খয়েরি ছাতা

দেবাশীষ ধর | শুক্রবার , ১৭ জুন, ২০২২ at ৯:১৫ পূর্বাহ্ণ

সকাল থেকেই একনাগাড়ে বৃষ্টি। থামছে না। ঘুমচোখে চেয়ে আছে জানালার দিকে। মায়ের চেঁচামেচিতে দিব্যর এর মধ্যে দুই তিনবার ঘুম ভাঙলো, ওয়াশ রুমে যাবার সময় পায়ে কি যেন লাগলো। পায়ের সামনে দরজার কাছে একটা ছাতা। ‘এখানে ছাতাটা কোথা থেকে এল!’ প্রায় চিৎকার করে বললো।
মা শুনে চেঁচিয়ে বললেন, ‘তোর টেবিলের নিচে পরিস্কার করতে গিয়ে এটা পেলাম, কোণায় পড়ে ছিল।’
দিব্য হাতে নিল ছাতাটা। এটা এখানে কি করে এল! মনে মনে ভাবলো।
ছাতাটা দেখলো ভাল করে। ‘বাইরে যা বৃষ্টি, তুই গতকালও ভিজে এসেছিলি আজকে এটা নিয়ে যাস। ছাতা যে আরেকটা ছিলো নিয়ে যেতে পারতি!’ মা আবার চেঁচিয়ে বললেন। কিছুক্ষণের জন্য থ হয়ে গেল সে!
দ’ুবছর হয়ে গেল এই ছাতাটা সে আর ব্যবহার করেনি। শেষবার যেদিন শৈলির সাথে দেখা হয়েছিল সেদিনও এরকম প্রচণ্ড ঝুপ বৃষ্টি হচ্ছিল। সিএনজি বাস স্টেশনে থামলো। দিব্য পূবালি এক্সপ্রেস বাসের টিকেট কাটলো। শৈলির কলেজ বন্ধ তাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়েই দিব্য চলে আসবে। শৈলি বারণ করেছিল বারবার এই ঝুম বৃষ্টিতে তার আসার দরকার নেই। সে একাই যেতে পারবে বাড়িতে কিন্তু দিব্যকে তো আবার ফিরে আসতে হবে এই বৈরি আবহাওয়ায়। না, দিব্য শুনবে না, তাকে ঠিকমতো পৌঁছে দিয়েই আসবে। বাড়িতে যে একটা রাত থাকবে তাও সম্ভব নয়। বাবা এখনো জানে না দিব্যর কথা।
পাশেই এক টং এর দোকানে চা খেতে দুজনে বসলো। এতক্ষণ সিএনজিতে শৈলি তার বুকে মুখ ডুবিয়ে জড়িয়ে থাকায় একটু ঘুমঘুম ভাব চলে এসেছিল। বাস চলা শুরু করলে বৃষ্টি আরো বাড়লো। দু’জনে হাত ধরে বৃষ্টি দেখছে। এরকম এক বৃষ্টির দিনে দ’ুজনে হেঁটে হেঁটে শৈলির হোস্টেল পর্যন্ত গিয়েছিল। বেশ ভিজেছিল সেদিন। দ’ুদিন ছিল কাশিহাঁচি।
বাস চলে আসলো কেরানিহাট, এখানে নেমে গেল দিব্য। বাকি পথ শৈলি যেতে পারবে। আরেকটু সামনে গিয়ে নামবে শৈলি। ব্যাগ থেকে দ্রুত খয়েরি ছাতাটা বের করলো শৈলি এবারে।
‘এই শোন, ছাতাটা নিয়ে যাও, আর সাবধানে যেও।’
বাস চলা শুরু করলো, বৃষ্টির জলে ঝাপসা গ্লাসের ভেতর দিব্য চেয়ে আছে শৈলির দিকে। হাত বাড়াল শৈলি। দিব্য হাতখানি হালকা স্পর্শ করে, বাস পেরিয়ে যায়। ঘন্টা তিনেক পরে জানা যায়, বাসটি এক্সিডেন্ট করে ট্রাকের সাথে সংঘর্ষে, প্যাসেঞ্জার বেশিরভাগ স্পট ডেথ।
জানালার দিকে চেয়ে দিব্য উদাস মনে চেয়ে ভাবছিল। বাইরে বৃষ্টি আরো বাড়ছে। বের হয়ে ছাতাটা এখন খুললো দিব্য। খয়েরি রং এর ছাতা। বৃষ্টি আরো বেড়েছে। ক্রমশই ছাতা ভিজে গড়িয়ে গড়িয়ে জল পড়ছে। ছাতার আড়ালে দিব্য নিজেকে ঢেকে ফেলে এরপর সামনের দিকে হাঁটতে শুরু করলো।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রাণীকথা
পরবর্তী নিবন্ধহাটহাজারী পৌরসভায় বিশেষ বাজেট সভা