। তাঁর কন্ঠে কিছু মৌলিক গান প্রশংসা কুড়িয়েছেন। তার মধ্যেই উল্লেখযোগ্য – প্রয়াত প্রবাল চৌধুরীর সুরে দেশের গান- ‘আমি জন্মেছি রূপসী বাংলাতে’ ‘কত কথা জমে আছে’, আধুনিক গান ‘তুমি জান না শুধু তুমি জাননা’, মৌলিক ফোক গানের মধ্যে রয়েছে প্রয়াত দীপক আচার্য্যের কথা ও সুরে- পীরিতি করিয়া পরাণে মরিলাম, কতবা দুঃখ দিলারে বন্ধুয়া, আমার মনে দারুণ জ্বালা ইত্যাদি গানগুলো।
সংগীতের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন অনেক পুরস্কার। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য শিশু একাডেমী পুরস্কার (রবীন্দ্রসংগীত, ১৯৮৪), শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার (নজরুল সংগীত-১৯৮৬)। বিভিন্ন সংগঠন থেকে পাওয়া পুরস্কার ও সম্মাননার মধ্যে রয়েছে নবীন মেলা শ্রেষ্ঠ শিল্পী পুরস্কার, অবসর সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী পদক, পাথফাইন্ডার শিল্পী গোষ্ঠী শ্রেষ্ঠ শিল্পী পুরস্কার ও বিদ্যানিকেতন সম্মাননা পদক। সংগীতের পাশাপাশি তিনি একজন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। কাকলী অনার্স – মাস্টার্স করেছেন বাংলায় চট্টগ্রাম কলেজ -জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। সুর সঞ্চারী সংগীত বিদ্যালয় নামে একটি গানের স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি। এখানে মূলত ক্ল্যাসিক্যাল, নজরুল ও অন্যান্য সব সংগীত শিখানো হয়। শিল্পী কাকলী বলেন, আমার গানের স্বপ্নকে শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে চাই। সৃজনশীল প্রাণে অনেক কিছু বসত করে। বর্তমানে সংগীত চর্চার অনুপ্রেরণার কথা বলতেই কাকলী জানান, আমার স্বামী এম ডি সুমন সকল অনুপ্রেরণার উৎস, যিনি একটা স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভাইস প্রিন্সিপ্যাল। শিল্পীর মা নমিতা গুপ্তা একজন রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী, বাবা মনোরঞ্জন দাশ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ডেপুটি রেজিস্টার ও নোয়াপাড়া কলেজের প্রাক্তন অধ্যাপক। কাকলীর প্রিয় শিল্পীর তালিকায় আছেন- রুনা লায়লা, কুমার বিশ্বজিৎ, সামিনা চৌধুরী, কিরণ চন্দ্র রায় প্রমুখ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্মরণের আবরণে এডভোকেট আজিজুল হক চৌধুরী
পরবর্তী নিবন্ধআবার পরীমনি চয়নিকার কেমিষ্ট্রি!