খসড়া মাস্টারপ্ল্যান প্রস্তুত

চূড়ান্ত হবে বন্দর ব্যবহারকারীদের সাথে আলোচনার পর

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৪:৫৬ পূর্বাহ্ণ

আগামী শতাব্দীর বন্দর হিসেবে খ্যাত বহুল প্রত্যাশার বে-টার্মিনালের খসড়া মাস্টারপ্ল্যান প্রস্তুত হয়েছে। বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন সংস্থা এবং প্রতিষ্ঠানের সাথে আলোচনা করে এই খসড়া মাস্টারপ্ল্যান চূড়ান্ত করা হবে। দক্ষিণ কোরিয়ান কুনহুয়া ডিওয়াই জেভি নামের পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রণীত মাস্টারপ্ল্যান আগামীকাল ২১ সেপ্টেম্বর উপস্থাপন করা হচ্ছে। এই মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের মাধ্যমে বে-টার্মিনাল বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নতুন গতি পাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
বন্দর সূত্র জানায়, দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের আগামী শতাব্দীর চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে হালিশহরের সমুদ্র উপকূলে নির্মাণ করা হচ্ছে বে-টার্মিনাল। ব্যক্তিমালিকানাধীন এবং সরকারি খাস জায়গা মিলে প্রায় আড়াই হাজার একর ভূমিতে বিদ্যমান চট্টগ্রাম বন্দরের প্রায় পাঁচ গুণ এলাকায় বে-টার্মিনাল প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। টার্মিনালটি পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ বা পিপিপি ভিত্তিতে করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে যে, বে-টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পটি পিপিপি (সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব) এবং জি টু জি (সরকার টু সরকার) পদ্ধতিতে সম্পন্ন করতে হবে। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ইতোমধ্যে কেবিনেট কমিটি অন ইকোনমিক এ্যাফেয়ার (সিসিইএ) কমিটির অনুমোদন প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হয়েছে।
বে টার্মিনাল প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেয়া হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার দুইটি কোম্পানি কুনহুয়া ডিওয়াই জেভিকে গত এপ্রিল মাসে বে-টার্মিনালের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ১২৬ কোটি ৪৯ লাখ ৭৩ হাজার ৯৮৬ টাকার বিনিময়ে প্রতিষ্ঠান দুইটি বে-টার্মিনাল নির্মাণে ডিজাইন, ড্রয়িং এবং টেন্ডার ডকুমেন্টস তৈরি থেকে বাস্তবায়ন পর্যন্ত যাবতীয় কার্যক্রমের পরামর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে।
বে-টার্মিনাল নির্মাণে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এরমধ্যে বঙ্গোপসাগরে দেশের প্রথম ব্রেক ওয়াটার নির্মাণ এবং ড্রেজিং করে চ্যানেল খনন করার বেশ বড় একটি কাজ রয়েছে। এসব বিষয়গুলোর উপর বিস্তারিত সমীক্ষা পরিচালনা এবং তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা হয়েছে। এই মাস্টারপ্ল্যানটি আগামী ২১ সেপ্টেম্বর সকালে উপস্থাপন করা হবে। চট্টগ্রাম বন্দরের শহীদ মোহাম্মদ ফজলুর রহমান মুন্সী অডিটরিয়ামে বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের সামনে এই মাস্টারপ্ল্যান উপস্থাপিত হবে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহাজাহানসহ বন্দরের শীর্ষ কর্মকর্তা এবং বন্দর ব্যবহারকারীদের সামনে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞরা মাস্টারপ্ল্যান উপস্থাপন করবেন। ইতোমধ্যে বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে সভায় উপস্থিত থাকার জন্য দাওয়াত দেয়া হয়েছে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রণীত খসড়া মাস্টারপ্ল্যানে ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন সুবিধা অসুবিধাগুলো যুক্ত করে চূড়ান্ত মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা হবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক গতকাল সোমবার দৈনিক আজাদীকে বলেছেন, এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার। অত্যন্ত দ্রুততম সময়ের মধ্যে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান খসড়া মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন সম্পন্ন করেছে। আমরা সকলের সাথে আলাপ আলোচনা করে এই মাস্টারপ্ল্যানকে কি করে আরো বেশি ব্যবসাবান্ধব এবং গণমুখী করা যায় তা নিশ্চিত করবো। তিনি বে-টার্মিনাল প্রকল্পের জন্য মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নকে পুরো প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে বড় অগ্রগতি বলেও মন্তব্য করেন।
উল্লেখ্য, হালিশহর উপকূলে গড়ে উঠা একটি চরকে কেন্দ্র করে বে-টার্মিনাল প্রকল্প গড়ে তোলা হচ্ছে। এতে তিনটি টার্মিনাল থাকবে। প্রতিটি টার্মিনালে ৩০০ মিটার লম্বা করে মোট ছয়টি জেটি থাকবে। অর্থাৎ একটি টার্মিনালে ১৮শ’ মিটার লম্বা জেটি এবং পশ্চাদ সুবিধা গড়ে তোলা হবে। প্রতিটি টার্মিনালে একই সাথে ছয়টি জাহাজ বার্থিং দেয়া যাবে। বে-টার্মিনালে ১৪ মিটার ড্রাফটের যে কোনো দৈর্ঘ্যের জাহাজ ভিড়ানো যাবে। এই টার্মিনাল দেশের গভীর সমুদ্রবন্দরের অভাব ঘুচাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
২০২৪ সালে বে-টার্মিনালে জাহাজ ভিড়ানোর আশাবাদ ব্যক্ত করা হলেও ভূমি প্রাপ্তিসহ বেশ কিছু জটিলতায় প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার তালিকাভুক্ত মেগাপ্রকল্পটি বেশ পিছিয়ে রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনারায়ণ রক্ষিতের ব্যাংকে আছে ২০ হাজার টাকা নগদ ৯৫ হাজার
পরবর্তী নিবন্ধব্যাংক ঋণ নেই পেয়ারুল ইসলামের